ইমরান আহমেদ খান নিয়াজির জন্য রাজনীতি ছিল একজন পরিত্রাণকারীর দিনের কাজ। তাঁর যুক্তি অনুসরণ করেছিল পাকিস্তানের ইতিহাসের গতিপথ। ১৯৪৭ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’র জন্ম দিয়েছিলেন, কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুতে দেশ ‘প্রতিশ্রুত নেতা’ পায়নি। সাত দশক ধরে দেশটি কাঁধে ঝোলাধারী বেসামরিক ব্যক্তি ও সামরিক উচ্চাভিলাষীদের দ্বারা বিপর্যস্ত হয়েছে, যারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে দেশকে বিশৃঙ্খলা ও দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে রেখে নিজেদের পকেট ভারী করেছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বিদেশি অভয়াশ্রমে পালিয়ে গেছে। ইমরান খান ২০১১ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘পাকিস্তান : অ্যা পার্সোনাল হিস্টোরি’তে একনায়ক ও পারিবারিক সামন্তবাদের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন, যারা রাজনীতিকে ‘ধ্বংস ও লুণ্ঠনের খেলা’য় পরিণত করেছেন।
সিকি শতাব্দীর নির্বাচনী প্রহসন, অনুবর্তীদের নৈর্ব্যক্তিক মনোভাব এবং মিডিয়ার রসিকতার পর ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের আগমনের সঙ্গে ত্রাণকর্তা তাঁর নিয়োগকে অদৃষ্টের সঙ্গে জুড়ে দেন। কেউ যে ইমরান খানকে বিশ্বাস করেনি তাতে তিনি মাথা ঘামাননি। তিনি তাঁর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন। একজন ত্রাণকর্তার যাত্রা শুরু হওয়া উচিত ছিল শ্রদ্ধা ও প্রশংসার মধ্য দিয়ে। ইমরান খানের অন্তর্নিহিত একটি গুণ ছিল, একই সঙ্গে ছিল অন্তর্নিহিত একটি সুবিধা। তিনি ব্যতিক্রমী ধরনের আন্তরিক। এটি পাকিস্তানের প্রচলিত রাজনৈতিক শ্রেণির জন্য ভীতিকরভাবে আন্তরিক বলা যেতে পারে। ইমরান খানের সব সদিচ্ছা ছিল দারিদ্র্যপীড়িতদের জন্য এবং তাঁর বিদ্বেষের কোটা সংরক্ষিত ছিল সামরিক-আমলাতান্ত্রিক-রাজনৈতিক পরগাছাগুলোর জন্য, যারা তাঁর হিসাব অনুযায়ী ওয়াশিংটনে তাদের অভিভাবকদের যোগসাজশে দেশের সম্পদ চুরি করেছে। তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল বিশেষ মর্যাদা ও সমৃদ্ধির মাঝে তাঁর জন্ম, যার অর্থ বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, জাভেদ বারকি ও মজিদ খানের মতো জ্ঞাতি ভাই, যারা দেশের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন, ইংল্যান্ডে স্বচ্ছন্দ গমন, এ-লেভেল ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, লন্ডনে গ্ল্যামার বয় হওয়ার প্রয়োজনীয় সবকিছু অর্জন, খেলাধুলায় প্রতিভা ও বিনোদিনীদের প্রিয়ভাজন হওয়া, যারা সত্তর ও আশির দশকে হাজির হতো ক্রিকেটের মাঠে ও পার্টিতে। ইমরান খান শুধু একজন ক্রিকেটার ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভান করার রাজা, যিনি ১৯৭৮ সালে ‘বিগ বয়েজ প্লে অ্যাট নাইট’ টি-শার্ট পরে ‘ক্যারি পেকারস’ এর ঐতিহাসিক বিকল্প পেশাদার টুর্নামেন্টে আগুন ধরাতে পারতেন। কুশলী জাভেদ মিয়াঁদাদ ক্রিকেটার হিসেবে হয়তো আরও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারতেন, কিন্তু মিয়াঁদাদ কখনো ওরচেস্টারের রয়েল গ্রামার স্কুল বা লাহোরের অ্যাচিসন কলেজে অথবা গ্র্যাজুয়েশনের তুলনামূলক সহজ শিক্ষা দৌড়ে এগিয়ে যেতে আগ্রহী তাদের পছন্দনীয় পিপিই ডিগ্রির জন্য অক্সফোর্ডের কেবেলে যাননি। ভুল অথবা ভুল পদক্ষেপ, যা ইসলামিক পাকিস্তানের আরেকটি পর্যায়কে বিনষ্ট করেছিল তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তাঁর অর্জন ছিল স্বেচ্ছাচারীর মতো, তিনি যখন ক্রিকেট বল তাঁর সাদা প্যান্টে কুঁচকির কাছে ঘষেছেন, সেই দৃশ্য মোল্লাদের ক্ষুব্ধ করেছে, কিন্তু তরুণরা উচ্ছ্বাসে চিৎকার করেছে এবং আন্টিরা প্রশ্রয়মূলক লজ্জা অনুভব করেছেন। তার চেহারা দুর্দান্ত, ভাষা চমৎকার এবং তাঁর বন্ধু তালিকার মধ্যে প্রিন্সেস ডায়ানাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একটি প্রজন্ম আর কী চাইতে পারে? এমনকি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোও তাঁকে ফেলে দিতে পারেনি। লাহোর ও লন্ডনে সমান ভালোবাসা পাওয়া ইমরান খানের মতো সুপারস্টার পাকিস্তানে আর কখনো ছিল না। কোনো সেলিব্রিটি লন্ডনের সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের কলামে কবে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলেন?
১৯৭১ সালে ইমরান খান তাঁর টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন, যদিও তিনি নিয়মিত হন ১৯৭৬ সালে। তাঁর সূচনা ছিল আকর্ষণীয়, ১৩ টেস্টে ৯০ উইকেট। তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন, কারণ তিনি ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু ট্র্যাজেডিও ছিল, পায়ের একটি অস্থি ভেঙে যাওয়ায় তাঁকে আড়াই বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয়। কিন্তু তিনি টপ ফর্মে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ সালে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তিনি ছিলেন জাতীয় বীর। কিন্তু তিন মাস পর তিনি আবার ফিরে আসেন সামরিক একনায়ক জিয়াউল হকের অনুরোধে। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তান বিজয় অর্জন করে। তিনি ক্রিকেট তারকা থেকে ক্রিকেটের কিংবদন্তিতে পরিণত হন। ক্রিকেটের চেয়ে রাজনীতি কঠিন ছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু তিনি যে সাড়া আশা করেছিলেন তা পাননি। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে তাঁর দল মাত্র এক শতাংশ ভোট লাভ করে। ২০০২ সালে তিনি নিজের এলাকা থেকে পরাজিত হন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচন বর্জন করেন। ২০১৩ সালে তাঁর দল ভালো ফলাফল করলেও জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো ছিল না। দুই দশক পার হয়ে গিয়েছিল, হতাশা ছিল চরমে।
দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাঁর অনমনীয় দৃঢ়তা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনাকাক্সিক্ষতভাবে একজন ত্রাণকর্তার বিয়ে বেহেশতে নির্ধারিত হয়নি। ইমরান খানের সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্পর্ক ছিল তাঁর প্রথম স্ত্রী ও তাঁর দুই পুত্র সুলায়মান ইসা খান ও কাসিম খানের মা জেমাইমা গোল্ডস্মিথের সঙ্গে। কিন্তু জেমাইমা ইহুদি হওয়ার কারণে পাকিস্তানি ভোটারদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিলেন। এ বিয়ের সমাপ্তি ঘটে ২০০৪ সালে, কিন্তু তাদের মধ্যে ভালোবাসা বজায় থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন সাবেক স্বামী প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় জেমাইমা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানান। সাংবাদিক রেহাম খানের সঙ্গে ২০১৫ সালে ইমরান খানের দ্বিতীয় বিয়ের অবসান ঘটে সূচনার মতোই দ্রুততার সঙ্গে। একসময় অসংখ্য নারীর চোখে ধরার মতো সুসজ্জিত ইমরান খান ২০১৮ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন এক বোরকা পরিহিতা নারীকে, যিনি তাঁকে ক্ষমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
১৯৮২ সালের দুর্ঘটনার পর ইমরান খান প্রথমে একজন জ্যোতিষী ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সব ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। অতঃপর আসেন বহু পীর ও সুফি, যারা আল্লাহর সংস্পর্শ লাভের দাবি করেন এবং ইমরান খান তাঁর আত্মজীবনীতে স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর অতীত এবং তাঁর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের অন্তর্দৃষ্টিতে বিস্মিত হয়েছেন।
তাঁর জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তাঁর মা শওকত খানুমের। তাঁর বয়স যখন ১০ বছর তখন তাঁর মা ও খালা তাঁকে শাহিওয়ালের এক সুফি নারীর কাছে নিয়ে যান। সেটি ছিল এ জগতের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়। ১৯৬৬ সালে ১৪ বছর বয়সে তিনি তাঁর মায়ের আধ্যাত্মিক নির্দেশকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কিছু মুরিদের সঙ্গে তিনি মেঝের ওপর বসা ছিলেন, তার মুখ ও মাথা চাদরে আবৃত ছিল। কয়েক মিনিট নীরবতার পর তিনি ইমরান খানকে বলেন যে তিনি (ইমরান খান) কোরআন পাঠ শেষ করেননি। তিনি বিস্মিত হন, কারণ এটা সত্য। তাঁর মা স্বস্তি লাভ করেন কারণ উক্ত নারী সুফি তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ইমরান খানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ইমরান খান অত্যন্ত খ্যাতির অধিকারী হবেন এবং তাঁর মায়ের নাম মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে।
১৯৮৭ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর ইমরান খান এক শুটিং ট্রিপে লাহোর থেকে ১০০ মাইল উত্তরদিকে যান এবং সেখানে বাবা চালা নামে এক পীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ক্রিকেট বা দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিকেটার সম্পর্কে বাবা চালার কোনো জ্ঞান ছিল না। গ্রামে কোনো টেলিভিশন নেই। যখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ক্রিকেটার পরবর্তীতে কী করবেন, পীর উত্তর দেন যে ইমরান খান তাঁর পেশা পরিত্যাগ করেননি। তিন মাস পর জেনারেল জিয়াউল হক ক্রিকেট টিমের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে দেশের স্বার্থে ইমরান খানকে ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক হিসেবে ফিরে আসতে অনুরোধ করেন। এক বছর পর তিনি মিয়া বশির নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হন, যিনি ইমরানের জীবনের অতীতের কিছু ঘটনার উল্লেখ করেন, যা কারও জানার কথা নয়, যেগুলো এত ব্যক্তিগত যে উল্লেখ করার মতো নয়। এসব আধ্যাত্মিক মানুষের সংস্পর্শ ইমরান খানকে আধ্যাত্মিকতায় দীক্ষিত করে। তিনি নিশ্চিত হন যে ভবিষ্যৎকে আড়াল করে রাখার পর্দার উন্মোচন ঘটাবে আধ্যাত্মিক নির্দেশনা।
২০১৭ সালে গুজব ওঠে যে স্বঘোষিত সুফি বুশরা বিবি, যিনি খাওয়ার ফরিদ মানেকার স্ত্রী ছিলেন, তিনি ইমরান খানকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি যদি শুধু নির্দিষ্ট কিছু রীতি পালন করেন এবং তাকে বিয়ে করেন, তাহলে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন। গুজব থেমে যায়, যখন তিনি বুশরা বিবিকে বিয়ে করেন। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ করেন। একটি মূল্যে ক্ষমতা এসেছিল। ইমরান খান যেদিন দায়িত্ব হারান, সেদিন বুশরার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফারাহ জামিল খান দুবাইয়ে পালিয়ে যান। তার স্বামী আহসান জামিল গুলজার তারপর দুবাই যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কন্য মারিয়ম নওয়াজের মতে ফারাহ ঘুষ হিসেবে কমপক্ষে ছয় বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল ‘ডন’-এ এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সেটিকে ‘সকল কেলেঙ্কারির জননী’ বলে বর্ণনা করেছেন। জনসাধারণের কাছে তার দায়িত্ব ত্যাগ তাঁর দোষকেই প্রমাণ করে।
ইমরান খান যখন তাঁর অভিলাষ পূরণ করেন তখন কিছু ঐশ্বরিক সহায়তা তাঁকে ছেড়ে যেতে শুরু করেছিল। যখন তাঁর প্রয়োজন ছিল কুশলী বা চাতুর্যপূর্ণ কৌশল তখন তিনি একজন অপেশাদারের মতো তাঁর সামর্থ্য সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করেছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি নিশ্চয়ই সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ধারণা দিয়েছিলেন যে তিনি তাদেরই লোক। নির্বাচনের দিন তারা তাদের অনুগামীকে সহায়তা করেন এবং ইমরান খান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে যে ঘাটতির মধ্যে ছিলেন তারা পার্লামেন্টে সেই সংখ্যা পূরণ করে দেন। কিন্তু নতুন প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করতে পারেননি যে জেনারেলরাও তাঁর ওপর সুতায় আটকে রাখতে পারে, যা তারা অন্যদের ক্ষেত্রেও করেছেন।
কিন্তু সদিচ্ছা সবসময় সুশাসন নিয়ে আসে না। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইমরান খান দারিদ্র্য নির্মূল করার কথা বলেছেন এবং তিনি ক্ষমতায় আসার পর ভোটাররা দেখতে পায় যে দ্রুত সংস্কার, আর্থিক ব্যবস্থাপনার কোনো ধারণা তাঁর নেই। উপদেষ্টা বাছাইয়ে তিনি বিজ্ঞতার পরিচয় দেননি। সেনাবাহিনীতে তাঁর সাবেক কল্যাণকামীরা দেখতে পায় যে ইমরান খান তাঁর নিজের সৃষ্ট সমস্যার সাগরে হারিয়ে গেছেন, তখন তারা তাকে সেই সাগরে ভাসার জন্য ছেড়ে দেয়। পাকিস্তানের রাজনীতিতে কেউ কখনো সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহসী হবে না। ইমরান খান যদি ভেবে থাকেন যে ইউনিফর্মধারীরা তাঁর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের লাইফবোটের দাঁড় টানবে, বিশেষ করে এটা যখন স্পষ্ট যে তিনি জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন, তাহলে তাঁর বিভ্রান্তি শিগগিরই কেটে যাবে। একজন ডুবন্ত প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া কখনো সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থকে কোরবানি দেবেন না।
এটা সম্ভব হতে পারে যে ইমরান খান আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস করেন যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মুখোশের অন্তরালে কিছু ব্যক্তি ২৫ কোটি রুপি বিলিবণ্টন করেছে। তিনি তাঁর গ্রন্থে পক্ষত্যাগকে চক্রান্তের নামান্তর বলেছেন। আনুগত্য এবং বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে বিরাট ব্যবধান। তিনি ইসলামাবাদের জনসমাবেশে তাঁর উষ্মা প্রকাশ করেছেন, তাঁর ক্রোধ চাপা রাখতে পারেননি। ৩ এপ্রিল রবিবার তাঁর বিচারের দিনে তিনি তাঁর দুর্দশাকে তুলনা করেছেন কারবালা প্রান্তরে মহানবীর (সা.) এর নাতি ইমাম হুসাইনের করুণ পরিণতির সঙ্গে। ইমরান খানের দর্পণ তাকে বলেছে তিনি সাধারণ কেউ নন, তিনি শহীদদের মাঝে এক শহীদ, মিথ্যার বিরুদ্ধে চিরন্তন লড়াইয়ে তিনি সত্যের পক্ষে এক যোদ্ধা। পরিত্রাণকারী হয়তো হতাশায় ভোগেন, কিন্তু অন্যদের রক্ষার আকাক্সক্ষা রয়েই যায়। একটি পুরনো সুফি প্রবাদ আছে : “দশজন দরবেশ এক কম্বলের নিচে ঘুমোতে পারেন, কিন্তু কোনো রাজ্যই দুজন বাদশাহর জন্য যথেষ্ট বড় নয়। ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তানে মাত্র একজন কার্যকর বাদশাহ ছিলেন। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কি দেশটির অতীতের মাঝে নিহিত? ঘুরে ফিরে প্রশ্নটি আবার এসেছে।
লেখক : ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।