মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানুষ কেন ভালো মন্দ হয়?

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মানুষ কেন ভালো মন্দ হয়?

বড় বিচিত্রময় পৃথিবী। তার চেয়েও বেশি বিচিত্রময় পৃথিবীর মানুষ। মানুষের মন। আচরণ। আমল। অভ্যাস। কেউ দিয়ে সুখী, কেউ নিয়ে। কেউ চেয়ে, কেউ আবার পরেরটা কেড়ে নিয়ে। এতসব বিচিত্রময় মানুষ দেখে নিজের ভিতর প্রশ্ন জাগে- একই স্রষ্টার সৃষ্টি হয়ে মানুষ এত বৈচিত্র্যময় চরিত্রের হয় কীভাবে? যমজ দুই ভাই। একজন মানবদরদি, আরেকজন সমাজবিধ্বংসী। একজন দাঈ, আরেকজন মাদকসম্রাট। একজন জ্ঞানী, আরেকজন ঘোরতর মূর্খ। অথচ তারা একই মায়ের পেট থেকে একই সময়ে দুনিয়ার বুকে পা রেখেছে। খুব অবাক হই যখন দেখি একজন মানুষ বুক ফুলিয়ে অন্যায় করে যাচ্ছে। মানুষ খুন করে একটু পরই নির্বিকার ভঙ্গিতে ভাতের থালায় হাত ডুবিয়ে দেয়। হাসি হাসি মুখে বলে, আজ সালুনটা বড় স্বাদ হয়েছে! বাবার বয়সী দাড়ি পাকা কোনো মুরব্বিকে কষে লাথি মেরে কোমরের হাড় ভেঙে দেয়। বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বলে, ‘চান্দার টেকা না পাইলে ফুটে দোকান করতে পারবি না।’ এর বিপরীত দৃশ্যটিও আমাকে তুমুল নাড়া দেয়। বয়সে তরুণ একজন মানুষ গভীর রাতে আরামের ঘুম হারাম করে জায়নামাজে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে। জীবনে কোনো বড় গুনাহ নেই তার। তবু ছোট গুনাহর কারণে পাকড়াও হওয়ার ভয়ে সব সময় জড়োসড়ো থাকে। ক্ষুদ্র কোনো নেক কাজও হাতছাড়া করতে রাজি নয়। কারও সঙ্গে দেখা হলে চমৎকার মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। হাসি ও মুসাফার সুন্নাতও তার কাছে এক পৃথিবীর চেয়ে অনেক দামি। বহুদিনের এ বিস্ময়ের সমাধান আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। সুরা ফাতিরের ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কারও কাছে যদি তার মন্দ কাজই আকর্ষণীয় বা আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে তাহলে শেষ পর্যন্ত মন্দ কাজকেই সে ভালো মনে করতে শুরু করে। আসল সত্য হলো, যে বিভ্রান্তির পথে চলতে চায় আল্লাহ তাকে বিভ্রান্তিতেই ডুবিয়ে রাখেন। আর যে সৎপথে চলতে চায় আল্লাহ তাকে সৎপথ দেখান। তাই বিভ্রান্তিতে ডুবে থাকা মানুষ যেন তোমার মানসিক যন্ত্রণার কারণ না হয়। ওদের নিয়ে বেশি ভাবলে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। ওরা যা করে আল্লাহ সব ভালো করেই জানেন।’ রসুল (সা.) আরবের দুরবস্থা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতেন। একজন বাবা কীভাবে জীবন্ত কন্যাশিশুকে কবর দেয়, কীভাবে মানুষ মানুষকে চোখের পলকে খুন করে ফেলে, এসব ভাবনা তার ভিতরজগতে তুমুল নাড়া দিত। দিনরাত শুধু ভাবতেন, কীভাবে খারাপ পথের মানুষকে সৎপথে আনা যায়। মিষ্টি কথা বলে, হেসে, দাওয়াত খাইয়ে, ঋণ দিয়ে নানাভাবে মন্দ মানুষকে ভালোয় পরিণত করার জন্য চেষ্টা করতেন নবীজি (সা.)। কিন্তু যারা ঘোর মন্দ তারা দিত টিটকারী। বলত, মুহাম্মাদ পাগল হয়ে গেছে। এ খুন-রাহাজানির জীবনই তো আসল জীবন। মসজিদের খুপরি ঘরে পাঁচ বেলা গিয়ে পড়ে থাকা কি জীবন! ভীষণ কষ্টে হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে যেত হজরতের। তিনি ভাবতেন, ঠিকভাবে বোঝাতে পারেন না। এজন্যই বোধহয় ওরা পাপের কালো পথ ছেড়ে নেকের আলোর পথে আসতে চায় না। এসব ভেবে গভীর মনঃকষ্টে ভুগতেন। প্রিয় হাবিবের এতটুকুন কষ্টও সহ্য হলো না মাবুদ রব্বানার। সঙ্গে সঙ্গে আয়াত নাজিল করে মানবচরিত্রের নিগূঢ় রহস্যের সহজ সমাধান বলে দিলেন। বললেন, হাবিব আমার! কিছু মানুষ এমনই হয়।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর