শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবুন

মেজর আখতার (অব.)

নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবুন

বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনার প্রয়োজনীয়তা এখন তীব্রভাবে অনুভব করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ; যার আলামত দৃশ্যমান। সম্প্রতি দলটির নেতারা কূটনীতিক কিংবা রাজনীতিকদের সঙ্গে যে কোনো আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু লক্ষণীয় যে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিরোধী দলের দাবির বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা। তা স্পষ্ট করতে কোনো দ্বিধা করছে না। তাদের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, আরেক দফা সরকারে থাকার লক্ষ্যে দলটি এবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার অবস্থানে রয়েছে। তাই তারা মনে করে, সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোট হলে সেই লক্ষ্য অর্জন কিছুটা সহজ হতে পারে। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোট বর্জন করলে তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে সংঘাত-সহিংসতার চেষ্টা করবেই। সে পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠনে ঝুঁকি কম এবং গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তখন আর নির্বাচন-উত্তর ঝুঁকি তেমন একটা থাকে না। কিন্তু বিরোধী দলের বয়কটের মুখে নির্বাচন সব সময়ই নিন্দিত ও অগ্রহণযোগ্য এবং তখন সংঘাত-সহিংসতা কখনই পিছ ছাড়ে না।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকার, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা বৈঠক করছেন। সেসব আলোচনার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিদেশি কূটনীতিকরা বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে ভালো একটা নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলছেন। তবে তারা বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সরকারকে কোনো চাপ দিচ্ছে না। ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগ বা সরকারের তো পোয়াবারো। তাই বিএনপিকে ভোটে আনার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্যোগকে ধন্যবাদ সহকারে স্বাগত জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার এখন আলোচনার নতুন ফাঁদ পেতে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে পরোক্ষভাবে আলোচনার দ্বার খুলে দেবে বলে অনেকে মনে করছেন। এমনকী বিএনপির কোনো কোনো দাবি-দাওয়া নিয়েও সরকার নমনীয় মনোভাব দেখাতে পারে। সম্প্রতি সংসদ উপনেতা দম্ভোক্তি করে বলেছেন, উনারা নাকি ‘ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চান না’! উনি সম্ভবত ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন অথবা লজ্জায় মনে করতে চান না! তবে তিনি আগামী নির্বাচনে বিএনপি ভোটে থাকবে (!) বলে আকুল প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে মনে করছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। তারেক রহমানকে বাগে আনতে না পারলে এ ধরনের সব উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে।

শুধু সংসদ উপনেতার একার বা বিদেশি কূটনীতিকদেরই প্রত্যাশা নয়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি সদলবলে অংশগ্রহণ করুক তা পুরো জাতির প্রত্যাশা। সমগ্র জাতি মুখিয়ে আছে একটি কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের জন্য। নতুন পুরনো সব ভোটার উদগ্রীব হয়ে আছে, তাদের ভোটটি দেওয়ার জন্য। দল-মত-নির্বিশেষে সবার প্রত্যশা একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেখানে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের মহামূল্যবান ভোটটি তাদের পছন্দের মার্কায় অবাধে দিতে পারবে। দল-মত-নির্বিশেষে সবারই প্রত্যাশা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের। মনে হয় এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাও তাই। কিন্তু এই ইচ্ছা পূরণে চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সংবিধান। সংবিধানের ১২৩। ২(৩) এর (ক) উপধারায় কখনই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। কেন নেই তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গে মানব চরিত্রে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এটি যারা অস্বীকার করতে চায় তারা যুক্তির ধার ধারে না। তারা শক্তির জোরে কথা বলেন। তাদের বোঝাতে হলে শক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। শক্তি দিয়ে বোঝানোও অসম্ভব নয়; কিন্তু তাতে অশান্তি বাড়ে, জনগণের বাড়তি ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। দেশ ও রাষ্ট্রের অকল্যাণ তৈরি হয়। বিদেশিরা সুযোগ নেয়। তাই আমার একান্ত মত হবে- ক্ষমতাসীনরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কিছুটা নমনীয় হয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সংবিধানের ১২৩। ২(৩) এর (ক) উপধারাটি একতরফাভাবে বিলুপ্ত করে দিতে এগিয়ে আসবে।

বিরোধী দলের সব দাবি-দাওয়া মানতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বিরোধী দলের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রচলন করতে পারলে সুবিধাবাদি, ধান্দাবাজ ও ষড়যন্ত্রকারীরা সহজে হালে পানি পাবে না। সরকার যদি খোলা মন নিয়ে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদ নির্বাচনের দিকে যায়, তাহলে মনে হয় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে জাতি রক্ষা পাবে। তখন দেশ ও জাতির স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর উচিত হবে প্রধানমন্ত্রীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে মেনে উভয় পক্ষের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিপরিষদ কীভাবে দাঁড় করানো যায় তা নিয়ে গঠনমূলক একটি আলোচনার টেবিলে বসতে আগ্রহ দেখানোর। এ ব্যাপারে তখন সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে এবং বিরোধী পক্ষকেও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। উভয় পক্ষ গোঁ ধরে না থেকে আলোচনার টেবিলে বসে পারস্পরিক ছাড় দিয়ে উভয়ের কুল রক্ষা করার মতো একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা। উভয় পক্ষকে বাস্তবতার আলোকে তাদের অবস্থান ও সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে উপকৃত হবে জনগণ। দূর হবে দুশ্চিন্তা, অশান্তি ও অমঙ্গল।

সবাই জানে ক্ষমতা যেমন চিরস্থায়ী নয়, তেমনি কারও দুর্দিনও অপরিবর্তনীয় নয়। সময় পরিবর্তনশীল। কাজেই সবকিছুই যে আজই করে ফেলতে হবে এরকম অস্থিরতা শেষ পর্যন্ত মঙ্গলময় হয় না, তা আমরা সবাই জানি। ভবিষ্যৎ সব সময় নির্ভরশীল বর্তমানের ওপর তা আমাদের কারও অজানা নয়। কাজেই আমি মনে করি, বিরোধী দলকেই ইতিবাচক মনোভাব ও বোঝাপড়া নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত হবে। সরকার ঘোড়ায় চড়ে আছে। তাকে তো নামাতে চাই; কিন্তু তার হাতে আছে চাবুক তার ওপর সে ঘোড়ায় চড়ে বসে আছে। তাকে নামাতে গেলে ঘোড়ার ধাক্কা খাওয়ার যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি আবার ঘোড়াকে মারার জন্য রাখা চাবুকের আঘাতও আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। পথে কোনো খানাখন্দও নেই যে, রাজাকে ঘোড়াসহ সেই খানাখন্দে ফেলে দেওয়া যাবে। কাজেই রাজার সঙ্গে সন্ধি করাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে রাজাকেও ছাড় দেওয়ার মন-মানসিকতা দেখাতে হবে। ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে গোঁ ধরে বসে থাকলে গনেশ কখনো উল্টে যেতেও যে পারে, সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়াও শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে। পৃথিবী পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল আমাদের জীবন, যৌবন, ক্ষমতা, বিত্ত-বৈভব এবং সবকিছুই। পৃথিবীতে সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট জীবনকাল রয়েছে যার বাইরে কেউ যেতে পারে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একদিন অবশ্যই থেমে যাবে। থেমে যেতে বাধ্য। পৃথিবীর কোনো কিছুই প্রকৃতির খেয়ালের বাইরে নয়। সবকিছু নির্ধারিত হয় একমাত্র সময় দিয়ে। সময়কে জয় করার ক্ষমতা এখন কারও হয়নি। হবে কি না এখনো কেউ তা জানি না। সময় সবকিছুকে পরিবর্তন করে দেয়। অনেকে মনে করে পৃথিবীতে জয়ের সবচেয়ে বড় এবং মোক্ষম অস্ত্র হলো- অপেক্ষা। তাই আমি মনে করি, আমাদের সবার আলোচনায় বসা উচিত। আলোচনায় বসে জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করা হোক। জাতির নেতারা আলোচনায় বসে স্থির করা হোক জাতীয় সিদ্ধান্ত কী হবে বা আমরা কোন পথে যাব। জনগণ অশান্তি, অনিশ্চয়তা চায় না। এই আলোচনায় যেমন বিরোধী দল এগিয়ে আসবে তেমনি সরকারকেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যে, বিরোধী দলের বক্তব্যের যৌক্তিক মূল্যায়ন করা হবে। অতীতের কাসুন্দি না ঘেঁটে আগামী দিনের সম্ভাবনাকে মূল্যায়নের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। হত্যা এবং প্রতিহিংসা রাজনীতিরই অংশ; যার সুবিধাভোগী আমরা অনেকেই! তবে প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের রাজনীতি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে : যথা সময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও প্রশাসনের সব ধরনের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে যার নিশ্চয়তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়তার বাধ্যবাধকতা সংবিধানে থাকলে বিরোধী দল শঙ্কামুক্ত থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসতে বাধ্য হতে পারে। তাই সবার আগে প্রয়োজন সংবিধান সংশোধন। সংবিধান সংশোধন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই করতে পারেন। এখন তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করে তা করবেন কি না তা একমাত্র উনার ওপরই নির্ভর করে। যদি প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে সুখী ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়তে চান তাহলে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই; তা যতই তিতা হোক না কেন।

প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, কারও সঙ্গে আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই তাহলেও সেখানে তাকে বাধা দেওয়ারও কেউ নেই। তিনি ইচ্ছা করলে যেভাবে খুশি সেভাবে নির্বাচন করাতে পারেন বা নির্বাচন না করিয়ে বর্তমান সংসদকে চিরস্থায়ী করে দিতে পারেন। তাতে উনাকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকি নিয়েই নিয়েছেন। তাই তিনি বা তার সরকার বিরোধী দলগুলোকে কোনো আমলে নিচ্ছেন না। কারণ বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোনো একক নেতৃত্ব মাঠে নেই। মাঠের কোনো একজন নেতার ডাকে বা নির্দেশে কেউ মাঠে থাকছে না। পরস্পরকে দোষারোপ ও আদর্শহীন আনুগত্যের আধিপত্য চলছে। নির্দেশ বা ডাক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কোনো কার্যকরি চেইন অব কমান্ড বা নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা নেই। সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত প্রভাব ও প্রাধান্য বিস্তারের সাময়িক অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে আন্দোলন প্রচ-ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা আন্দোলনের সফলতার সম্ভাবনার নিশ্চিত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারছে না। এখন এই সুযোগে যদি সরকার সংবিধান সংশোধন করে বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বা অনন্তকালের জন্য বাড়িয়ে দিয়ে প্রতি বছর ২০% হারে আসন শূন্য ঘোষণা করে এই বছর থেকেই ২০% তথা ৬০টি আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে তাহলে বিরোধী দলগুলোর কী করার থাকবে? তখন কি সরকার বিরোধী দলগুলোকে আন্দোলনের সুযোগ করে দেবে!

সরকার বিরোধী দলগুলোর সামনে এখন দুটি পথ খুলে দিয়েছে। প্রথমটি হলো সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অনুগত বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে হালুয়া-রুটি খাওয়ার সুযোগ নেওয়া। আর দ্বিতীয়টি হলো নির্বাচনে না এসে আন্দোলনের নামে জেল-জুলুম, নির্যাতন, গুম মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে আর পুলিশের মিথ্যা মামলায় আদালতের বারান্দায় দিন কাটাতে। সরকার তার লক্ষ্যে ঠিক। যদি কোনো দৈব-দুর্বিপাক অন্তরায় না হয়, তাহলে সরকার তার পথেই হাঁটবে। এখন সেখানে যদি সরকার সবাইকে একসঙ্গে নির্বাচনে নামিয়ে নতুন কোনো উটকো ঝক্কি-ঝামেলার ঝুঁকি না নিয়ে বর্তমান সংসদকেই স্থায়ী করে প্রথম বছরের জন্য ২০% অর্থাৎ ৬০টি আসনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে সরকার এক ঢিলে অনেক পাখি মেরে ফেলতে পারবে বলে অনেকে মনে করেন। আন্দোলন বন্ধ হলো, নির্বাচনও হলো, আবার নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হলো, সংসদে সত্যিকার বিরোধী দলও এলো, বিদেশিরাও খুশি থাকল, দেশও শান্ত থাকল। যাদের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার কথা তারাও আপনা-আপনি মাইনাস হয়ে গেল! এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে। এখন সরকার ইচ্ছা করলে নিম্নলিখিতভাবে সংবিধান সংশোধন করে নিলেই হলো : সংবিধানের বর্তমান ১২৩-এর ২ ধারার (৩) উপধারার (ক) ও (খ) বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সেখানে লেখা থাকবে বর্তমান সংসদ চিরদিনের জন্য বলবৎ থাকবে তবে শর্ত থাকবে যে, ২০২৩ সাল থেকে সংসদের মোট আসনের ২০% ভাগ আসন তথা ৬০টি আসন প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শূন্য ঘোষণা করবেন এবং ওই আসনের সংসদ সদস্যগণ সঙ্গে সঙ্গে পদচ্যুত হয়ে যাবেন। তারপর সেখানে শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উক্ত ২০% এর ৬০টি শূন্য আসনে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের পরে নির্বাচিত ৬০ জন সংসদ সদস্য যথা নিয়মে স্থায়ী সংসদে পাঁচ বছরের জন্য আসন গ্রহণ করবেন। এতে সরকার প্রধানের আজীবন ক্ষমতায় থাকা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেও কোনো বাধা থাকবে না। ওই নির্বাচনের জন্য তখন সরকারকে কারও সঙ্গে অনৈতিক আঁতাত যেমন করতে হবে না, তেমনি কোনো জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচন করার জন্য কোনো দলের কৃতদাস হতে হবে না বা নির্বাচন করলে সরকারের দালালের তকমা মাথায় নিতে হবে না। সবচেয়ে বড় ফল দেবে পুঁজিবিহীন রাজনৈতিক বাণিজ্য প্রতিরোধে। এতে অবশ্যই রাজনৈতিক শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে যুগান্তকারী অবদানও রাখবে।

পরিশেষে অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলতে চাই, বর্তমান সংবিধানের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। দেশি-বিদেশি যারাই ইনিয়ে-বিনিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন তারা সবাই তলে তলে সরকারের পক্ষেই কথা বলছেন, জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং বিরোধী দলগুলোকে বিভ্রান্ত করে চাপে রেখে জালে আটকাতে চাচ্ছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি নিজে তো নেবেই না, তার স্বার্থান্বেষী দেশি-বিদেশি মহলও নিতে দেবে না। তাই নির্বাচনের নামে নাটক করে জনগণের সামনে প্রহসন সৃষ্টির বদলে সংবিধান সংশোধন এনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়াই উত্তম হবে। তবে এ রকম মোক্ষম সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। নদী পরিষ্কার, স্রোত ও হাওয়া অনুকূল, মাঝি বাইয়া যাও। সময়েই দেখা যাবে কোন ঘাটে খেয়া ভিড়ে।

                লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর