সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নদী দূষণে আসে খোদার গজব

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নদী দূষণে আসে খোদার গজব

দুনিয়ার প্রতিটি সভ্যতাই গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। সিন্ধুনদ, মিসরের নীলনদ এবং ইরাকের ফোরাত নদের তীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় সভ্যতা। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। একসময় নদীই ছিল বাংলাদেশের প্রাণ। বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করেই তো সৃষ্টি হয়েছে আজকের ঢাকা। শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের যত বড় শহর-বন্দর ও নগর দেখতে পাই- তার সবগুলো এই নদীরই সন্তান। নদী বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। এদেশের জলবায়ুর ওপর নদ-নদীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এসব নদ-নদী মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। এমনকি ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রেও এই নদী পথ ব্যবহার করেই প্রাচীন যুগের ইসলাম প্রচারকরা বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেছেন। এক কথায় এদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রচনাসহ শিল্পোন্নয়ন, বাণিজ্যের উন্নয়ন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান এবং কৃষির উন্নয়নে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোরআনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ মহাগ্রন্থে নদীর কথা উল্লেখ হয়েছে বারবার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই কাজে লাগিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ খেতে পার, তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলংকার। তুমি তাতে জলযানগুলোকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর। আর তিনি পৃথিবীর ওপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদের নিয়ে হেলেদুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।’ (সুরা আন নাহল, আয়াত ১৪-১৬।) এখানে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি কয়েকটি নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। সে নিয়ামতের অন্যতম হলো- পানি ও প্রবহমান নদী। শুধু এখানেই নয়, কোরআনে কারিমের আরও বহু জায়গায় আল্লাহতায়ালা নদী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নদী প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সুরা নমলের ৬১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বসবাস উপযোগী এবং এর মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদীনালা।’ সুরা যুমারের ২১ নম্বর আয়াতে আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি কি দেখ না আল্লাহপাক আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর ভূমিতে স্রোতরূপে তা প্রবাহিত করেন এবং তা দিয়ে বিচিত্র বর্ণের ফসল উৎপাদন করেন।’ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনে এবং ফল, ফসল ও জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরিতে যে উদ্ভিদ বা গাছপালা, লতাপাতা প্রয়োজন, তার জন্য চাই নদী ও পানি। কোরআনের বাণী, ‘তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, যিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তার বিধানে উহা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদীসমূহকে।’ (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৩২)।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীর সাহেব, আউলিয়ানগর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর