রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নেতাদের ঘুমে অসহায় ইন্দিরা ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

নঈম নিজাম

নেতাদের ঘুমে অসহায় ইন্দিরা ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

বিশেষ ক্ষমতা আইন জারির আগে দিল্লিতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ইন্দিরা গান্ধী। বৈজয়ন্তী মালার মতো শীর্ষ অভিনেত্রীও এ অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করেন। পিনপতন নীরবতায় সবাই অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন। ইন্দিরার সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছিলেন। ইন্দিরার একজন উপদেষ্টা খেয়াল করলেন, চোখ ধাঁধানো নৃত্য চলাকালে মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য, দলের কিছু নেতা ঘুমিয়ে পড়েছেন। কারও কারও নাক ডাকছে। ক্লান্তি ভর করেছে তাঁদের ওপর। সেই উপদেষ্টা পরের দিন টিভি ফুটেজ এনে দেখালেন ইন্দিরাকে। বিস্মিত হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বললেন, এমন অনুষ্ঠানে কী করে ওঁরা ঘুমায়? আমাদের দেশে সংসদ অধিবেশন চলাকালে ঘুমিয়ে পড়া পুরনো রেওয়াজ। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান চলাকালে, তিনি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়র সময় দর্শক সারি কিংবা মঞ্চে মন্ত্রিসভা কিংবা দলের নেতাদের কেউ কি ঘুমিয়ে পড়েন? ইন্দিরা যুগে মোবাইল ফোন ছিল না। এ যুগে এমন ছবি মাঝেমধ্যে ভাইরাল হতে দেখি। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলন হবে। প্রস্তুতিও চলছে দলের ভিতরে-বাইরে। টানটান উত্তেজনা নেতাদের মধ্যেও। নির্বাচনের আগে সম্মেলন ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকাটাই স্বাভাবিক। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও মানুষের ভিতরে আগ্রহ দেখছি। গত সপ্তাহে কলকাতা গিয়েছিলাম। সাংবাদিক বন্ধু জয়ন্ত রায়চৌধুরী জানতে চাইলেন কী হবে আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে? জয়ন্ত দিল্লির বাঙালি। সারা জীবন কাজ করেছেন দিল্লিতে। টেলিগ্রাফের দিল্লির সম্পাদক ছিলেন। এখন পিটিআইর ইস্টার্ন জোনের প্রধান। কলকাতায় পোস্টিং নিয়ে এসেছেন। পেশাদার সাংবাদিক। ভারতের রাজনীতির অলিগলিতে বিচরণ। তাঁর পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের। দিল্লি গেলে জয়ন্তের সঙ্গে এক বেলা আড্ডা না দিয়ে ফেরা হতো না। তাঁর চিত্তরঞ্জন পার্কের বাড়িতেও যেতাম। এবার কলকাতায় দেখা হলো। জয়ন্ত জানতে চাইলেন কী হচ্ছে আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে? কেমন নেতৃত্ব নিয়ে আসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার টিমে?

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে মজার কিছু অভিজ্ঞতা আছে আমার। ১৯৯৩ সালের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। কর্মীরা বিশ্বাস করতেন এ তিনজনের একজন হবেন। তাঁরা বাদ পড়লে হবেন আবদুল জলিল। কাউন্সিলের আগে থেকে আমু-তোফায়েল সমর্থকদের একটা প্রতিযোগিতা ছিল। আবদুর রাজ্জাক বাকশাল বিলুপ্ত করে আবার দলে ফিরে আসেন। তিনিও ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে। তখন এত মিডিয়া ছিল না। কাউন্সিল নিয়ে মোটামুটি সব কাগজের নিউজ ছিল একই ধারার। ভোরের কাগজের রাজনৈতিক বিটের রিপোর্টার ছিলাম। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে সারা দেশ সফরে যেতাম। পার্লামেন্ট ও আওয়ামী লীগের সব খবর সংগ্রহ করতাম। কাউন্সিলের দুই দিন আগে ২৯ মিন্টো রোডে বিরোধী দলের নেতার বাড়িতে বসে আছি। নেত্রী বের হয়ে গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে সাহস করে প্রশ্ন করেছিলাম, কী করবেন এই সম্মেলনে? কেমন নেতৃত্ব উপহার দেবেন? তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘সাংবাদিকরা তো লিখেই যাচ্ছে। তবে সাংবাদিকরা যা বলে আমি তা করি না।’ নেত্রীর এ জবাবে মনে সংশয় তৈরি হলো। মনে হলো অন্য কেউ আসছেন নেতৃত্বে। বিষয়টি শেয়ার করলাম সহকর্মী বন্ধু সৈয়দ বোরহান কবীরের সঙ্গে। বোরহান আইনের ছাত্র। যুক্তি দিয়ে কথা বলেন, লেখেন। বোরহান বললেন, আমু-তোফায়েলের বাইরে গেলে রাজ্জাক ভাই আসতে পারেন। আবদুল জলিলও চমক হতে পারেন। তাঁকে বললাম, এ চারজনের বাইরে আরও সিনিয়র কাউকে চমক হিসেবে নিয়ে আসতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। বোরহান বললেন, লিখে ফেলো। লিখলাম, জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। সম্মেলনস্থলে ভোরের কাগজের রিপোর্ট নিয়ে সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। বরগুনার একজন নেতা আমাকে বললেন, আমু ভাই হচ্ছেন। আপনি জিল্লুর রহমান লিখলেন কেন? আমু ভাই তো আপনাকে পছন্দ করেন। বোরহান তাকালেন আমার দিকে। বললেন, ঠিক আছে তো। ভয়ে ভয়ে বললাম, আশা করি বিপদে পড়ব না। ধারণা থেকে মনে হচ্ছে নেত্রী চমক দেবেন।

পত্রিকায় লিখে বিপদে পড়লাম না। জিল্লুর রহমানই সাধারণ সম্পাদক হলেন। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় দেখছি, রাজনীতি ও দেশ পরিচালনায় এক ধাপ এগিয়ে থাকেন শেখ হাসিনা। অন্যরা যা ভাবেন পরে তিনি তা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন। বাস্তবায়ন করেন পরে। এ কারণে শত ঝড় মোকাবিলা করে তিনি টিকে আছেন। দেশ ও দল পরিচালনায় তাঁর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ আর কেউ নেই এখন বিশ্বে। দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব ও ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন। বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেন ও দেন। অনেকে বলেন, নেত্রী কেন এ কথা বলছেন, কেন এ কাজ করছেন। কাল দেখি তিনি সঠিক ছিলেন। দূরদর্শিতায় তিনি সময়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করার সময়ও আর কোনো বিকল্প ছিল না। আবার আশরাফকে দুই দফা সাধারণ সম্পাদক রাখার পর নিয়ে আসেন ওবায়দুল কাদেরকে। তখন আমরা বাংলাদেশ প্রতিদিনে আগাম লিখেছিলাম ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের ভালোমন্দে দুই টার্ম শেষ করলেন। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। এ দলে বঙ্গবন্ধুও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ও গণমানুষের অধিকারের কথা বলে বঙ্গবন্ধু এ দলের একক নেতা হিসেবে বেরিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ছিল দলটির সোনালি অধ্যায়। এ দুই দশকে বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছেন একদল তারকা রাজনীতিবিদ। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ছিল জাসদ তৈরি। সেরা ছাত্রলীগ কর্মীরা একটা মিথ্যা স্বপ্নে বিভ্রান্ত হয়ে যোগ দিয়েছিলেন জাসদে। যার নিষ্ঠুর খেসারত সবাইকে দিতে হয়েছিল। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আরেকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠনে। বুঝে না বুঝে শেখ হাসিনাকে ছেড়ে শিল্প-সংস্কৃতির উজ্জ্বল তরুণরা যোগ দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিপ্লবের ব্যর্থ স্বপ্নে। শেখ হাসিনা ছাড়া কিছু হবে না বুঝতে তাদের লেগেছিল ১০ বছর। তারপর ঘরের ছেলেরা বাকশাল বিলুপ্ত করে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগে। ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

সৃষ্টির পর থেকে আওয়ামী লীগ বারবার দুঃসময়ে পড়েছিল। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল মানুষের ভালোবাসা নিয়ে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদান। সে পথ তৈরি করতে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের বড় সময়টা কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। পাকিস্তান আমলটা রাজপথেই থাকতে হতো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। এ দলটির সাফল্য আছে, ব্যর্থতাও কম নয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে না পারা। ১৫ আগস্ট জান বাঁচাতে জাতীয় নেতাদের ঘরে ঢুকে পড়া। দ্বিতীয় ব্যর্থতা শেখ হাসিনাকে ওয়ান-ইলেভেনে কারাগারে নেওয়ার পর নেতাদের চুপসে যাওয়া। সংকট ষাটের দশকেও ছিল। ছয় দফা ঘোষণা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, বঙ্গবন্ধুর কারাগারে অবস্থান দলে শূন্যতার তৈরি হয়। শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতনে আওয়ামী লীগ অফিসে নেতাদের যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সে সময় ছাত্রলীগ বলিষ্ঠ ভূমিকায় বেরিয়ে আসে। দলের অফিসে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন আমেনা বেগম, মিজানুর রহমান চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবারও দল গোছাতে এই মিজান চৌধুরীর ভূমিকা ছিল। পরে অভ্যন্তরীণ বিরোধে সম্মেলনে ষড়যন্ত্রে পড়ে তিনি দল ছাড়েন। তৈরি করেন ‘আওয়ামী লীগ (মিজান)’। ’৮১ সালের পর আওয়ামী লীগে ঝড়বাদল কম যায়নি। সবকিছু একাই সামলিয়েছেন একজন, তিনি শেখ হাসিনা। জীবন-মৃত্যুর তোয়াক্কা করেননি। লড়েছেন দলের ভিতরে-বাইরে। এখনো লড়ছেন নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায়। শেখ হাসিনা তারুণ্যের নেত্রী। সবকিছু সামাল দিতে পারেন। তার পরও এখন এই সময়ে তাঁর দরকার একজন ক্ষিপ্রগতির সাধারণ সম্পাদক এবং সারা দেশ সামলানোর মতো কর্মিবান্ধব একদল নেতার।

ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার কারণে দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীরা অচেনা হয়ে ওঠেন। তখন একদল নবাগতের আবির্ভাব ঘটে। নবাগত বহিরাগতরা মন্ত্রী-এমপিদের চাটুকারিতায় লিপ্ত হয়ে সুযোগ-সুবিধা নেয়। এতে অভিমানী হয়ে মূল আওয়ামী লীগাররা হারিয়ে যান। বৈধ ও অবৈধ পথে অর্থকড়ি কামাই করে নবাগতরা। আর বদনামটা যায় পুরনোদের ওপরে। একটু খারাপ সময় দেখলে নবাগতরা মধু খেয়ে কেটে পড়ে। দলের ভালোমন্দে তাদের কিছু যায় আসে না। ক্ষমতায় থাকলে সুবিধাভোগী চক্র তৈরি হয়। একজন প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কে প্রচলিত আছে- তিনি নিজের মন্ত্রণালয়ে কোনো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ঢুকতে দেন না। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের লুফে নেন। এতে দুই পক্ষের সুবিধা বেশি। জানাজানির ভয় থাকে না। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলে যায়। অনেকে নিজের এলাকায় বিএনপি-জামায়াত টেনেছেন। দলের লোকদের দূরে সরিয়েছেন। ক্ষমতা চিরস্থায়ী না। আজ আছে, কাল না-ও থাকতে পারে। চেয়ারটা সরে গেলে কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না। শেষ বিচারের দিন হিসাব দিয়ে যেতে হবে।

বেলা-অবেলায় টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। শতভাগ নেতা-কর্মীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নিয়ে শেখ হাসিনা সভাপতি হচ্ছেন। তিনি বেছে নেবেন নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় একজন শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদক। যিনি শেখ হাসিনাকে বোঝেন। নেতা-কর্মীদের পাশে থাকেন। সারা দেশের কর্মীদের জন্য দরজা খুলে রাখেন। দলের খারাপ সময়ে সাজেদা চৌধুরীর মতো নেত্রীর পাশে থেকে কাজ করবেন। আবদুর রাজ্জাকের মতো বলবেন, সকাল ৭টায় জিগাতলার বাসায় আসবি। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। তাঁদের বাড়ির মতো কর্মীর স্রোত থাকবে যার বাড়িতে। কর্মীদের তেমন সময় দিতেন না সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার পরও কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি। এই মানুষটি যেদিকে হাঁটতেন মানুষকে জয় করতেন। সততার নিষ্ঠার পাশাপাশি নেত্রীর প্রতি ছিল গভীর আনুগত্য। ক্যাপ্টেন (অব.) তাজ ভাইয়ের বাসায় এক রাতে তাঁকে বলেছিলাম, আশরাফ ভাই দলে সময় কম দেন কেন? জবাবে বলেছিলেন, ‘ক্ষমতার রাজনীতিতে বেশি সময় দিলে সমস্যা। বিরোধী দল আর ক্ষমতার রাজনীতির কৌশল ভিন্ন।’ আধ্যাত্মিক জবাব। তার পরও তিনি জানতেন কখন কী করতে হবে। হেফাজতের মতিঝিল অবরোধের মধ্যরাতে গর্জে উঠেছিলেন। জানিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে কঠোর ভাষায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান। এভাবে সবাই পারে না হুঁশিয়ারি দিতে।

ধারণা করছি এবার শেখ হাসিনা একজন শক্ত সাধারণ সম্পাদক বেছে নেবেন। যিনি দুঃসময় সামাল দিতে পারবেন, ঝুঁকি নেবেন। যার অতীত কাজের অভিজ্ঞতার ও আনুগত্যের। বুদ্ধিজীবী মার্কা সাধারণ সম্পাদক দিয়ে আগামী দিনের আওয়ামী লীগ চলবে না। দরকার নেত্রীর আস্থাভাজন, মাঠের কর্মীদের মনোভাব বুঝতে পারা নেতার। যিনি আবদুল জলিলের মতো মধ্যরাতেও কর্মীদের ফোন ধরবেন। আবুল হাসানের কবিতার ঝিনুকের মতো সবকিছু নীরবে সয়ে যাবেন। দক্ষতা নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে কর্মী সামলাবেন। জরুরি মুহূর্তে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেবেন। অতিকথন বাদ দিয়ে সময়মতো সৈয়দ আশরাফের মতো গর্জে উঠবেন। কাজ করবেন নেত্রীকে অবহিত করে। যার কোনো অহমিকা থাকবে না। জিল্লুর রহমানের মতো বিনয়ী হবেন। কর্মিবান্ধব হবেন। সামনের সময়টা কঠিন। এখন আওয়ামী লীগে দক্ষ সংগঠকের বিকল্প নেই। কর্মীদের বুঝতে হবে দলের সাধারণ সম্পাদককে। শুধু বুঝলে হবে না, তাদের ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে সুখে-দুঃখের সঙ্গী হতে হবে। আমলাভাবের নেতা দিয়ে মন্ত্রণালয় চলতে পারে, দল নয়। দল চালাতে আলাদা ক্যারিশমা ও ব্যক্তিত্ব লাগে। কমান্ড দিতে লাগে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, ক্ষিপ্রতা, সাহস। সংবাদ সম্মেলনে নেত্রীর বক্তৃতার সময় কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য চলার সময় ঘুমিয়ে পড়া নেতা দিয়ে আগামীর আওয়ামী লীগ চলবে না।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর