বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীদের রমজান প্রস্তুতি

যুবায়ের আহমাদ

ব্যবসায়ীদের রমজান প্রস্তুতি

মাহে রমজান সমাগত।

 ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বেড়ে যায় বলে রমজানকে বরণ করে নিতে পৃথিবীর অন্য দেশের মুসলমানের মতো বাংলাদেশি মুসলমানদের হৃদয়েও রয়েছে আগ্রহ ও উদ্দীপনা। তবে এর পাশাপাশি রয়েছে আতঙ্কও। বৈশ্বিক মহামারী করোনার আতঙ্ক যেমন আছে জনমনে তেমনি আছে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আতঙ্ক। কারণ আরব দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত রমজানের সম্মানে পণ্যের দাম কমানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া চাহিদা পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে বেশি ‘লাভ’ করতে রীতিমতো হিংস্র হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি। তাদের লুটেরা মনোভাবের ফলে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না থাকলেও বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইবাদতের মাসকে পরিণত করে ‘মুনাফার’ উৎসবে। চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল, খেজুর ইত্যাদির দাম হয় গগনচুম্বী। আর অনেক ধরনের কাঁচা জিনিস সতেজ রাখার জন্য ব্যবহার করে মারাত্মক বিষাক্ত কেমিক্যাল।

ব্যবসা-বাণিজ্য, কেনাবেচা শুধু বৈষয়িক মুনাফালাভের সুযোগই নয়; বরং তা মহান ইবাদতেরও পর্যায়ভুক্ত হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু সততা না থাকলে তা ইবাদত তো হবেই না, থাকবে না ব্যবসা গন্ডির মধ্যেও; পরিণত হবে প্রতারণায়। যারা বেশি লাভের আশায় মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে ইসলাম তাদের রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দিকে আঙুল তুলেছেন বারবার। মজুদদারদের প্রতি আল্লাহতায়ালাও ক্ষুব্ধ হন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল, আল্লাহও নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে।’ মুসনাদে আহমাদ। মজুদদারির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার ওপর গজব ও দারিদ্র্য অবধারিত হবে। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট তৈরি করে আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেবেন।’ ইবনে মাজাহ। পক্ষান্তরে যারা মজুদদারি না করে স্বাভাবিকভাবে মুনাফা অর্জন করতে চায় আল্লাহ তাদের ব্যবসায় বরকতের দরজা খুলে দেন। তাকে অপ্রত্যাশিত রিজিক প্রদান করেন। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অবাধ ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদকারী অভিশপ্ত হয়।’ ইবনে মাজাহ।

অনেকে মনে করেন মজুদদারি, মুনাফাখোরি কিংবা হারামভাবে সম্পদ উপার্জন করলেও সমস্যা নেই, দান-সদকা তো করছি! এ ধারণা নিতান্তই ভুল। হারাম খেয়ে ইবাদত করলে সে ইবাদত কবুল হবে না। হারাম সম্পদ থেকে দান করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর তা দান করবে সে এ দানের জন্য কোনো প্রতিদান পাবে না বরং তাকে পাপ ভোগ করতে হবে।’ ইবনে হিব্বান। এমনকি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে উপার্জিত সম্পদের পুরোটাও যদি দান করে দেয় তবু তার গুনাহ মাফ হবে না।

লেখক : খতিব

বাইতুশ শফিক মসজিদ।

সর্বশেষ খবর