সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে পিতা-মাতার কাছে শ্রেষ্ঠ আমানত। পৃথিবীতে নয়নাভিরাম চিত্তাকর্ষক যত বস্তু আছে সন্তান সেসবের অন্যতম। সন্তানের সান্নিধ্য হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। সন্তানের নিষ্পাপ চাহনি আর একচিলতে হাসি মুহূর্তেই সারা দিনের দুঃখকষ্ট আর ক্লান্তি দূর করে দেয়। আপাদমস্তক এক অপার্থিব স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। সন্তানের পবিত্র চেহারা দর্শনে হৃদয়তল্লাটে আনন্দের এক অনির্বচনীয় অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে।
আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠ আমানত সন্তানের জন্মের পর পিতা-মাতার ওপর বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সে দায়িত্বসমূহের প্রধান একটি দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানের সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা। সুন্দর অর্থপূর্ণ ও রুচিসম্পন্ন নামকরণের বিষয়ে ইসলামে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, মানুষের জীবনে নামের বিশাল প্রভাব। কাজেই সন্তানের জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক মা-বাবার নৈতিক দায়িত্ব। যাতে এ নামের প্রভাবে পরবর্তী জীবনে সন্তানের স্বভাবচরিত্রে শুচি-শুভ্রতা ফুটে ওঠে।
ব্যক্তির নাম তার স্বভাবচরিত্রের ওপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে হাদিসে চমৎকার নির্দেশনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শায়খ আবু বকর আবু যায়েদ (রহ.) বলেন, ঘটনাক্রমে দেখা যায়, ব্যক্তির নামের সঙ্গে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহতায়ালার হেকমতের দাবি। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে, তার চরিত্রে গাম্ভীর্য পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে। ভালো নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভালো হয়ে থাকে।
মন্দ নামের প্রভাব মানুষের চরিত্র ও আচরণকে প্রভাবিত করে। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কেউ এলে তার নাম জিজ্ঞেস করতেন। নাম পছন্দ হলে নবী করিম (সা.) খুশি হতেন, অপছন্দ-অর্থহীন হলে তা পরিবর্তন করে অর্থপূর্ণ নাম রেখে দিতেন। পবিত্র কোরআন-হাদিসে অর্থবোধক ভালো নাম রাখার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সন্তানদের তার পিতার নামেই ডাকো, সেটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সংগত।’ সুরা আল আহজাব : ৫।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা সাহাবারা হজরত রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর! পিতার হক সম্পর্কে তো আমরা আপনার কাছ থেকে জানলাম। পিতার ওপর সন্তানের হক কী এ ব্যাপারে আমাদের জানান। উত্তরে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, পিতা সন্তানের অর্থপূর্ণ ভালো নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দেবে।-সুনানে বায়হাকি।
হজরত আবু ওহাব জুশানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখবে। তবে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।’ সুনানে আবু দাউদ।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন সন্তানের সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ প্রদান করে।’ সুনানে বায়হাকি।
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের ডাকা হবে তোমাদের পিতার নামে। অতএব তোমাদের নামগুলো অর্থবোধক রাখ।’ সুনানে আবু দাউদ।
বিখ্যাত দার্শনিক ও ইসলামি স্কলার ইবনে কাইয়্যুম জাওযি (রহ.) তাঁর কিতাব ‘তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ’-এ লিখেছেন, ‘নামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই মানুষের ভালো-মন্দ আচরণ, চরিত্র ও কর্মধারা প্রভাবিত হয়। মন্দ নামেরও মন্দ প্রভাব রয়েছে।
আমাদের সমাজে একশ্রেণির মানুষ সন্তানের নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, অবহেলা এবং যাচ্ছেতাই মানসিকতার পরিচয় দেন। মনে রাখবেন, সন্তান আপনার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। এর যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে আমানতের খেয়ানত করলে আল্লাহর কাছে কঠোর জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ সবার বোধোদয় করুন।
♦ লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী, গাজীপুর