শিরোনাম
বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন দিন

পীর হাবিবুর রহমান

আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন দিন

আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন দিন, কঠিন চ্যালেঞ্জ। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ডরা কতটা সক্রিয় সেটি ওপেন সিক্রেট হয়ে উঠেছে তাদের অপতৎপরতায়। কতটা মনগড়া কল্পকাহিনি অপপ্রচার মিথ্যাচার করা যায় জামায়াতের টাকা খাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের শাবকরা দেখিয়ে দিচ্ছে। দেখিয়ে দিয়েছে নিরন্তর ঘেউ ঘেউ করেও তারা ক্লান্ত হয় না! হিটলারের মিথ্যাচারের মন্ত্রী গোয়েবলসকে এরা হার মানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার কি তার মিত্রশক্তিকে সুসংহত করে উপযুক্ত জবাব দিতে পারছে? নির্বাচন ও আন্দোলনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা কঠিন দুঃসময়ের ১৪ দল, মহাজোট যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দাবিদার তারা আজ কতটা শক্তিশালী, কতটা সুসংহত এবং অপপ্রচারের জবাবদানে সফল? নির্বাচন মহাজোটগতভাবে করলেও সরকার গঠন আওয়ামী লীগ এককভাবে করেছে। তাই ১৪ দল নীরব আর জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে!

আওয়ামী লীগের প্রচার সেল সম্পূর্ণ ব্যর্থ আর তথ্য ও গবেষণা সেলের কাজটা কী বোঝার সামর্থ্য কারও নেই! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ডিজিটাল শক্তিটা কট্টর বিরোধী পক্ষের হাতে যাচ্ছেতাই অপব্যবহার হচ্ছে। ভারত সরকারও নিয়ন্ত্রণে এনেছে অথচ আওয়ামী লীগ সরকার এখনো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি! আওয়ামী লীগের আদর্শিক ব্যবসায়ীদের কতটা কাছে রাখছে? কতটা সুসংগঠিত সাংস্কৃতিক কর্মী কবি সাহিত্যিকরা? কারওয়ান বাজারের কালের অন্ধকার গলির দুটি দৈনিক সুযোগের অপেক্ষায় ফণা তোলা বিষধর কালনাগের মতো বসে আছে। সময় হলেই ছোবল দেবে, সেখানে বিকল্প মিত্র বিশ্বস্ত শক্তিশালী মিডিয়া হাউসকে কারা দূরে সরিয়ে দিতে সরকারের ভিতর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? দেশপ্রেমিক মানুষেরা বুঝছেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কি বুঝছেন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে রাজনৈতিক নেতৃত্বহীন রাষ্ট্র কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে? ১১ লাখ রোহিঙ্গার সমস্যা সমাধান বা তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদার নয় বরং মোড়লরা নাগরিকত্বদানের আবদার করে বসে! এ সংকটের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির উত্থানের আশঙ্কা রয়েছে। রয়েছে পাহাড়ে ঝড়ের আভাস! অর্থনৈতিক উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা। তবে কেন দলকে শক্তিশালী না করে ক্ষমতার দম্ভ, উন্নাসিক আচরণ, দুর্নীতির পথে জনবিচ্ছিন্ন হওয়া?

আওয়ামী লীগ ও সরকার এখন শেখ হাসিনার ইমেজের ওপর দাঁড়িয়ে। ক্ষমতায় না থাকলে নেতা-কর্মীদের ওপর কী দুর্যোগ নামবে ভাবছেন? ’৭৫-পরবর্তী ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ভুলে গেছে কি দলটি? বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের ভয়াবহতা? ভাবলে জনগণের হৃদয় জয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পথে হাঁটছেন না কেন? কেন লোভ-লালসার পথ, রাতারাতি বিত্তবৈভব গড়ার নেশা থেকে মুক্ত হচ্ছেন না? কেন দুঃসময়ের লড়াই করা আদর্শিক কর্মীরা সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে দেশজুড়ে? সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ঘিরে যা ঘটে গেছে তা অশুভ শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রের যে পরিকল্পিত অংশ এটা পরিষ্কার। কুমিল্লায় হিন্দুদের দেবতার পায়ে মুসলমানের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ কোনো হিন্দু রেখে যে উৎসবটা মাটি করবে না এটা পরিষ্কার। তেমনি আল্লাহভীরু ধর্মপ্রাণ মুসলমানও মূর্তির পায়ে কোরআন রাখার মতো পাপ করবে না। তার মানে তৃতীয় শক্তির কেউ রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে ফেলতেই এমনটা করেছে এবং কিছুটা সফল হয়েছে। একটি সম্প্রদায়ের উৎসবকে বেদনাবিধুর করেছে ধর্মান্ধ উগ্রপন্থিরা। এতে আবার সামনে এসেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নির্লজ্জতা যা রাষ্ট্রের চরিত্রকে বিবর্ণ ধূসর করেছে। রাষ্ট্র এ দায় এড়াতে পারে না। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি গণআন্দোলনে চরম ব্যর্থ হলেও যখন যে ইস্যুতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে তখনই নামতে চেয়েছে। যেমন চেয়েছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে মামুনুল হকদের হেফাজতি উগ্র ধর্মান্ধ শক্তির তান্ডবকালে। এ শক্তিকে দমন না করলে সেদিন আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলকালে উল্লাস করত আর এবারের ঘটনায় রক্তের প্রলয় আরও বাড়িয়ে দিত। সরকারের কিছু মন্ত্রী-নেতারও দায়িত্বশীল দূরদর্শী আচরণ প্রয়োজন। সরকারের প্রধান নির্বাহী কোনো দায়িত্ব না দিলে কোনো মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী থাকতে প্রতিমন্ত্রীর কার্যত কোনো কাজ নেই। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কী কাজ জানি না। তবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সঙ্গে তাল রেখে নিয়মিত বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে নজর কাড়ছেন সেখানে ডা. মুরাদ অসময়ে এক বয়ানে আগুনে ঘি ঢেলেছেন! এ কথা সত্য যে বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিষ ও ধর্ম-বর্ণের নামে রাজনীতি আর মানুষ শোষণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করে তারা মানবতার শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু, মনুষ্যত্বের শত্রু। এরা ইনসাফের শত্রু। তারা মহান সৃষ্টিকর্তারও শত্রু। এরা কখনো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারেনি। এদের চিন্তা বিকৃত। হৃদয়-মন দারিদ্র্যই নয় বিকৃতি উগ্রতায় বিষাক্ত কলুষিত। মার্টিন লুথার কিং এদের বিরুদ্ধে লড়ে বিজয়ী হয়েও জীবন দিয়েছেন। জীবন দিয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। মহাত্মা গান্ধী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে উগ্র নথুরাম গডসের হাতে জীবন দিয়েছেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীন করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদের সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। যা ছিল সুমহান রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অর্জন। কিন্তু পরাজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তির ষড়যন্ত্রে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংস হত্যাকান্ডের মাধ্যমে খুনি ও সামরিক শাসনের অন্ধকারে স্বাধীনতার চেতনার সূর্য অস্তমিত করা হয়নি, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রের মূল আদর্শ একে একে মুছে ফেলা হয়েছে। ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অধিকার। ধর্মকে রাজনীতিতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও সেই থেকেই।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ দমন করলেও মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত আদর্শিক বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারেনি। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায়ের আলোকেই হোক আর রাজনৈতিক কারণেই হোক পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মুছে দিলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেওয়া হয়নি। সময় গড়িয়ে গেছে অনেক। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবারই প্রথম নয়, আগেও ঘটেছে। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে দানবের আস্ফালন দেখিয়েছে। একদিন যেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক অসাম্প্রদায়িক শক্তির সুসংহত ঐক্য লড়েছে সেখানে আজ দেশ মৌলবাদে ভাসছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক শক্তিকে গণজাগরণ ঘটিয়ে ও ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করতে দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে একটি বড় সমাবেশ হয়েছে কেবল। ধর্মান্ধ শক্তির সহিংসতা রুখতে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। বর্বর বর্ণবাদ ও ধর্মান্ধ সহিংসতার কাছে মানবতা পরাজিত হতে পারে না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমঅধিকার রয়েছে। কোনো অপরাধী আইনের ঊর্ধ্বে নয়। মসজিদে একদা শূকরের মাংস, মন্দিরে গোমাংস রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নোংরা রাজনীতি রক্ত ঝরিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে গরুর মাংস রাখার গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা আর কুমিল্লায় হিন্দুদের দেবীর পায়ে পবিত্র কোরআন রেখে তাদের উৎসব রক্তাক্ত করে মানুষ হত্যা, হামলা জঘন্য অপরাধ। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচারে শাস্তি দিতে হবে। ধর্মের রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা কল্যাণ বয়ে আনে না।

আমরা কখনই হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদে বড় হইনি। তাই বলে কেউ কারও ধর্ম থেকেও বিচ্যুত হইনি। সামাজিক বন্ধনে বেড়ে ওঠা শহরে-পাড়া থেকেই আত্মার বন্ধন। কী ছিলাম কোথায় আজ আছি ভাবলেই গ্লানি লজ্জা বেদনায় জর্জরিত হই। আমার এসএসসি পাসে যে দুজন শিক্ষকের অবদান বেশি তাদের একজন আমার ভাতিজা মরহুম সাইফুদ্দিন আহমেদ পীর, আরেকজন ধূর্জটি কুমার বোস যিনি রাখাল স্যার বলেই জনপ্রিয়। যারা আজ ধর্মের নামে সংখ্যাগুরুর দম্ভে সহিংসতা করেন তাদের কাছে প্রশ্ন- যখন ফিলিস্তিনে মুসলমান মরে, শিশু-নারী নির্যাতিত হয় তখন কেমন লাগে? যখন ভারতে দাঙ্গায় নিহত হয় তখন? তাহলে ধর্মের নামে দাঙ্গা-সন্ত্রাস জঘন্য অভিশাপ! প্রকৃত মুসলমান এ সাম্প্রদায়িকতার বিষে আক্রান্ত হতে পারে না। হাশরের ময়দানে কাকে কোন অপরাধে জবাবদিহি করতে হবে, শাস্তি ভোগ করতে হবে আমরা জানি না। ধর্মের বাজিকরদের ব্যাপারে সজাগ সতর্ক ও প্রতিরোধ কাম্য। মানুষ হত্যা ও ধর্মের নামে সন্ত্রাস রুখে দাঁড়াতেই হবে। মনে রাখতে হবে দাঙ্গার অভিশাপে অনেক হিন্দু দেশত্যাগ করেছে। এতে দেশের রূপ-বৈচিত্র্য বিবর্ণ হয়েছে। একদিন দেশ যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীশূন্য হয় তাহলে আর দেশটাকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বলা যাবে না। রাষ্ট্রকেও এখানে কঠোর হতে হবে সব নাগরিকের জানমাল ও সব ধর্মের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে।

আমরা সম্প্রীতির বন্ধনের আত্মিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। এ সম্প্রীতির বিনাশ  নেই। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ জীবন দিয়েছে। এ দেশ সবার। সব ধর্মের নিরাপত্তা সংবিধান নিশ্চিত করেছে। ডা. মুরাদ হাসান যেভাবে তর্জনী নাচিয়ে, যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মুছে ফেলার কথা বলেছেন, সংসদে বিল এনেই তা করার দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা নিয়ে আলেম সমাজ আর ধর্মান্ধ শক্তি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন যথার্থ প্রশ্ন তুলেছেন, মুরাদ কি এ বক্তব্য দল, সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দিয়েছেন? না হলে কেন এমন উগ্রভাবে বলতে গেলেন? এতে তো পরিস্থিতি আরও অশান্ত হবে! ড. হাছান মাহমুদ একজন মিডিয়াবান্ধব সহনশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাঁর ব্যবহার অমায়িক কিন্তু শক্ত কথাও নরমে বলতে জানেন। আমি যখন মুম্বাইয়ে তখন তিনি দিল্লি প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধনের বিরল ও গৌরবজনক কাজটি করেছেন। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দিল্লি প্রেস ক্লাবের সদস্য ৫ হাজার। যতবার দিল্লি যাই এখানে আড্ডা দিই। এর সান্ধ্যকালীন সরগরম চেহারা টানে। ভোটাধিকার নেই এমন কূটনীতিক সাহিত্যিকও এর সদস্য। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ক্যারিশমাটিক প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ এ কাজটি করে চমকে দিয়েছেন। দিল্লি প্রেস ক্লাবের সাবেক প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের উৎসাহে ২৮ অক্টোবর কলকাতা প্রেস ক্লাবেও বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধন হচ্ছে। রঞ্জন সেনও সেখানে কর্মঠ। শাবান মাহমুদের আগে এনামুল হক চৌধুরী ছাড়া কেউ সেভাবে কাজ করেননি। নিজেদের আখের আর কেরানির জীবন ভোগ করেছেন। শাবান অন্তর দিয়ে মুজিবকন্যার অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। পশ্চিমা দেশেও যে প্রেস মিনিস্টাররা বরাবর অথর্বের পরিচয় দিচ্ছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরা দেশ ও সরকারের প্রচার ঘটাবেন কি অপপ্রচারের মুখেই বেহুঁশ লাশের মতো পড়ে থাকেন। জবাব বা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেন না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে তাদের কেউ কেউ আবু মুসা হাসানদের মতো আবাস গড়বেন খাওয়া শেষে।

আমার শহরের একসময়ের বাসদ ছাত্রলীগ নেতা, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা আশরাফ উজ জামান ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে সোমবার শেষনিঃশ্বাস ফেলেছেন। মানুষটি বৈষয়িক ছিলেন না। আমার বড় আপন মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দিন। এদিকে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহর অসীম করুণা ও সবার দোয়ায় নতুন জীবন লাভ করেছি। এজন্য শুকরিয়ার শেষ নেই। কিন্তু ষাট পেরোনোর আগেই নিয়ন্ত্রিত জীবনের বাঁধাধরা ছকে আটকে গেলাম। অথচ আমি ছিলাম ভীষণ কাজপাগল বেপরোয়া মানুষ! অন্যদিকে গতিময় ছুটে চলা! কি দেশে কি বিদেশে! তুমুল আড্ডাবাজ যার কোনো সময় নির্ধারণ করা ছিল না! আমুদে প্রাণবন্ত একটা জীবন আমার কি অচেনা হয়ে যাবে? এখনো জানি না! কারও ক্ষতি তো করিনি আনন্দ মজাই করেছি! যারা আমার সঙ্গে চলেছেন তারা তো জানেন। নিয়মে বাঁধা জীবনে কোনো দিন অভ্যস্ত ছিলাম না। ডাক্তার বলেছেন, তিন-চার সপ্তাহ পর অফিস ও বাড়ি যেতে পারব। তিন মাস পর বিদেশ। আবার চার মাস ইনফেকশন যাতে না হয় সেজন্য কঠোর সতর্কতা। ওষুধই এর জন্য দিয়েছেন এক বছরের। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর ইনফেকশনের ভয় বেশি থাকে। নিজের শরীরের ব্যাকটেরিয়া বা অন্যের শরীরের ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত করার আশঙ্কা থেকে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধের প্রটোকল দেওয়া। এরপর জীবনের নিয়ম-শৃঙ্খলা বাকি! বাকিটা জীবন বেঁচে থাকার জন্য পারব তো! ভাবলে মনটাও খারাপ হয়। আল্লাহ তৌফিক দিন। সবাইকে মানবিক মানুষ করুন। হিংস্রতামুক্ত করুন।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর