বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রপ্তানি বহুমুখীকরণ

টেকসই অর্থনীতির জন্য জরুরি

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় গত দেড় দশকে বেড়েছে স্পুটনিক গতিতে। তবে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে এক বা সীমিত কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বাংলাদেশ আজও নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি। স্বাধীনতার আগে এবং পরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল পাট ও পাটজাত পণ্যনির্ভর। কৃত্রিম তন্তুর উদ্ভব পাটের বাজারে ধস নামায় এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। বর্তমানে পাটের বদলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দেশের রপ্তানি আয় দৃশ্যত সন্তোষজনক হলেও এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা ঝুঁকি সৃষ্টিও করছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি বলে পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এটি করা সম্ভব হলে একদিকে এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে মোট রপ্তানি আয় বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। আইএফসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৬০০ ধরনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে তৈরি পোশাকের ২৯২ ধরনের পণ্য থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ আসে। বাকি ১ হাজার ৩ শতাধিক পণ্য থেকে আসে মাত্র ১৫ শতাংশ। কিন্তু এই ১ হাজার ৩ শতাধিক পণ্যের মধ্যে প্রচুর পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বাজার অনেক বড় এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও ওষুধের বাজার বড় হচ্ছে। এসব খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ফলে সরকারের যথাযথ নীতিসহায়তা পেলে এসব খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই বছরে ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই সময়ে ২০ লাখের বেশি মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে আটকে আছে; যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ পণ্যের ওপর নির্ভরতা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এ ঝুঁকি ঠেকাতে পণ্য বহুমুখীকরণে এখন থেকেই নজর দিতে হবে; যার কোনো বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর