মব জাস্টিস বা মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত হয়ে এক বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে একটা জিজ্ঞাসা সামনে এসেছে যে মব কী আক্রোশ নাকি জনরোষ? মব এখন আর হেনস্তা পর্যায়ে নেই, রীতিমতো হত্যাকাণ্ডে রূপ নিয়েছে। সর্বশেষ কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়াইবাড়ী গ্রামে মব সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় মব তৈরি করে থানা আক্রমণ করা হয়েছে। আলামত ভালো নয়। মব কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না। সম্প্রতি একটি মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার উত্তরার বাসভবনে চড়াও হয়ে তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে মব। সাংবিধানিক পদে দায়িত্বপালনকারী কোনো বিশিষ্টজনকে কী মব এ ধরনের শাস্তি দিতে পারে, তিনি যতই বিতর্কিত হোন না কেন। মব সৃষ্টি করে যা করা হচ্ছে তা রীতিমতো শুধু ফৌজদারি আইনে অপরাধই নয়, মানবাধিকার পরিপন্থি। আইন নিজ হাতে তুলে নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে শাস্তি প্রদানের এই বিপজ্জনক প্রবণতা ক্রমেই রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠছে। মানুষের প্রাণ সংহারের চটজলদি এই প্রক্রিয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল। যারা পর্দার অন্তরালে থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মব তৈরি করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, আইন নিজ হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে লাঞ্ছনা-হেনস্তা করছে এবং জনগণের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংস করছে; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মব তৈরি করে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বেআইনি কর্মকাণ্ড কিংবা নিপীড়নে হত্যা বন্ধ করতে না পারলে জনগণের মনে এই ধারণা সৃষ্টি হবে যে মব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী। মব অরাজকতা তোয়াক্কা করে না সরকারের কোনো হুঁশিয়ারি। অতএব আর কালক্ষেপণ নয়, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে মব তৈরি করে বিচারবহির্ভূত শাস্তি প্রদান। মব ও মবকারীরা যদি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনে যায়, তাহলে আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাসে চিড় ধরবে, যা জাতির জন্য কখনোই কল্যাণকর নয়।