রবিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

শীতের অজু মুছে দেয় জীবনের গুনাহ

কারি রফিক আহমদ ওসমানী

শীতের অজু মুছে দেয় জীবনের গুনাহ

এই তো কয়েক মাস আগের কথা। প্রচ- গরমে নাভিশ্বাস উঠেছিল আমাদের। মনে হয়েছিল, কোনোমতে যদি এ দেশ থেকে পালিয়ে শীতপ্রধান দেশে আশ্রয় নিতে পারতাম তাহলে মহাসুখে জীবন কাটিয়ে দিতাম। গরম শেষে শীত এলো। এলো শৈত্যপ্রবাহ। প্রচ- শীতে কাঁপছে দেশ। এখন আবার মনে হচ্ছে গ্রীষ্মপ্রধান কোনো এলাকায় গিয়ে যদি ঠাঁই করতে পারি তাহলে হয়তো জীবন বেঁচে যাবে। এই যে শীত-গরম থেকে পালানোর মানসিকতা এ থেকেই প্রমাণ হয় প্রকৃতির কাছে কত অসহায় আমরা।

শীত-গরম আসলে মানুষের জন্য শিক্ষণীয়। আল কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, প্রকৃতির পালাবদলে অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে অনেক বড় নিদর্শন। প্রকৃতি যেমন এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় বদলে যায়, তেমনি মানুষও এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় বদলে যাবে। একসময় সে কিছুই ছিল না। তারপর সে জন্ম নিয়েছে, নির্দিষ্ট সময় পর মারা যাবে। আবার তার পুনরুত্থান হবে। হিসাব-নিকাশ হবে। এসব বিষয় বোঝা যায় প্রকৃতির বদলে যাওয়া দেখে। আরবি এক কবি বলেন, শীতের পাতাঝরা গাছের দিকে তাকাও, মনে হবে এ গাছ মরে গেছে। আর কখনো বেঁচে উঠবে না। কিন্তু শীত চলে গেলেই গাছে নতুন পাতা গজায়। 

শীত আমাদের দেখিয়ে দেয় মরে যাওয়ার পর, ঝরে যাওয়ার পর গাছে, প্রকৃতিতে কীভাবে প্রাণ ফিরে আসে। তাই শীতও মুমিনদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। শীতে রয়েছে পুণ্য অর্জনের অবারিত সুযোগ। শীতকালে সঠিকভাবে অজু করা, অজুর অঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা; প্রতিটি অঙ্গের যতটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো দরকার ততটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে- সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ তাবারানি। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাব না কীসে তোমাদের পাপ মোচন হবে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে? সাহাবায়ে কিরাম বলল, অবশ্যই! হে আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিকভাবে অজু করা।’ মুসলিম। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, তীব্র শীতে কষ্ট হলে গরম পানি দিয়ে অজু করাতে কোনো বাধা নেই। ঠান্ডা পানি ব্যবহারে শারীরিকভাবে ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা যদি থাকে তাহলে তিনি অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে পারেন। শীতকাল আগমন করলে উবায়েদ বিন উমায়ের (রা.) বলতেন, ‘হে কোরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তিলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাক। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখ।’ কোরআনের ভাষায়, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই ঘুমিয়ে কাটায়, আর রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকে।’ সুরা জারিয়াত, আয়াত ১৭-১৮। একবার শীতের মৌসুমে হজরত ওমর (রা.) তাঁর ছেলেকে বলেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না যা দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়? সাহাবিরা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, মন না চাইলেও অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা।’ মুসলিম।

 

লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্টার জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর