বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক নারী পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। পুলিশ সদর দফতরের সারা দেশের মানব পাচার মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৪ সালের ১৫ জুন থেকে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাচারের শিকার হয়েছেন ১৩ হাজার ৪২৪ জন। উদ্ধার হয়েছেন ১০ হাজার ৫৭৯ জন। ২ হাজার ৮৪৫ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি। আমাদের দেশে নারী পাচারের ঘটনার সামান্য একটি অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা হয়। লোকলজ্জা এবং হয়রানির ভয়ে অনেকে স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে পুষে রাখেন কিন্তু এটি বাইরে প্রচার হোক তা চান না। প্রতি বছর ভালো কাজের স্বপ্নের ফাঁদে পড়ে পাচার হয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য নারী। তাদের প্রতিবেশী ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যের ওমানসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাচার হওয়া নারীর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের শিকার নারী ১০ হাজারের বেশি হবেন। তাদের বেশির ভাগের ঠাঁই হয়েছে পতিতালয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে শুধু নয়, উচ্চ বেতনে ভারতেও বিভিন্ন বয়সী নারী পাচারের ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। মানব পাচার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাচার হওয়া অন্তত ৬৪৩ জনকে তারা ভারত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। দেশের প্রতিটি এলাকায় রয়েছে নারী পাচারকারীদের এজেন্ট। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নারী পাচারকারী দলের এজেন্টরা বেশ সক্রিয়। টিকটক করার নামে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে, বিয়ে এবং ভালো চাকরির নামে কিশোরী ও যুবতী নারীদের মন জয় করে পাচারকারীরা। তারপর তাদের ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিয়ে আদিম ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হয়। নারী পাচার বন্ধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাও জরুরি। পাচারকারীরা নিরাপদে থাকা মানে আরও অনেক নারীর সর্বনাশ ডেকে আনা। এদের রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।