রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারী আজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি

ফাতিমা পারভীন

নারী আজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় একটু ব্যতিক্রম, ‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’। নারীর জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজ প্রাচীন যুগ থেকে তৈরি করেছে বহু নিয়ম-কানুন। ওইসব শাসন, অনুশাসনসংবলিত প্রথা ভেঙে আজ নারী এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের শিখরে। তার পরও বিশ্বের কাছে এখনো নারী অধিকার আর নারী-পুরুষ সমতার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্লোগানে জানান দিতে হয়। কারণ এখনো অধিকাংশ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে শীর্ষে অবস্থানরত নারী। তার পরও আশার আলো হচ্ছে এই যে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর পদচারণ। তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রের শীর্ষে নারীর রয়েছে অবস্থান। পরিবারেও মেয়েশিশুর কদর বেড়েছে। নির্যাতন, নিষ্পেষণ, পীড়ন-নিপীড়ন প্রায় জিরো টলারেন্সের কাছে। স্বপ্নচারী নারীর অগ্রদূত হয়ে আজ সোনার বাংলার সোনার মেয়ের হাতে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ঝান্ডা। এগিয়েছে দেশ, এগিয়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। মঙ্গার মতো কঠিন দুর্ভিক্ষের আজ মোকাবিলা করতে হয় না। নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনি একজন নারী, একজন দক্ষ সাংগঠনিক রাজনীতিবিদ। সফল রাষ্ট্রনায়ক।  অনেক বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তিনি ছাড়িয়ে আজ এশিয়া মহাদেশের একজন অবিসংবাদিত নেতা। নারীজগতের আলোকবর্তিতা। অনেক পুরুষ রাষ্ট্রনায়ক যা পারেননি তিনি তা পেরেছেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ঠাঁই দিয়ে বিশ্বের কাছে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। হয়েছেন মাদার অব হিউম্যানিটি। সব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে দেখা যায়, নারী আজ বাংলাদেশের বোঝা নয় বরং আশীর্বাদ। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারী শুধু পোশাকশিল্পের শ্রমিক নয়, নারীরা কেউ উদ্যোক্তা, কেউ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, চিত্রশিল্পী, কথাসাহিত্যিক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী ও উচ্চপদেও দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পিছিয়ে পড়া নারীরাও এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। মহিলা অধিদফতরের মাধ্যমে বর্তমান সরকার নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে সংসারে যেমন আয়ের অংশীদারিত্ব বাড়িয়েছে তেমনি অর্থ আয় এবং কর্মব্যস্ততার কারণে ঘরে নারী নির্যাতন জিরো টলারেন্সে পৌঁছেছে।

গ্রামীণ নারীরা কাঁথা সেলাই, বিভিন্ন রকম পোশাক, ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী, মুড়িভাজা, শীতলপাটি, পিঠাসহ নানারকম সংরক্ষণযোগ্য খাবারসামগ্রী পাঁপড়, আচার, পিঠা, মোমবাতি, ফুচকার খোল, খেলনা, বেতের কাজ, চুমকি ও পাথর দিয়ে নানারকম শোপিস ইত্যাদি জিনিস তৈরি করেন। এসব সামগ্রী ঘরে তৈরি করে নারীরা সেগুলো বিক্রি করেন এবং সংসারে সচ্ছলতার অংশীদার হচ্ছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীও মুরগির খামার, মাছ চাষ, ছাগল পালন, গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে হতাশার কথা হলো, নারীরা এসব পণ্য ও অন্য বিষয়াদি ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট বিক্রয় কেন্দ্র পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে তাদের সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন নির্দিষ্টভাবে স্থায়ী একটি শপিং মলের ব্যবস্থা করা। শত বাধা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছেন নারী কোনো না কোনো কর্মে। আশার আলো হচ্ছে, অনেক নারী আজ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তারা খুঁজছেন সুন্দর ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার সুনির্দিষ্ট পথ।

বাল্যবিয়ের কারণে এখনো পিছিয়ে আছে দেশ। পরিবারপতি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লুকিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আমাদের নারীসমাজ সৃষ্টিশীল কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে নারীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে এ উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্তকরণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের বাদ দিয়ে কখনই একটি রাষ্ট্র উন্নতির শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরা এখনো তাকিয়ে থাকে পরিবারের দিকে। তাদের খণ্ডকালীন কাজের ব্যবস্থাকরণ জরুরি। ছাত্রীদের কাজের সুযোগ করে দিলে অসহায়ত্বের স্তর পেরিয়ে আসতে পারবে। সংকীর্ণ মনোভাবের সৃষ্টি হবে না, আবার তাদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশও ঘটবে; অন্যদিকে অর্থ আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বেশ অবদান রাখতে পারবেন তারা।

নানামুখী উদ্যোগ, কর্মসূচি, প্রণোদনার মাধ্যমে নারীকে উত্তরোত্তর আরও সাফল্যের লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। প্রয়োজন স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা। শুধুই আর্থিক অবদান নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শিল্প-সাহিত্যেও নারীর অবস্থান প্রশংসনীয়। এসব অবদানের মূল্যায়ন করাটাও জরুরি। পিছিয়ে পড়া নারীরা এগিয়ে আসুক সামনে, তারা মানসিকভাবে শক্ত হয়ে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকুক আলোর ভুবনে।

সব কাজে তাদের স্বীকৃতি হোক। রাষ্ট্রে শিক্ষিত নারীর মূল্যায়ন হোক বিভিন্ন ক্ষেত্রে। অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর হাত হোক পুরুষের পাশাপাশি সোনার বাংলার মূল চাবিকাঠি আর পরিবারে প্রতিটি মেয়েশিশু হোক আশীর্বাদ- সেই প্রত্যাশা রইল।

লেখক : নারী ও শিশু অধিকার কর্মী।

সর্বশেষ খবর