রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা আল্লাহর কুদরত

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের মাঝে আসছে ভাষাশহীদদের স্মৃতিমন্ডিত একুশে ফেব্রুয়ারি। এ দিনটিতে সারা দুনিয়ার মানুষ মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার শপথ নেয়। ইসলামে মাতৃভাষার মর্যাদা স্বীকার করা হয়েছে বিশেষভাবে। মুসলমানমাত্রই বিশ্বাস করে, ভাষা মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর একটি নেয়ামত। জীবজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষই কথা বলতে পারে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করছেন, ‘আর আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে (একটি নিদর্শন হলো) আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্র্রদায়ের জন্য উপদেশ রয়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত ২২)

ওই আয়াতে পৃথিবীর মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতাকে আল্লাহতায়ালা তাঁর একটি নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুন্দর ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন ও উত্তম বাচনভঙ্গিতে কথা বলতে অপারগতার কারণেই হজরত মুসা (আ.) দীনের দাওয়াত নিয়ে ফেরাউনের কাছে যাওয়ার সময় সুন্দর ভাষা ও হৃদয়গ্রাহী কথাবার্তায় পারঙ্গম স্বীয় ভাই হারুন (আ.)-কে নিজের সঙ্গী করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই হারুন; সে আমার থেকে অনেক বেশি প্রাঞ্জলভাষী। তাই আপনি তাকে আমার সহযোগী করে প্রেরণ করুন; যাতে সে আমাকে (দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রাঞ্জল ভাষার দ্বারা) সত্যায়িত করে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি (আমার বক্তব্য সত্য হওয়া সত্ত্বেও) তারা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে।’ (সুরা কাসাস, আয়াত ৩৪) আল্লাহ মানুষের হেদায়াতের জন্য পৃথিবীতে যেসব নবী-রসুল পাঠিয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে মাতৃভাষায় আল্লাহর ওহি প্রেরিত হয়েছে; যাতে তাঁরা তাঁদের জাতিকে সুস্পষ্ট ভাষায় আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন। আল্লাহ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে উদ্দেশ করে সুরা দুখানের ৫৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমি তো কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে নাজিল করেছি, যাতে তারা সহজে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ সুরা আশ শুরার ৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি। যাতে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের লোকদের হাশরের দিন সম্পর্কে সতর্ক করেন।’

হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তওরাত অবতীর্ণ হয়েছে হিব্রু ভাষায়, হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর জবুর অবতীর্ণ হয়েছে ইউনানি ভাষায় আর হজরত ইসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে সুরিয়ানি ভাষায়। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে আরবি ভাষায়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি প্রত্যেক নবীকেই তার নিজ নিজ জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি; যেন সে তাদের সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ৪) বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। সব ভাষার মতো এ ভাষাও এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। বাংলা অন্তত ২৬ কোটি মানুষের ভাষা। যার মধ্যে ১৮ কোটিই মুসলমান। এ ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর