মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

তৈমুর লং

১৪০৫ সালের জানুয়ারি। কাজাখস্তান-জুড়ে নেমে এসেছে অসহনীয় শীত। প্রবল তুষারপাতে সমস্ত পথঘাট চলাচলের অনুপযুক্ত। শীতের তীব্রতায় পথের ধারে মরে পড়ে আছে পশুপাখির দল। এমন বৈরী পরিবেশে একদল অভিযাত্রীর দেখা মিলল চীনের দিকে অগ্রসররত অবস্থায়। সৈন্যসামন্ত, হাতি, ঘোড়া বোঝাই সেই দলটি তাদের অধিপতি তৈমুরের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে চীন দখলের উদ্দেশ্যে। তৈমুর, যার নাম শুনলে পৃথিবীর যে কোনো রাজার সিংহাসন থরথর করে কাঁপে, তার পরিস্থিতিও বেশ সুবিধাজনক নয়। তার ওপর আজ সকাল থেকে তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। দলের কবিরাজরা তৈমুরকে পরীক্ষা করেন। তাদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে শঙ্কার ছাপ। এ মুহূর্তে পিছু না হটলে তৈমুরকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু তৈমুর নাছোড়বান্দা। রাগে গজ গজ করে ওঠেন তিনি। কাজাখস্তানের শীতের কাছে পরাস্ত হতে চান না তিনি। তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল, ‘পিছু হটা চলবে না। তৈমুর কখনো পিছু হটতে পারে না।’ হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। তাই শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে চলল তৈমুর বাহিনী। কিন্তু পথিমধ্যে শত শত সৈনিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তৈমুরের নিজের অবস্থারও দিন দিন অবনতি হতে থাকল। শেষ পর্যন্ত তৈমুর হার মানলেন। কাজাখস্তানের ওতরার পর্যন্ত এসে ভেঙে পড়লেন। শীতের কারণে পিছু হটাও অসম্ভব হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে কাজাখস্তানের শীতের থাবায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এশিয়ার ত্রাস তৈমুর লং। পৃথিবীর রাজাধিরাজরা যা করতে পারেননি তা করে দেখাল সামান্য শীত! দাফনের উদ্দেশ্যে তৈমুরকে সমরখন্দে ফিরিয়ে আনা হলো। শেষ ইচ্ছানুযায়ী তার কবরগায়ে বড় অক্ষরে লিখে দেওয়া হলো, ‘আমি যেদিন ফের জেগে উঠব সেদিন সমগ্র পৃথিবী আমার ভয়ে কাঁপবে!’ পৃথিবী শাসন করা বীরদের নাম নিলে প্রথমেই উঠে আসবে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, চেঙ্গিস খান, কুবলাই খান, জুলিয়াস সিজার, তৈমুর লংসহ বহু শাসকের নাম। কিন্তু অন্য শাসকদের মতো তৈমুর কোনো রাজ পরিবারের সন্তান ছিলেন না। সামান্য ভূস্বামীর সন্তান তৈমুর ধীরে ধীরে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেন, হন বিশ্বজয়ী বীর। তৈমুর তার নিষ্ঠুরতার জন্য অন্য শাসকদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। এমনকি মৃত্যুর পরও তিনি পৃথিবীকে জানান দিয়ে গেছেন তার ফিরে আসার কথা!

জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর