শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবেশ দূষণ

আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসতে হবে

বাংলাদেশকে বলা হয় নদ-নদী-খাল-বিলের দেশ। সবুজ গাছপালায় শোভিত এ দেশের প্রকৃতি। দূষণ রোধে নদ-নদী জলাশয়ের কোনো তুলনা নেই। বায়ু থেকে গাছপালাও শুষে নেয় কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিষ। এটি মুদ্রার এক পিঠ যেটি স্বস্তির হলেও অন্য পিঠটি অস্বস্তির শুধু নয়, লজ্জারও। আমাদেরই ভুলে ও সীমাহীন গাফিলতিতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে দেশের মাটি, পানি, বায়ু। শব্দ ও বায়ু দূষণে পৃথিবীর সব শহরকে ছাড়িয়েছে রাজধানী ঢাকা। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, মানববর্জ্য, অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্যে সয়লাব নদ-নদী-খাল-বিল। এ দূষণের নির্মম শিকার দেশের মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ দূষণের ফলে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, বন্ধ্যত্ব, বধিরতা, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, হাঁপানি, টাইফয়েডসহ নানা জটিল রোগ। কমছে মানুষের কর্মক্ষমতা। মে মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষাক্ত বায়ু ও বর্জ্য দূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। দূষণজনিত মৃত্যুতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ, যেখানে প্রথম অবস্থানে ভারত। দূষণের কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বায়ুদূষণে সর্বাধিক ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়। দূষণজনিত মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ দূষিত পানি। প্রতি বছর পানিদূষণে ৩০ হাজার ৮৭৪ জনের প্রাণহানি হয়। তৃতীয়ত, সিসাদূষণের কারণে দেশে ৩০ হাজার ৭৭৭ জনের মৃত্যু হয়। পরিবেশদূষণের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো মহানগরীতে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশের মতো মিঠাপানির প্রাকৃতিক উৎস দুনিয়ার কোনো দেশে নেই। কিন্তু সে উৎসগুলো আমরা প্রতিনিয়ত গলা টিপে হত্যা করছি। দেশ থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে নদ-নদী-খাল-বিল। জলাশয় ভরাট করে অস্তিত্ব বিপন্ন করাই নয়, দূষণের মাধ্যমে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছি। ত্রুটিযুক্ত যানবাহনের চলাচলে বাড়ছে বায়ুদূষণ। অস্তিত্বের স্বার্থে এ সর্বনাশপ্রবণতা সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। নিজেদের স্বার্থে পরিবেশদূষণের আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর