রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাল্যবিয়ে

প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না

সাম্প্রতিক সময়ে বাল্যবিয়ে বেড়েই চলেছে। অবশ্য কভিড-পরবর্তী সময়ে এ প্রবণতা যে বাড়বে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বাল্যবিয়ে রোধে ২০১৭ সালে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী কোনো মেয়ে ১৮ বছরের আগে এবং ছেলে ২১ বছরের আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে বিবাহসংশ্লিষ্টদের জেল-জরিমানা করা হবে। বাল্যবিয়ে নামের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার কাজটি যে খুব কঠিন তা বলাই বাহুল্য। সমাজের অত্যন্ত গভীরে বাসা বেঁধে আছে এ ব্যাধি। তা ছাড়া আইনকানুন ও প্রশাসনিক দুর্বলতাও অনস্বীকার্য। পারিবারিক বাধা পর্বতপ্রমাণ। বস্তুত বাল্যবিয়ের মূল কারণ নিহিত রয়েছে সামাজিক পরিবেশের বাস্তবতায়। বখাটেদের ভয়ে কৈশোর পেরোনোর আগেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয় গরিব ঘরের মা-বাবার মধ্যে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার একটি স্কুলের ৬০ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। চরাঞ্চলের হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চবিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থীরা আর স্কুলে আসছে না। বাল্যবিয়ের কারণে এ অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে গেছে। এ ছাড়া প্রায় ৩০ ছাত্র দারিদ্র্যের কারণে বিভিন্ন জায়গায় কাজ নিয়েছে। এলাকাটিতে বাল্যবিয়ের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল। বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী এ দেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগেই। আর ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। এর কারণ দরিদ্র পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট ও কিশোরীর নিরাপত্তাহীনতা। করোনা পরিস্থিতিতে নতুন নতুন অসংখ্য সমস্যার মধ্যে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে প্রশাসনের মনোযোগ কিছুটা সরে গেছে বলে মনে হয়। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাসে অন্তত এক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করলে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সামাজিক নিরাপত্তা পেলে বাল্যবিয়ের আপৎ বিদায় নিতে বাধ্য হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর