সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে সারা দেশে ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানি একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে দেশে। একইভাবে দুনিয়াজুড়ে ট্রেন ভ্রমণ সবচেয়ে নিরাপদ বলে বিবেচিত হলেও বাংলাদেশ সম্ভবত এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম। অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতিকে লাগাতার লোকসান উপহার দিচ্ছে। নির্বিবাদে গিলে খাচ্ছে জনগণের ট্যাক্সের টাকা। ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। দেশের ৫৪টি জেলার মধ্যে ৪৩টিতে রেল যোগাযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টিতে রয়েছে রেললাইন সমস্যা। দেশের অর্ধেক রেললাইনই ঝুঁকিতে। সারা দেশের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেলপথের অবস্থা খারাপ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। স্মর্তব্য, রেলের ব্যবস্থাপনা পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে বিভক্ত। সারা দেশে এখন রেলপথ আছে ৩ হাজার ৯৩.৩৮ কিলোমিটার। আর রেললাইন আছে ৪ হাজার ৪৩৮.৪০ কিলোমিটার। পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় রেললাইনের সমস্যা প্রকট। এই অংশে ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন পুরোপুরি নতুন করে করতে হবে। ৪০০ কিলোমিটার পথে রেল পরিবর্তন করতে হবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথে সিøপারসহ অন্য সরঞ্জাম পরিবর্তন জরুরি হয়ে উঠেছে। পূর্বাঞ্চলের রেলপথে ৫ লাখ কিউবিক মিটার পাথরের ঘাটতি আছে। ত্রুটিযুক্ত রেললাইনের কারণে শুধু দুর্ঘটনাই ঘটছে না, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা বাংলাদেশে অনিরাপদ হয়ে উঠছে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। রেলের শত শত কোটি টাকার জমি বেদখল হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায়। রেলের মূল্যবান জিনিসপত্র উধাও হয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই। অথচ রেলের সম্পত্তি দেখভাল করার জন্য বিপুলসংখ্যক কর্মচারী-কর্মকর্তা শুধু নয়, রেলওয়ে পুলিশও রয়েছে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে সংস্কার কাজে নজর দিতে হবে। তবে সবচেয়ে আগে দরকার কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। রেলপথের নিরাপত্তায় প্রহরা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।