বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু

শোককে শক্তি বানানোর শপথ নিতে হবে

বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে শোক ও কলঙ্কিত দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেষ শ্রাবণের কালরাতে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শত্রুদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের হাতে প্রাণ হারান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার মহানায়কের শাহাদাতবরণের দিন যেমন শোকের তেমন শোককে শক্তিতে পরিণত করার সময়ও বটে। ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানি হানাদারদের ভাড়াটে চররা জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাঙালি জাতির আত্মাকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। মুয়াবিয়াপুত্র এজিদের হাতে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও মীর জাফরের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মতো ১৫ আগস্টও ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনার মাধ্যমে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি জাতির ঘাড়ে চেপে বসে। ইতিহাসের চাকা পিছনে ঘোরানোর চেষ্টাও চলে। স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে এদেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের যে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়, তার পরিণতিতে জাতীয় রাজনীতিতে বারবার বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভেদ নীতিকে কবর দিয়েছিল। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলে ১৫ আগস্টের পর থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে তারা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। বাংলাদেশের মানুষ সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয় দেশবাসীর প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং খুনিদের পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে আইনি পথে দেশে এনে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে তার আদর্শ মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা চালিয়েছিল

খুনি চক্রের সদস্যরা তা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার অপরাজেয় আদর্শ টিকে আছে প্রতিটি বাঙালিহৃদয়ে। তার অমরাত্মার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও অভিবাদন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর