রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সময় উড়ন্ত বলাকার পাখা

হোসেন আবদুল মান্নান

২১ অক্টোবর ২০১২। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রামে যোগদান করি। আগের দিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সড়কপথে কুমিল্লা-ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এসে অবস্থান নিই। চট্টগ্রাম কালেক্টরেটের তরুণ সহকারী কমিশনার আসিফ আমার সফরসঙ্গী ছিল। পথিমধ্যে চৌদ্দগ্রাম সীমান্তে ‘হাইওয়ে ইন’ নামের রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতি ও হালকা খাবার গ্রহণ করি। তবে সূর্যাস্তের একটু আগেই বন্দরনগরে পৌঁছে যাই। তখন গোধূলির আকাশ থেকে আলোমাখা আভা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে। দিনাবসানের প্রান্তে এসে সূর্যালোকের প্রতি সকৃতজ্ঞ প্রণতি জানাচ্ছিল সার্কিট হাউসের উন্মুখ বৃক্ষগুলোর শাখা-প্রশাখা। বোধকরি আমার আগমনকে সুস্বাগত জানিয়ে জেলা প্রশাসনও কিছুটা সাজ-সাজ আয়োজন করে রেখেছিল। সেদিনের কোলাহল মুখরিত প্রসন্ন রাতের শেষে এক নতুন প্রভাত হলো। পরদিন যথারীতি বেলা ১১টার মধ্যেই পরীর পাহাড় খ্যাত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছি। পূর্বাধিকারী (predecessor) জনাব জয়নুল বারীর কাছ থেকে চার্জ গ্রহণ পর্ব সমাপ্তির পর কালবিলম্ব না করে এডিসি হুমায়ুন কবিরকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি পটিয়া, বোয়ালখালীসহ বৌদ্ধ মন্দিরসমূহ সরেজমিন পরিদর্শনে। তখন কক্সবাজারের রামুসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আকস্মিক তান্ডবের শিকার হয়ে বিপুলসংখ্যক প্রাচীন ঐতিহ্য ধারণকারী মন্দির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

২. চট্টগ্রামের চাকরিকালে বিশেষ করে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার দুই দফায় দুই পর্বেই আমাকে অসংখ্য ট্র্যাজিক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। চাকরির চতুর্থ দিনে ২৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রামের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক ও সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ার। উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিখ্যাত জমিয়তুল ফালাহ মাঠে তাঁর জানাজায় শত শত স্থানীয় ভক্ত-অনুরাগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন অতিথির সঙ্গে নবাগত আমিও অংশ নিই। জানাজা শেষে একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে পাশের একটি নার্সারি মালিকের একচালা কক্ষে বসে পরিচয় হয় তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে। এটি আমার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ ও কথোপকথন। সেদিনের অতি সীমিত পরিসরে আলাপ করেও আমার আনন্দ এবং তৃপ্তির বুকভরা উচ্ছলতা অনুভূত হয়েছিল। এবং অনেকের সঙ্গে মতানৈক্য বেঁধে দুঃসময়েও চট্টগ্রামের দলীয় রাজনীতিতে সদ্যপ্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের প্রচ্ছন্ন অবদান নিয়ে তিনি অকপটে প্রশংসাবাক্য উচ্চারণ করেছিলেন।

৩. চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। ৪ নভেম্বর ২০১২ সালে ৬৭ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনাবসান হয়। ৭ নভেম্বর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও আনোয়ারায় পাঁচটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদের কমপক্ষে ছয়জন মন্ত্রী জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রামে আমার চাকরি তখন ১৭ দিন পূর্ণ হয়। অনেকের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মরহুমের গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা পর্যন্ত গিয়েছেন। গোটা এলাকা লোকারণ্যে পরিণত হয়। আনোয়ারার জানাজার আগমুহূর্তে লাশের চারপাশ ঘিরে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সশব্দে কলমা পাঠের সে দৃশ্যটি আজও কিছুতেই আমি আমার অন্তর্দৃষ্টির সীমানার বাইরে নিতে পারিনি। জানাজা শেষে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কিছু সময় অবস্থানের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে নিয়ে নৌবাহিনীর বোটে কর্ণফুলী পার হয়ে এসে এদের বোট ক্লাবের দোতলার জানালা ধরে বসি। বসার এমন স্থানটি সৈয়দ আশরাফ নিজেই পছন্দ করেন। তিনি বলেছিলেন, এখান থেকে লন্ডনের টেমস নদীর ফ্লেভার পাওয়া যায়। বেলা ৩টা থেকে দীর্ঘ সময় টানা গল্প চলে। মানুষ হিসেবে তিনিও আড্ডাপ্রিয় ছিলেন। মন্ত্রী মহোদয়কে সঙ্গ দিতে সেদিন আমার সঙ্গে একজন নেভাল কমান্ডার ও চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জনাব মারুফুল ইসলামও ছিলেন। ফ্লাইট সময় সন্ধ্যার পরে হওয়ায় অফুরন্ত অলস সময়ের ডানায় ভর করে বিচিত্র ভাবনার চতুর্পক্ষীয় আলোচনা চলেছিল। একপর্যায়ে কাস্টমস কমিশনার বিদায় নিয়ে গেলে আমাদের কিশোরগঞ্জ পর্বই তখন সবচেয়ে প্রাধান্য পায়। এলাকায় যাওয়া না যাওয়া, সাধারণকে সময় দেওয়া না দেওয়া, নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন করা না করা ইত্যাদি প্রসঙ্গ স্থান করে নেয়। সেদিনের অনির্ধারিত বোট ক্লাব কথোপকথনে তিনি বলেছিলেন, ‘শুনুন! আপনি আমাকে যা বলেছেন এসবের সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ এবং অস্পষ্ট। মানুষ দেখে ক্ষমতায় থাকাকালে আপনার দ্বারা প্রতিপক্ষ কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানির শিকার হয়েছে কি না। রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের মূল্যায়ন বড় বিচিত্র। দেখবেন শেষ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের মানুষ আমাকেই কাছে টেনে নেবে।’ কী বিস্ময়কর! ভবিষ্যতে আমরা তাঁর এমন ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যতিক্রম কিছু দেখিনি। পরবর্তী নির্বাচন এবং তাঁর অকালমৃত্যুতে মানুষের বাঁধভাঙা অনুভূতির বহিঃপ্রকাশই প্রমাণ। একই সঙ্গে সেদিন বিশ্বরাজনীতির নানা কলাকৌশল, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসের খুঁটিনাটি দিক, অতীত, বর্তমান সবই তাঁর মৃদুস্বর-প্রভাষণে যৌক্তিকতার দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয়ে উঠেছিল। পক্ষান্তরে আমার স্থূল বোধ-ভাবনা, চিন্তাধারা, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জগৎ বিশ্লেষণ সবকিছু যেন আচমকা হোঁচট খেয়ে থুবড়ে পড়ে যায়।

৪. শনিবারের শনির দশা। ২৫ নভেম্বর ২০১২ সাল। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে রাতে। চট্টগ্রামে আমার চাকরি ৩৪ দিন। ডিসি হিলের ঐতিহাসিক বাংলোয় বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ সেলফোনটা বেজে উঠল। পরিচিত নম্বর হওয়ায় অনেকটা আয়েশ করে ধরলাম। চট্টগ্রামের জনৈক ব্যবসায়ী বন্ধুবর রীজু বললেন, ‘আপনি কোথায় আছেন? জলদি টিভি খুলুন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ধসে পড়ে অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে।’ আমার চোখের সামনেই টেলিভিশন, কিন্তু বন্ধ ছিল। স্ক্রলে ভেসে আসা নিউজ দেখে চমকে উঠি আমি। এবারও এডিসি হুমায়ুন কবিরকে সঙ্গী করে তৎক্ষণাৎ ছুটে যাই মহানগরের বহদ্দারহাটে। সঙ্গে অভিজ্ঞ গানম্যান কামাল আর গাড়িচালক মামুন। ফ্লাইওভারের কাছাকাছি পৌঁছতেই কানে ভেসে আসছে হাজার হাজার উত্তেজিত মানুষের সেøাগানমুখর প্রতিবাদী ধ্বনি। ভাঙচুরের শব্দ, আর্তচিৎকারের প্রতিধ্বনি, আহাজারি ইত্যাদি। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিই। জেলা প্রশাসকের গাড়ি বুঝতে পেরে দুই পাশ থেকে শিলাবৃষ্টির মতো ইট-পাথর পড়ছে আমার ওপর। তখন গাড়ি ফেলে যে-যার মতো করে সামনে এগিয়ে গিয়ে জনতার ভিড়ে মিশে যাই। গানম্যানের পোশাক (uniform) থাকায় তাকে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে বলি। আমি ও এডিসি দুজনই মাঝারি অবয়বের মানুষ, রাতের আলো-আঁধার তা ছাড়া সাধারণ পোশাক পরা (casual dress) হেতু কারও চেনার উপায় নেই কোথাকার কে বা কারা। কম্পিত পদে হেঁটে হেঁটে ধসে পড়া গার্ডার পর্যন্ত পৌঁছে যাই। অন্ধকারে ভিতর থেকে অস্পষ্ট কান্নার শব্দ, বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার, রক্তের দাগ, অচেনা স্বজনের গগনবিদারী আর্তনাদ, অর্ধেক শরীর শত টন ওজনের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে আছে। কী অসহায় করুণ দৃষ্টি তাদের। অনেকেই কিছুক্ষণের মধ্যে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে চলেছে। বাকরুদ্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি। দ্রুত একপাশে চলে গিয়ে একটি হার্ডওয়ারের দোকানে ঢুকে পড়ি। মালিক ভীতসন্ত্রস্ত জড়সড়ো হয়ে আছেন। একটু আগেই তারা লুটপাট ও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। তবে আমার সঙ্গে গানম্যান দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচলেন বেচারা। বাইরে হাজারো মানুষের কোলাহল কলরবে কিছু শোনা যাচ্ছিল না। দোকানের পেছনে ছোট্ট একটু জায়গায় প্রবেশ করে আমি প্রথম কল করি চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বিরকে। বললাম, এখন সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়া এ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা অসম্ভব। মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে কিছুতেই এগোতে পারছে না। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন; তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমার লিখিত আদেশ চাইলেন। আমি চাহিদাপত্র সেনানিবাসে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আলোচনা শেষ করি। দ্বিতীয় কল করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীনকে। জয়নাল আবেদীন চট্টগ্রামের এক অনন্যসাধারণ কৃতীসন্তান। জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম হিসেবে তাঁর সঙ্গে এটা আমার প্রথম পরিচয়ও ছিল। তিনি বললেন, আমরা সব টিভিতে লাইভ দেখছি। আপনার গাড়িতে ইটপাটকেল পড়ছে নিজে নিরাপদে থাকুন। শিগগিরই ব্যবস্থা হচ্ছে। একটু অপেক্ষা করুন। রাত ১১টার ভিতর চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে শতাধিক সেনা সদস্য প্রয়োজনীয় অফিসারসহ ঘটনাস্থলে মোতায়েন হয়ে যায়। এদের বিকট সাইরেনসমেত আগমন বার্তাতেই সর্বদলীয় উচ্ছৃঙ্খলতা মুহূর্তে প্রশমিত হয়ে যায়। এলাকাজুড়ে সেনাবাহিনীর একক বিচরণ শুরু হয়। রাতেই ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন। সে রাতে পাঁচটি মৃতদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তখনো অনেক পথচারী ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সচক্ষে দীর্ঘ সময় এমন কষ্ট আর বীভৎস বেদনাতুর দৃশ্য অবলোকন করে রাত ৩টার দিকে বাংলোয় ফিরে আসি। সে রাতের অবশিষ্টাংশে আমি কেবল নির্ঘুম দুশ্চিন্তায় বিদীর্ণ হই।

৫. পরদিন সকালের মধ্যেই চলে যাই ফ্লাইওভার এলাকায়। গত রাত থেকে যারা মৃত্যুপথযাত্রী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত ছিলেন প্রথমে তাদের কাছে গিয়ে উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। পুরো তৎপরতা চালান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ১৭ জন সদস্য। তারা ভাইব্রেটিং ড্রিল মেশিন, গ্যাস কাটার যন্ত্র দিয়ে ধসে পড়া তিনটি গার্ডারই টুকরো টুকরো করার চেষ্টা চালান। একে একে বের হয়ে আসে আরও কয়েকটি লাশ। হঠাৎ নজরে পড়ে এক যুবক চিৎপটাং শুয়ে কাতরাচ্ছে আর করুণ চোখে বলছে ‘আমার পা কাটলেও বাঁচব স্যার। তাড়াতাড়ি কেটে বাঁচান আমারে’। সিভিল সার্জন জনাব তৈয়ব বললেন, তার আত্মীয়স্বজন দরকার, এখানে তো ওটি নেই, কাটার সময় সে মরেও যেতে পারে। তখন মৃত্যুর দায় কে নেবে? ফেনী জেলার এক শ্রমিক সে। এ সময় কোথায় কাকে পাবে? আমি বললাম, জেলা প্রশাসক হিসেবে সব দায়িত্ব আমার কাঁধে তুলে নিলাম। আপনি কাটার ব্যবস্থা নিন। যথারীতি তার হাঁটুর সামান্য ওপরে কাটা হলো এবং তৎক্ষণাৎ চমেক হাসপাতালে পাঠানো হলো। দ্বিতীয় দিনও সাতজনের মৃত্যু হয়। আহতরা তখনো বিশেষ চিকিৎসার আওতায় ভালো আছেন। আমার যত দূর নোট ছিল, সব মিলিয়ে এ অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনায় ১৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। এবং স্পটে প্রায় ১০ দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিহত ও আহতদের জন্য আর্থিক অনুদানের একটা বড় অঙ্কের অর্থ চলে আসে। আমরা কালবিলম্ব না করে যথাযথ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

৬. চমেক হাসপাতালে গিয়ে অর্থ তুলে দেওয়ার দিন একজন যুবক তার একটি হাত ক্র্যাচে রেখে এক পায়ে লাফিয়ে কাছে এগিয়ে এসে নত হয়ে আমাকে সালাম করতে চাচ্ছে। আমি অবাক, বিস্মিত! এ কী করতে চায় সে? যুবক বলল, ‘আমার জীবনটা তো আপনি বাঁচাইছেন স্যার। সেদিন না কাটলে বিকালেই আমি মারা যাইতাম।’ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম এ সেই যুবক। যার অভিভাবকত্ব আমি নিজেই নিয়েছিলাম। আমার হাত থেকে অনুদানের টাকার প্যাকেটটি গ্রহণ করার মুহূর্তে তার দুই চোখ ভরে আনন্দ অশ্রুতে যে হাসির ঝিলিক আমি দেখেছিলাম, মানুষের পৃথিবীতে এর কোনো তুলনা হবে?

                লেখক : গবেষক ও গল্পকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর