শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আলেমের পরিচয় ও মর্যাদা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

আলেমের পরিচয় ও মর্যাদা

ইলম শব্দটি আরবি। যে কোনো বিষয়ের জ্ঞান-বিদ্যা বোঝানোর জন্য এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর কোনো বিষয়ের জ্ঞানী ব্যক্তিকে আলেম বলা হয়। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সম্পর্কিত জ্ঞান এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) নির্দেশিত জীবনাচারের শিক্ষাকে ইলম বলা হয়। আল কোরআন ও হাদিস থেকে অর্জিত জ্ঞানই হলো সাধারণ অর্থে ইলম। আর যিনি এ ইলমের অধিকরী হন তিনি হলেন আলেম। আল্লাহ যাকে এ জ্ঞান দান করেন তিনিই প্রকৃত নিয়ামতপ্রাপ্ত। সাহাবি মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তাকে দীনের বিষয়ে গভীর জ্ঞান দান করেন।’ বুখারি। ইলম হলো আল্লাহ-প্রদত্ত এক অফুরন্ত নিয়ামত। যারা ইলম অর্জন করেছেন আর যারা করেননি তাদের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে।’ সুরা জুমার আয়াত ৯। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমানদার এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।’ সুরা মুজাদালাহ আয়াত ১১। আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ ও প্রিয় হলেন নবীগণ। একজন সত্যিকারের আলেম নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মর্যাদাবান। তা কতই না সৌভাগ্যের বিষয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে দিনার দিরহাম রেখে যাননি। তারা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে সে বিপুল অংশ লাভ করেছে।’ সুনানে আবু দাউদ। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নেই যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।’ মুসনাদে আহমদ। সাহাবি আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের একজন সাধারণ মানুষ অপেক্ষা আমার শ্রেষ্ঠত্ব যেমন, একজন সাধারণ উপাসনাকারী অপেক্ষা একজন আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব তেমন।’ তিরমিজি। অতএব নবীদের মর্যাদা রক্ষা করা, তাদের সম্মান প্রদর্শন করা ও অনুসরণ করা যেভাবে প্রত্যেক মানুষের একান্ত কর্তব্য এভাবেই নবীদের অবর্তমানে আলেমদের মর্যাদা রক্ষা, তাদের সম্মান প্রদর্শন করা ও অনুসরণ করা সাধারণ মানুষের জন্য একান্ত দায়িত্ব। তাই আমরা নিজেরা পর্যাপ্ত ইলম অর্জনের জন্য আগ্রহী হই। আলেমদের মর্যাদা রক্ষা এবং তাদের সম্মান প্রদর্শনের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। নিজের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রাণিত করি এবং অন্য মুসলমানদের প্রতি এ বিষয়ে যথাসাধ্য সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করি। আর জেনে নিই ইলম অর্জনের জন্য কোনো বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই। সাহাবায়ে কিরামের অনেকেই শেষ বয়সে কোরআন-হাদিসের পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে সফল হয়েছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের তৌফিক দিন।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর