সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ধর্ষিতার মৃত্যু

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

ধর্ষিতা সানজিদা আক্তারকে শেষ পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিনা চিকিৎসায় চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে। আইনের ফাঁক গলিয়ে গণধর্ষণের হোতারা জামিনে মুক্তি পেয়ে সানজিদা ও তার পঙ্গু বাবাকে মামলা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি করে। যার পরিণতিতে সানজিদার কর্মস্থল মমিন টেক্সটাইলে যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ধর্ষিতা হওয়ার পর মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সানজিদা। তার বাবা হারিছুল হক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়। মা-ও ধর্ষকদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সানজিদা আক্তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করত নরসিংদীর সাটিরপাড়া ইউএমসি এলাকার শফি হাজির বাড়িতে। তারা তিন বোন মমিন টেক্সটাইলে শ্রমিকের কাজ করত। এরই মধ্যে সানজিদার ওপর চোখ পড়ে প্রতিবেশী রফিক মিয়ার। তিনি সানজিদাকে প্রায়ই অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। এতে সাড়া না মেলায় ৭ অক্টোবর রাতে রফিক, ফয়সাল ও ফারুক মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ঘটনা কাউকে জানালে বা মামলা করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা। ঘটনার সাত দিন পর ১৪ অক্টোবর সানজিদা নিজেই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রধান আসামি রফিক, সহযোগী ফয়সাল ও ফারুককে গ্রেফতার করে। আসামিরা কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে মুক্তিলাভ করে।  তারপর থেকে শুরু হয় ভিকটিমের পরিবারের ওপর সর্বাত্মক চাপ। সেই চাপের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে জীবন দিতে হলো সানজিদাকে। যে মৃত্যু আমাদের সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।  এলাকাবাসী ধর্ষকদের পুলিশের হাতে তুলে দিলেও মামলায় ফাঁকফোকর থাকায় আসামিদের জামিন পেতে অসুবিধা হয়নি। সানজিদার মৃত্যু আমাদের সমাজে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। আর কাউকে যাতে সানজিদার মতো প্রাণ হারাতে না হয় সে জন্য সবার বোধোদয় হবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর