রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডিএমপির কল্যাণ ও সামাজিক কর্মকান্ড

মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম

ডিএমপির কল্যাণ ও সামাজিক কর্মকান্ড

আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত সর্বস্তরের সদস্যের জন্য নানামুখী কল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সদস্যদের কল্যাণে সমধিক গুরুত্ব প্রদানপূর্বক ওয়ানস্টপ পেনশন সার্ভিস সেলের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন সুবিধা প্রদান, নিহত পুলিশ সদস্যদের লাশ ডিএমপিতে নবসংযোজিত ফ্রিজার ভ্যানের মাধ্যমে নিজ ঠিকানায় প্রেরণ, গুরুতর আহত এবং আহত পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মানসম্মত হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে। পুলিশ শপিং মলের উন্নয়ন, বিশুদ্ধ দুধ সরবরাহের জন্য মেট্রো ডেইরি এবং বেকারিসামগ্রী সরবরাহের জন্য মেট্রো বেকার্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হলে কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। সামাজিক কর্মকান্ড : জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তাবিধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা ছিল আমাদের জনকল্যাণমূলক ভাবনার একটি ফসল। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, ব্লাড ব্যাংক থেকে সহায়তা, এতিম ও দুস্থদের সঙ্গে ইফতার আয়োজন, দুস্থদের আর্থিক সহায়তা, বৃক্ষরোপণসহ নানাবিধ সামাজিক উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন : ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্তধর্মীয় সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ। বিভিন্ন ধর্মের নেতার সরাসরি অংশগ্রহণে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। ঢাকা মহানগরী এলাকায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচি নির্বিঘ্নে ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হয় আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দিকনির্দেশনার ফলে।

ডিএমপি শিক্ষাবৃত্তি প্রদান : একটি আধুনিক ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বিনির্মাণে টেকসই গণতন্ত্র ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কোনো বিকল্প নেই। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত, নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিকভাবে চলমান রাখার জন্য ২০১৭ সালে মেধা, উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষাসহায়ক ‘ডিএমপি শিক্ষাবৃত্তি’ প্রচলন করেছি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ডিএমপি, ঢাকায় কর্মরত সব পুলিশ/সিভিল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের মধ্য থেকে মনোনীত ৮৫০ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৫ লাখ টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ৯৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৪ লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ কার্যক্রমকে অব্যাহত এবং টেকসই করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্বের চরম উৎকর্ষতা : পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পেশাদারিত্বের চরম উৎকর্ষতা সাধনের লক্ষ্যে সর্বদা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ২০১৮ সালে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা ও নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তিনজন সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন, ৪৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের কর্মকান্ডের সঙ্গে মিশে আছে নিরবচ্ছিন্ন দেশপ্রেম এবং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

আমার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও গতিশীল নেতৃত্বে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে একটি টিমে রূপান্তরের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটানো হয়েছে। এর পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনমানসে স্বস্তির পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে বিদেশিদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছি। সীমিত জনবল, যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও লজিস্টিকস সত্ত্বেও শান্তি ও শপথে বলিয়ান হয়ে নগরবাসীকে নিরাপদে ও শান্তিতে রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতায় ভাস্বর। থানা পর্যায়ে সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে থানা ব্যবস্থাপনা তদারকি নিবিড় করা হয়েছে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সফলতম ও ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। নাগরিক জীবনকে সংঘাতহীন, নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৪ হাজারের বেশি সদস্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন ও উদ্ঘাটনে বদ্ধপরিকর। সম্মানিত নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় এবং নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। এই শহরের নিশ্ছিদ্র আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাই ছিল গত চার বছরের প্রাত্যহিক প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সর্বস্তরের সদস্যকে নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম ও পরিশ্রম করার চেষ্টা করেছি। জননিরাপত্তাবিধানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযাত্রায় পৃষ্ঠপোষকতা এবং সময়োপযোগী সুপরামর্শ, নির্দেশনা ও প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সীমিত জনবল, যানবাহন, লজিস্টিকস সত্ত্বেও নগরবাসীকে নিরাপদে রাখার এ উদ্যোগে সব পুলিশ সদস্য ও নগরবাসীর সহযোগিতার জন্য আমি কতৃজ্ঞ।

লেখক : পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর