বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোঁদড়

ভোঁদড়

ভোঁদড় আধাজলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের শরীর লম্বাটে, লেজ পুরু, লিপ্তপদী। সাঁতারের সময় কান ও নাকের ফুটো বন্ধ থাকে। নাকের আগার গোঁফ লম্বা ও সংবেদনশীল বিধায় পানির নিচে শিকার সন্ধানের সহায়ক। এই গোত্রে আরও আছে ব্যাজার, নেউল বা বেজি। বাংলাদেশে ভোঁদড়ের তিনটি ও ব্যাজারের একটি প্রজাতি আছে।

ভোঁদড় একবারও না ভেসে পানির নিচে নাগাড়ে আধ কিলোমিটার যেতে পারে। মাছ, পানির ব্যাঙ, কাঁকড়া ও অন্যান্য বড় আকারের জলজ অমেরুদ-ীই এদের প্রধান খাদ্য, যাদের এরা কখনো কখনো দলবদ্ধভাবে শিকার করে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সামুদ্রিক ভোঁদড় হলো হাতিয়ার ব্যবহারক্ষম দুর্লভ স্তন্যপায়ীর অন্যতম, যারা সামনের পা দিয়ে পাথর টেনে তুলে মজবুত পেষণদন্তে সেগুলো টুকরো করে তার ওপর শামুক-ঝিনুকের শক্ত খোল রেখে ভেঙে থাকে। পাথরগুলো তারা ভাসমান অবস্থায় বুকের ওপর রাখে ও কামারের নোহাইর মতো ব্যবহার করে। এরা সমাজবদ্ধ প্রাণী ও ক্রীড়াশীল; একত্রে দৌড়াদৌড়ি করে, কাদার ঢাল বেয়ে নামে, মনে হয় সবই নেহাত আনন্দের জন্য। কোনো কোনো প্রজাতির ভোঁদড় পানিতে পাথর ছুড়ে সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে পড়ে সেগুলো তুলে আনে সম্ভবত খেলাচ্ছলেই। এরা বুদ্ধিমান, অনুসন্ধিৎসু ও বন্ধুবৎসল, সহজেই পোষ মানে। সুন্দরবন ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোয় কেউ কেউ পোষা ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করে। বাংলাদেশের তিন প্রজাতির ভোঁদড়ের মধ্যে একটি অতি বিপন্ন, অর্থাৎ বিলুপ্তির মুখোমুখি; বাকি দুটিও বিপন্ন। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকার নদী, খাল, বিল, পুকুরের পাশ, প্লাবনভূমি ও খানাখন্দ এবং উপকূলীয় জেলায় এদের দেখা যায়। আবাসভূমি ধ্বংস ও পরিবর্তনই বিপন্নতার মূল কারণ। বাংলাদেশ ছাড়াও এরা আছে দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায়।

মাছ শিকারের জন্য সাধারণত রাতের বেলা গোটা পরিবার একত্র হয়। মাছই প্রধান খাদ্য, তবে কাঁকড়া, চিংড়ি, ব্যাঙ, ইঁদুর, জলচর পাখি, কখনো উদ্ভিজ্জ খাবারও খায়। গর্ভকাল দুই মাস, জলাশয়ের কিনারের গর্তে দু-তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। থাকে বনাঞ্চল, নদী, খাল ও বিলে, উপকূলীয় জেলাগুলোর  হ্রদ ও পুকুরে। আবাসস্থলের ধ্বংস ও পরিবর্তনের জন্যই প্রধানত বিপন্ন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর