ইয়া নাবী সালাম আলাইকা,
ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা।
ইয়া হাবিব সালাম আলাইকা,
সালাওয়াতুল্লাহ আলাইকা।
মহান আল্লাহর যত সৃষ্টি আছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মর্যাদামণ্ডিত সৃষ্টি হলেন তাঁর পিয়ারা হাবিব হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মক্কা নগরীতে আগমন করেন। তিনি এসেছেন রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে। এই আগমনে বিশ্বের বুকে উদ্যাপিত হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। তাঁর ওপর নাজিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন। যদিও আগমন তাঁর সব নবীর পরে কিন্তু তাঁর নবুয়াত সবার আগে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার জন্য নবুয়াত কখন থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে? তিনি বললেন, আদম (আ.)-এর শরীর ও প্রাণ যখন ভিন্ন স্থানে ছিল তখনো আমি নবী ছিলাম। (তিরমিজি)। তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে আমরা যতই বলি, যতই লিখি, যতই শুনি, তা কখনই শেষ হবে না, পরিপূর্ণ হবে না। কবি বলেন, ‘খোদা কি আজমত কিয়া হ্যায়, মুহাম্মাদ মুস্তফা জানে মাকামে মুস্তফা কিয়া হ্যায়, মুহাম্মদ কা খোদা জানে।’
অর্থাৎ, ‘মহান আল্লাহর বড়ত্ব-মহত্ত্ব শুধু মুহাম্মদই (সা.) ভালো জানেন।
আর মুহাম্মদ (সা.)-এর শান-মানও আল্লাহতায়ালাই ভালো বোঝেন।’
আমাদের মতো স্বল্প জ্ঞানের মানুষের পক্ষে হিজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত শান-মান বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আর কতটুকুই বা আমরা বলব, তা মূলত মহাসমুদ্রের এক বিন্দু পানির চেয়ে অনেক কমই বলা হবে। তাই তো শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন, ‘বাদ আজ খোদা বুজুর্গ, তুই কিসসা মুখতাসার’। অর্থাৎ ‘হে সরকারে কায়েনাত! আপনার মর্যাদা আর কতটুকুই বলতে পারব, সংক্ষেপে এতটুকুই বললাম, আল্লাহর পরেই আপনার স্থান।’
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘একদিন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! পূর্ব থেকে পশ্চিম, সমগ্র ভূখণ্ড আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু আপনার মতো মর্যাদাসম্পন্ন আর কাউকে পাইনি। আপনার সম্মানে আপনার বংশ হাশিমকে এত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে, হাশিম বংশের পিতার চেয়ে কোনো মর্যাদামণ্ডিত পিতা আমি পৃথিবীর বুকে পাইনি।’ (মাদারিজুন নুবুয়াত)। একদিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) প্রিয় নবী (সা.)-এর শান ও মান বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা অন্যসব নবী (আ.) থেকে হুজুর পাক (সা.)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। একজন প্রশ্ন করলেন, কীভাবে, ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিন। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, অন্যসব নবী (আ.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “আমি কোনো রসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষা ছাড়া প্রেরণ করিনি”।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪)। আর হুজুর (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আপনাকে সব মানুষ ও জাতির জন্যই রসুল করে পাঠিয়েছি।’ (সূরা সাবা : ২৮)।
রসুল (সা.)-এর শান-মান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি বলুন, (দুনিয়ার মানুষ) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমি নবীকে অনুসরণ করে চল। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাগুলো মাফ করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাকারী ও পরম দয়াময়।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে এবং আমাদের জীবনকে সুন্দর করে নিতে চাইলে প্রিয় নবী (সা.)-এর আনুগত্য, অনুসরণ ও ভালোবাসা একান্তই অপরিহার্য। নবী (সা.)-এর আনুগত্য করতে গিয়ে, তাঁর সুন্নাহর পথে চলতে গিয়ে কোনোরকম বেয়াদবি যেন প্রকাশ না হয় সে সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসী বান্দারা! তোমাদের কণ্ঠস্বর যেন আমার হাবিবের পবিত্র কণ্ঠস্বরের ওপরে না ওঠে। তোমরা একে অন্যের সঙ্গে যেভাবে কথা বল, আমার বন্ধুর সঙ্গেও সেভাবে কথা বলো না। যদি এমনটি কর তবে তোমাদের আমলগুলো বরবাদ হয়ে যাবে তোমরা টেরও পাবে না।’ (সূরা হুজুরাত : ২)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনার প্রভুর কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে আপনাকে ন্যায়বিচারক না মানবে।’ (সূরা নিসা : ৬৫)।
রসুল (সা.)-এর শান-মান সম্পর্কে আল্লাহ আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর সালাত পাঠায়। অতএত হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত সালাম পাঠাও।’ (সূরা আহজাব : ৫৫)। সেই নবীর দরুদ বেশি পড়ে তাঁর সুন্নাহ অনুযায়ী আমাদের জীবন সাজাতে হবে। তাঁর নামেই মৃত্যুর পর আমাদের কবরে রাখা হবে। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা মৃত ব্যক্তিদের কবরে রাখবে তখন সবাই বলবে বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রসুলিল্লাহি।’ (মুসনাদে আহমাদ)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবী (সা.)-এর শান-মান জানার-বোঝার-আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুফাসসিরে কোরআন
বেতার-টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক। প্রিন্সিপাল : মনিপুর বাইতুর রওশন মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা।