কম্বোডিয়ার রাজা প্রিন্স সিহানুককে উৎখাতকারী আমেরিকা সমর্থিত সরকারকে মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে রাজি ছিল না। এমনিতেই ভিয়েতনামের সীমান্তে আমেরিকার নিয়মিত বোমাবাজিতে কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী মানুষ নিয়মিত হতাহত হচ্ছিল। ফলে ১৯৭৫ সালে যখন খেমার রুজরা বিপ্লবের মাধ্যমে লন নলের সরকার উৎখাত করে তখন নমপেন শহরের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে পল পটের বাহিনীর বিপ্লবীদের অভিবাদন জানায় এবং স্লোগান দিতে থাকে। এ ভাগ্যহত মানুষেরা কখনো হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের জীবনে কি বিভীষিকা নেমে আসছে। ক্ষমতা দখলের ৪ ঘণ্টার মধ্যে বড় ভাইয়ের জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা খেলা শুরু করে দিল। যেই মানুষেরা তাদের রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিল, যেই মানুষেরা মার্কিন আগ্রাসনের হাত থেকে মুক্তি চাচ্ছিল খেমার রুজরা সেই মানুষদের অশুদ্ধ, মার্কিনপ্রেমী, পাতিবুর্জোয়া, শহুরে বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের গৃহত্যাগে বাধ্য করে। পল পট ছিলেন মার্কসবাদী। তবে নিজেকে মাওবাদী বলে দাবি করতেন। পল পটের খামখেয়ালি নীতি আর ধ্যানধারণার কারণে ভিয়েতনাম ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পল পট ও তাঁর দলের প্রতি বিরাগভাজন হয়, সরিয়ে নেয় সহযোগিতার হাত। তাই বলা যায়, পল পট যে মার্কসবাদের কথা বলছেন তা কি সহি মার্কসবাদ অর্থাৎ মার্কসের সহি ইন্টারপ্রিটেশন- সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এবার দেখা যাক রাজতন্ত্র ডিমোলিশ করে পল পট যে নতুন কমিউনিস্ট সরকার গঠন করলেন তার একেবারে শুরুর দিকে গৃহীত কিছু নীতি- ১. ধনী-গরিবমুক্ত শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের জন্য প্রথম দিনই সব অর্থ (সড়হবু) বাতিল ঘোষণা করা হয়। ২. সব প্রাইভেট ও পাবলিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কারণ এ স্কুলগুলো পশ্চিমা শিক্ষার আঁতুড়ঘর। এ স্কুলগুলোকে পরিণত করা হয় টর্চার সেলে। ৩. সব বাজার, মার্কেট, কাপড়ের দোকান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ৪. প্রাইভেট পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রাইভেট গাড়িগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫. ব্যক্তিসম্পত্তি অর্জন নিষিদ্ধ করা হয়। অর্জিত আগের সম্পদ সরকার বাজেয়াপ্ত করে।
জাফর খান।