মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর স্বদেশপ্রেম

মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম

রসুল (সা.)-এর স্বদেশপ্রেম

দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত। কেননা একজন মানুষ যখন কোনো একটি ভূখন্ডে জন্মলাভ করে, সেখানকার আলো-বাতাস গ্রহণ করে, সেখানে বেড়ে ওঠে তখন স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার মাটি-মানুষের প্রতি এক ধরনের হৃদ্যতা ও আপনত্ব অনুভব করে। জন্মভূমির প্রতি মানুষের এ স্বভাবজাত আকর্ষণকে ইসলাম মূল্যায়ন করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলাম দেশপ্রেমের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপও করেছে। স্বদেশকে ভালোবাসা ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে ইসলামে দেশপ্রেমের ধারণা ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে মুসলিমরা দেশের ব্যাপারে উদাসীন হয় না। আবার উগ্র জাতীয়তাবাদেও আক্রান্ত হয় না। মক্কা মুকাররমা ছিল রসুল (সা.)-এর মাতৃভূমি। শৈশব থেকে নিয়ে জীবনের প্রায় ৫৩ বছর সেখানেই অতিবাহিত করেন। তাই মক্কাকে তিনি সীমাহীন ভালোবাসতেন। সব সময় এর কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট থাকতেন। যখন রসুল (সা.) মাত্র ১৫-১৬ বছরের যুবক তখন মক্কায় শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এবং নিপীড়িত মানুষের সাহায্যার্থে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়, তিনি এর অন্যতম সদস্য ছিলেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম) তদ্রƒপ রসুল (সা.)-এর বয়স যখন ৩৩ তখন কুরাইশ কর্তৃক কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে গোত্রগুলোর মধ্যে ভীষণ দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রতিটি গোত্রই হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করাকে নিজেদের অধিকার দাবি করতে থাকে। এ অবস্থায় তাঁর বিচক্ষণতাই তাদের অনিবার্য এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা করে। মাতৃভূমির প্রতি রসুল (সা.)-এর এত ভালোবাসা ছিল যে কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি যখন মদিনায় হিজরত করছিলেন তখন ব্যথাতুর হৃদয়ে মক্কার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘ভূখন্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’ (তিরমিজি) পরে যখন তিনি মদিনা মুনাওয়ারাকে স্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেন তখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মদিনার প্রতি তাঁর হৃদয়ের ভালোবাসা প্রকাশ করতেন। এক হাদিসে আছে, রসুল (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, দূর থেকে মদিনার জনপদ নজরে আসতেই তিনি তাঁর উটনির গতি বাড়িয়ে দিতেন, অথবা কোনো চতুষ্পদ জন্তুর ওপর থাকলে তাকে নাড়াতে থাকতেন। বস্তুত মদিনার প্রতি ভালোবাসার দরুনই তিনি এমনটি করতেন। (বুখারি) আরেক হাদিসে আছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রসুলের সঙ্গে খয়বার অভিযানে গেলাম। এরপর যখন অভিযান শেষে রসুল (সা.) ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।’ (বুখারি) মোট কথা, দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং দেশের কল্যাণে কাজ করা এটা রসুল (সা.)-এর আদর্শ। এ মহান শিক্ষাই রসুল (সা.) মানব জাতিকে দিয়ে গেছেন। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে খাঁটি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর