শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদকের সন্ধানে আওয়ামী লীগ

সৈয়দ বোরহান কবীর

সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদকের সন্ধানে আওয়ামী লীগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। বিচক্ষণতায় অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি বহু আগেই। তাঁর প্রতিটি কথাই মূল্যবান এবং এসবের দার্শনিক ভিত্তি আছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শক্তিশালী বিরোধী দল আমরা পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘অপজিশন বলতে দুটো পার্টি আছে। দুটোই মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে গড়া। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো রোগাক্রান্ত, মৃতপ্রায়। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। দলটির আদর্শ-লক্ষ্য নিয়ে নেতা-কর্মীরাই বিভ্রান্তিতে। সংসদের বাইরে এ দলটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ দলটি নেতৃত্বহীন ও পথহারা। অস্তিত্বের সংকটে থাকা দলটি কখন কী করছে তা নিজেরাই ঠিকঠাকমতো জানে না। একবার তারা বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনে যাবে না। আবার জাতীয় সরকারের দাবিও তুলছে। দলটির মহাসচিব কদিন আগে বললেন, নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ভালো কথা, জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীই হতে পারবেন না। সরকারের কৃপায় জামিন নিয়ে ‘ফিরোজা’য় দিন কাটাচ্ছেন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা লন্ডনে পলাতক। এই নেতাও একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত। অর্থ পাচার মামলায় তাঁর সাত বছরের সাজা হয়েছে। এ অবস্থায় তিনিও নির্বাচনের অযোগ্য। তিনি দেশে এসে নির্বাচন করবেন এমন সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে নেই। তাই তাঁরও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ আপাতত পূরণ হচ্ছে না। ফলে তর্কের খাতিরে আমরা যদি ধরেও নিই আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হবে তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানেন না বিএনপি নেতারাও। বিএনপি এখন খুব ভালো করেই জানে, এ অবস্থায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া একই। তাই তারা নির্বাচন নয়, একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চান। দেশে একটা অস্বাভাবিক ও ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চান। এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরির জন্য সুশীলসমাজকে আগ্রহী করে তুলতে হয়। পশ্চিমা দেশগুলোয় নানা রকম নালিশ করতে হয়। বিএনপি সে কাজটি করছে। দেশে-বিদেশে নানারকম অভিযোগের বস্তা নিয়ে তারা ঘুরছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অভিযোগ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক দোকান খুলে দিনরাত অপপ্রচার করছে। সেদিন দুর্নীতি দমন কমিশনে গিয়েও নালিশ করে এলো। বিএনপির টার্গেট হলো যেনতেন প্রকারে একটা পরিস্থিতি তৈরি করা। এজন্য একদা চৈনিক বিএনপি মহাসচিব বাংলাদেশে চীনা বিপ্লবের খোয়াব দেখেন। আবার ভারতীয় হাইকমিশনের ইফতার পার্টিতে ধরনা দিয়ে তাদের আনুকূল্য চান। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষমতায় যাওয়া। সরকার গঠন করে দলের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়ন করা। গণতন্ত্রে ক্ষমতায় যাওয়ার একটিই পথ- নির্বাচন। নির্বাচনে জয়ী হওয়া ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো বৈধ পথ নেই। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি নির্বাচনমুখী নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি কয়েকটি উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করল। তারপর হঠাৎ বলল, ‘খেলব না’। এরপর সব নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল। যারা স্বউদ্যোগে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করল তাদের ব্যাপারে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত নিল দলটি। জয়ীদের দলেই রাখা হলো। পরাজিতদের বহিষ্কার। ইদানীং আবার দলের জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কারের নেশায় মত্ত দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। একটি রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। কিন্তু বিএনপিতে গঠনতন্ত্রকে থোড়াই কেয়ার করা হয়। সকালে মনে হলো ওই নেতা বেআদব। ব্যস, দুপুরেই তাকে পত্রপাঠ বিদায়। কোনো কারণ দর্শানো নোটিস নেই, দলীয় ফোরামে আলোচনা নেই। বিএনপিতে একজন রাজা, বাকি সব ক্রীতদাস। বিএনপিকে এখন আর রাজনৈতিক দল বলা যায় কি না এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাধিতে আক্রান্ত। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করল, তখন আমি বাম জাগরণের ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছিলাম। বিশেষ করে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের পর আমার মধ্যে আশার প্রদীপ আরও প্রজ্বালিত হয়েছিল। কিন্তু একদল বাম এখন ক্ষমতার হালুয়া-রুটির অপেক্ষায় বুভুক্ষু। অন্যরা বিভ্রান্তির গোলকধাঁধায় ঘুরছে। বাংলাদেশে বিরোধী দল হিসেবে বামদের উত্থানের আর কোনো সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থি উগ্র মৌলবাদীদের এক নীরব উত্থান হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বিরোধী দলশূন্য।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাধারণ হিসাব হলো, বিরোধী দল যদি দুর্বল হয় তাহলে ক্ষমতাসীন দলও দুর্বল হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়। খেলার মাঠে যেমন দুই পক্ষ লাগে। রাজনীতিও প্রতিপক্ষহীন হয় না। ২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ প্রায় প্রতিপক্ষহীন। আর এ কারণে রাজনীতিবিদরা এখন সাইডলাইনে। আমলাতন্ত্র জাঁকিয়ে বসেছে সর্বত্র। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে সচিব। তৃণমূল থেকে সচিবালয়। সর্বত্র গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন রাজনীতিবিদরা। বিরোধী রাজনীতি না থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জবাবদিহিহীন। প্রতিপক্ষ না থাকায় আওয়ামী লীগই এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। ছাত্রলীগ দুই পক্ষ হয়ে মারামারি করছে। আওয়ামী লীগের এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হত্যার জন্য সন্ত্রাসী ভাড়া করছে। সর্বত্র আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছে অথবা যুদ্ধ করছে। দলের চেন অব কমান্ড রীতিমতো ভেঙে গেছে। ছোট পাতিনেতা দলের সিনিয়র নেতাদের গালাগালি করছেন। কমিটি বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ এখন প্রকাশ্য আলোচনা হয়। বিরোধী দল দুর্বল, কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কি শক্তিশালী? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। আওয়ামী লীগের আশার জায়গা একটাই- শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আছেন বলেই আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। চতুর্থ মেয়াদেও ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখে। একটু নির্মোহভাবে আমরা যদি আওয়ামী লীগকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব আওয়ামী লীগও ব্যাধিতে আক্রান্ত। শেখ হাসিনাকে আলাদা করলে আওয়ামী লীগ বিবর্ণ পথহারা নৌকার মতোই। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলে এখন ক্ষয় ধরেছে। অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিডরা ক্রমে তৃণমূল দখল করে নিয়েছে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা এখন রাজনীতিতে নন, ব্যবসা, টেন্ডার ও নানা বাণিজ্যে মনোযোগী। ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট মালিকরা এমপি হওয়ার দৌড়ে রাজনীতিবিদদের পেছনে ফেলে দিয়েছেন। ঐক্য-আদর্শের প্রতীক হয়ে আছেন একা শেখ হাসিনা। একটা সময় আওয়ামী লীগে অনেক নেতা ছিলেন। বিরোধী দলেও আওয়ামী লীগ ছিল অসাধারণ। জোহরা তাজউদ্দীন, আবদুস সামাদ আজাদ, বেগম সাজেদা চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম। এখন আওয়ামী লীগে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখতে পারে এমন নেতা কজন আছেন? স্যুট-প্যান্ট পরে থাকলে যেমন শরীরের ক্ষত দেখা যায় না, তেমনি ক্ষমতার মোড়কে আওয়ামী লীগের রক্তক্ষরণ ঢেকে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী, জনবান্ধব, জনগণের জন্য একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকা জরুরি। আওয়ামী লীগই এ দেশের গরিব প্রান্তিক মানুষের একমাত্র দল। আওয়ামী লীগই কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতি, মুটে মজুরের দল। তাই আওয়ামী লীগকে তার আদর্শে অটল রাখাটা এ দেশের মেহনতি মানুষের স্বার্থের জন্যই প্রয়োজন। আওয়ামী লীগে আজ এত সুবিধাবাদী, দুর্বৃত্ত, সুযোগসন্ধানী, মতলববাজরা কিলবিল করছে যে যে কোনো সময় যেন এরাই আওয়ামী লীগ দখল করে নেয়। এরা পারছে না শুধু শেখ হাসিনার জন্যই। এজন্য আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী থাকতেই হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা তুচ্ছজ্ঞান করতেন দলের জন্য, জনগণের জন্য। আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই বাঙালির মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এজন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সরকার এবং দল একাকার হয়ে গেলে স্বার্থান্বেষীরা বন্যার পানির মতো দলে ঢুকে যায় নানা রকম চাওয়া-পাওয়ার আশায়। শেখ হাসিনাও তা ভালোই বোঝেন। এজন্যই গত কয়েকটি কাউন্সিলে তিনি দল ও সরকারকে আলাদা করছেন। দলের নেতাদের সরকার থেকে দূরে রাখার সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিচ্চেন। অবশ্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাজনৈতিক দলেও এ সংস্কৃতি চালু হয়েছে। সরকার এবং দল আলাদা না করলে শেষ পর্যন্ত দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আদর্শচ্যুত হয়। ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু দলের সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা সরকারের কেউ নন। দলের সাধারণ সম্পাদক বি এল সান্তোষ। ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সান্তোষ সরকারের কেউ নন। জো বাইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনয়নে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান তিনি নন। এ দলের চেয়ারম্যান জেমি হ্যারিসন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কনজারভেটিভ পার্টির সংসদীয় দলের নেতা। তিনি পার্টির প্রধান নন। কনজারভেটিভ পার্টির কো-চেয়ার হলেন বেন এলিয়ট ও অলিভার ভাওডেন। ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগবাটোয়ারায় দল যেন বিপদগ্রস্ত না হয় সেজন্যই এ ভারসাম্য। এটা এক ধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালান্স। শেখ হাসিনাও সে পথেই হাঁটছেন। দলের জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ স্বীকারের আদর্শ তাঁর সামনে।

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তখন দল এবং সরকার আলাদা করার সুযোগ পাননি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর গত ১৩ বছরে আস্তে আস্তে দলকে আলাদা করছেন এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দলের নেতা ও মন্ত্রী এমন সংখ্যা তিন- চার জনে নামিয়ে এনেছেন। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা কেবল আওয়ামী লীগের প্রধান নন, দেশের ঐক্যের প্রতীক। তিনিই দল, সরকার এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ। দল ও সরকার প্রধান তাঁর থাকাটাই যৌক্তিক। কিন্তু অন্যদের জন্য বিষয়টা তেমন না। টানা তিন বছর আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যাঁরা দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে নিয়েছেন তাঁদের খুব কমজনই সমান্তরালভাবে দুটি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পেরেছেন। এটা তাঁদের অযোগ্যতা নয়, সীমাবদ্ধতা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল, বি এম মোজাম্মেলকে মনোনয়ন দেননি। ২০১৯ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা নানক-আবদুর রহমানকে প্রেসিডিয়ামে নিয়ে আসেন। যুগ্মসম্পাদক করেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। এস এম কামালকে করেন সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হলেও মাহবুব-উল আলম হানিফ আর মির্জা আজমকে মন্ত্রী করা হয়নি। গত তিন বছরে এ কজনই শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন। এঁরাই সংগঠনটি সচল রেখেছেন। এঁদের মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এঁদের পাঁচজন সম্মিলিত এবং সার্বক্ষণিকভাবে দলকে আগলে রেখেছেন। আওয়ামী লীগে এঁদের নাম হয়েছে ‘পঞ্চপা-ব’। এঁরা যেহেতু সরকারে নেই, তাই দল পরিচালনায় দলীয় প্রধানের নির্দেশে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন। তৃণমূলেরও আস্থা অর্জন করেছেন এই নেতারা।

২০১৮ সালে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু দলের স্বার্থেই বিশ্বস্তদের যে তিনি মনোনয়ন দেননি আজ তা স্পষ্ট। দলের জন্য ওই নেতাদের ত্যাগ যে কত জরুরি ছিল তা বুঝতে পন্ডিত হওয়ার দরকার নেই। শেখ হাসিনার ওই সিদ্ধান্ত আরেকটি বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আওয়ামী লীগকে। তা হলো, আওয়ামী লীগে একজন ফুলটাইম সাধারণ সম্পাদক প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতা এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েই আওয়ামী লীগকে জনগণের হৃদয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ পদটি হলো দলের প্রধানের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সেতুবন্ধ। আওয়ামী লীগ এখন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন দেশের। তাই দলের জন্য একজন সার্বক্ষণিক ব্যক্তি দরকার। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন, ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হবে। সারা দেশে এখন সম্মেলন হচ্ছে। কাউন্সিলের পরই আওয়ামী লীগকে সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনী যুদ্ধে নামতে হবে। তাই নানা রোগের উপসর্গ থাকা দলটি শক্তিশালী এবং সুস্থ করে তুলতেই হবে। শুরুতে বলেছিলাম, শেখ হাসিনার প্রতিটি কথার একটি দার্শনিক মর্মার্থ আছে। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার আক্ষেপ বলে প্রধানমন্ত্রী কি আওয়ামী লীগকে ব্যাধিমুক্ত করার ইঙ্গিত দিলেন? আওয়ামী লীগ কি তাহলে আগামী কাউন্সিলে এমন একজন সাধারণ সম্পাদক পাচ্ছেন, যিনি সার্বক্ষণিকভাবে শুধু সংগঠন দেখবেন। কারণ শেখ হাসিনাই সবচেয়ে ভালো জানেন আওয়ামী লীগের শক্তি এবং দুর্বলতা।

 

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

Email : [email protected]

সর্বশেষ খবর