বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতিটি বিজয় আসে আল্লাহর রহমতে

মাওলানা আবু তালহা তারীফ

প্রতিটি বিজয় আসে আল্লাহর রহমতে

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। প্রতিটি বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আমাদের জন্য বিজয়ের এ মাস আল্লাহর রহমতের মাস। ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা গণহত্যা কিংবা নারীর সম্ভ্রম হরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। বর্তমান ও পুরনো বছরের শোষণ-শাসন অপমানের শিকার বাঙালি জনগণ তখন ভিজা মাটির সোঁদা গন্ধ হৃদয়ে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিজেদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য। জানা-অজানা বহু মানুষ হারিয়ে গেছেন ফিরে না আসার দেশে। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে ঐতিহাসিক বিজয়।

বাংলার দেশপ্রেমিকরা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এবং যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন ও আমাদের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছেন। প্রত্যেক মানুষ তার ভূমিষ্ঠ স্থান এবং তার লালন-পালনের স্থানটিকে সহজাতভাবেই ভালোবাসে। কেননা জন্মভূমিকে ভালোবাসা একজন নাগরিকের নৈতিক ও ইমানি দায়িত্ব। তাছাড়া এটা রসুল (সা.)-এর আদর্শ। যারা এ বিজয় এনে দিয়েছেন তারা প্রাতঃস্মরণীয়। তাদের আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর মানুষের সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারে না, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্ন উত্তর থেকে সে মুক্তি পাবে’। তিরমিজি, আবুদাউদ।

এ বিজয় আমাদের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। কেননা ইসলাম পরাধীনতাকে পছন্দ করে না। আমরা যে নিয়ামত পেয়েছি এ জন্য নফল নামাজ আদায় করে দেশের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করতে পারি। রসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর আট রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাসবিহ পাঠ করে আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করাসহ দেশের জন্য এবং যারা রক্ত দিয়ে বিজয় এনেছেন তাদের জন্য প্রার্থনা করা দোষণীয় নয়। বিজয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয় বা সাহায্য আসবে তখন মানুষকে তুমি দেখবে তারা দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে। অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অবশ্যই মহান আল্লাহ তাওবা কবুলকারী’। সুরা আন নাসর-১-৩।

প্রিয় পাঠক, আসুন একাত্তরের মহান বিজয়ের এই মাসে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই দেশকে ভালোবাসব। আমরা দুর্নীতি, কালোবাজারিসহ দেশের ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ করব না এবং অন্যকে করতে দেব না। সর্বদা দেশের উন্নয়নের কথা ভেবে সঠিক কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। হে আল্লাহ আমাদের ও আমাদের দেশকে কবুল করুন। দেশের জন্য যে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছেন তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর