শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যাংক লুটেরাদের তালিকা

ওদের ফেরত আনার উদ্যোগ নিন

দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক শতাধিক লুটেরাকে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা বানিয়েছে। এসব লুটেরা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। সেখানে তারা যাপন করছেন বিলাসী-জীবন। অথচ ঋণের টাকা অনাদায়ী থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এসব ঋণকে মন্দ ঋণ ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি এদের কারণে একটি ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হয়েছে। অখ্যাত এক ব্যবসায়ী একাই কয়েকটি ব্যাংক ও ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে কানাডায় পলাতক-জীবন যাপন করছে। ইসা বাদশা ও মুসা বাদশা নামে দুই ভাই আটটি ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন একই দেশে। শুধু তাই নয়, অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাংক থেকেও বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়ে সেই টাকা মেরে দিয়ে নিরাপদে দেশও ছেড়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, যার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক। পরে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে এখন অস্ট্রেলিয়ায় বিলাসী-জীবন যাপন করছেন। ব্যাংক জালিয়াতির মহারথী হিসেবে পরিচিত বিসমিল্লাহ গ্রুপ ব্যাংকের টাকা মেরে নিয়ে যায় দুবাইতে। এমন আরও অনেকে ব্যাংকের টাকা মেরে ব্যাংকক, দুবাই, অস্ট্রেলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যাংকে মজুদ অর্থের উৎস দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু একশ্রেণির প্রতারক ব্যাংক ঋণ নিয়ে লোপাট করার যে ‘কৃতিত্ব’ দেখিয়েছেন তা আরব্য উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র ‘থিফ অব বাগদাদ’ বা বাগদাদের চোরদেরও হার মানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক লুটেরাদের তালিকা তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে লুটেরাদের চিহ্নিত করা কিংবা তালিকা তৈরি করে ক্ষান্ত দিলে চলবে না, তাদের দেশে ফেরত এনে লুণ্ঠিত অর্থ আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণের জন্য মায়াকান্না করলেও এসব দেশ থেকে যারা অর্থ পাচার করে তাদের দেশে ঠাঁই নেয়, তাদের ব্যাপারে খুবই উদার। এই ভন্ডামির অবসানে সরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে অপরাধীদের ফেরত আনার ব্যাপারে দেনদরবার করতে হবে।

সর্বশেষ খবর