মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমা করুন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমা করুন

হজরত ওমর (রা.) প্রায়ই একটি কথা বলতেন আর কাঁদতেন। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ যদি আমাকে মানুষ না বানিয়ে ভেড়া-বকরি বানাতেন, তাহলে কতই না ভালো হতো। আল্লাহর বান্দারা আমার গোশত খেয়ে আল্লাহর ইবাদত করত। হায়! মানুষ হওয়ার কারণে কত দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে। সব দায়িত্ব তো ঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কিয়ামতের দিন কী জবাব দেব। আল্লাহ যদি আমাকে বলতেন, হে ওমর! তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি, দুনিয়ার মানুষ বিশ্বাস কর! এর চেয়ে বড় পাওয়া এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কোনো কিছু আমার জন্য হতে পারে না।’

আল্লাহর এক মস্ত বড় অলি ভক্ত-মুরিদদের নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় একজন ভক্ত জিজ্ঞাসা করল, ‘হুজুর! আপনি তো কামিল মানুষ। আপনি অবশ্যই জান্নাতে যাবেন।’ ভক্তের এমন কথা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলেন আল্লাহর অলি। তিনি বললেন, ‘জান্নাত তো দূরের কথা, আল্লাহ যদি দয়া করে রহম করে জান্নাতিদের পায়ের পাপোশও আমাকে বানিয়ে দেন, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হবে? জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে তো বাঁচতে পারব।’ ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লেখেন, ‘একদিন আল্লাহর নবী (সা.) জিবরাইল ফেরেশতাকে বললেন, হে জিবরাইল! তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে মিকাইল ফেরেশতাকেও দেখি। যতবার তাকে দেখেছি, ততবারই গম্ভীর মুখে ছিল সে। কখনো হাসতে দেখিনি তাকে। এর কারণ কী? জিবরাইল ফেরেশতা বলেন, আল্লাহর নবী! ফেরেশতাদের মধ্যে মিকাইল ছিল সবচেয়ে হাশিখুশি ফেরেশতা। মুখে হাসি লেগেই থাকত তার। কিন্তু যেদিন জাহান্নাম বানানো শেষ হলো, আর আমরা সবাই জাহান্নাম ঘুরে দেখলাম, সেদিন থেকে মিকাইলকে আর হাসতে দেখা যায়নি। সে বলে, না জানি এ জাহান্নামে আমাকেই ফেলা হয়। এত আজাব সহ্য করার ক্ষমতা মিকাইলের নেই। এ কথা বলেই জিবরাইল খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, শুধু মিকাইল কেন ফেরেশতাদের সর্দার জিবরাইলেরও এক মুহূর্ত জাহান্নামের আজাব সহ্য করার শক্তি নেই। আপনি অবশ্যই আপনার উম্মতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে কবরে যেতে বলবেন।’ দাকায়েকুল আখবার।

আরেকদিনের ঘটনা। আয়শা সিদ্দিকা (রা.)-কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আয়শা! আল্লাহর দয়া না হলে কেউই জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচতে পারবে না। আয়শা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিও নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আয়শা! আল্লাহর দয়া না হলে আমিও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব না। তবে আমার প্রভু আমাকে ওয়াদা করেছেন, তিনি আমাকে দয়া করবেন।’ পাঠক! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় আপনি অনেক কিছু হয়েছেন। টাকা-পয়সা, ক্ষমতায় আপনার কোনো তুলনা নেই। কিন্তু মৃত্যুর পর আপনার টাকা-ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবে না। যদি নাজাত নামের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন, তাহলেই অনন্ত জীবনে অনাবিল সুখের ঠিকানা লাভ করতে পারবেন। হে আমার ভাইবোনেরা! দুনিয়ায় যেমন সার্টিফিকেট-অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে ভালো চাকরি পেতে হয়, তেমনি আখেরাতেও সুখের ঠিকানা জান্নাত পেতে হলে নাজাত নামের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এক জীবন কেঁদে-কেটে আল্লাহর প্রিয় হয়ে নাজাতের সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। একবার যদি নাজাতপ্রাপ্তদের তালিকায় আপনার নাম উঠে যায়, ব্যস! আপনি সফল। শুধু সফল নন, কোরআনের ভাষায়, ফাউজুন আজিম-  চমৎকার সফল।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর