বিলম্বিত বিচার প্রকারান্তরে বিচারহীনতার নামান্তর। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের হলেও বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়ার কারণে বিচারপ্রার্থীরা হতাশায় ভোগেন। অপরাধীদের মধ্যে তা ভয় ঢোকাতে ব্যর্থ হয়। বিলম্বিত বিচারের কারণে অনেকে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বদলে আইন নিজের হাতে তুলে নেন। দেশে অপরাধপ্রবণতা উসকে দেওয়ার পেছনে মান্ধাতা আমলের বাস্তবতা বিবর্জিত কিছু আইন অনেকাংশে দায়ী। দেশে যত অপরাধ সংঘটিত হয় তার সিংহভাগের পেছনে রয়েছে ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ। জমির ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল জোর যার মুল্লুক তার নীতিই প্রাধান্য পেয়েছে। জমির বৈধ মালিকানাও উপেক্ষিত হয়েছে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে। এজন্য যে বিরোধ দানা বেঁধে উঠেছে তা বংশ পরম্পরায় অমীমাংসিত থাকার নজির কম নয়। দেশের আদালতগুলোতে মামলাজট সৃষ্টির পেছনে ভূমি-সংক্রান্ত আইনের ত্রুটি অনেকাংশে দায়ী। ভূমি বিরোধ আরও অনেক অপরাধ সংঘটনে উৎসাহ জুগিয়েছে। জামিন প্রদানে নিম্ন আদালতগুলোর অনুদার নীতি হাই কোর্টে মামলার স্তূপ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে। আশার কথা বর্তমান প্রধান বিচারপতি মামলাজট হ্রাসে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টায় ৩ হাজার ১৯০টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন হাই কোর্টের ৯টি বিশেষ বেঞ্চ। বেলা ২টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত অন্তর্র্বর্তীকালীন জামিন-সংক্রান্ত এসব মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বেঞ্চগুলো। এর আগে ৯টি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এদিকে পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও। মামলাজট কমাতে প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারপতি বিচারক এবং আইনজীবীদের পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই। আইনজীবীদের অনেকে মামলা ঝুলিয়ে রাখেন এমন অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। মামলাজট কমাতে হলে এ মনোভাবের অবসান ঘটাতে হবে।