কলকাতার বাংলা ছবি বংলাদেশে ব্যবসায়িক সাফল্য পাচ্ছে না। বাংলাদেশে ছবি নির্মাণ কমে যাওয়া এবং মানসম্মত ছবি নির্মাণ না হওয়ায় ২০০০ সালের শেষদিক থেকে সিনেমা হল বন্ধ হওয়া শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ১২০০ সিনেমা হল বন্ধ হতে হতে এখন এই সংখ্যা ২৮০-এর ঘরে নেমেছে। আর এই সিনেমা হল বন্ধ ঠেকাতেই চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি-২০১০ সালে ভারতীয় ছবি আমদানির উদ্যোগ নেয়। এতে হিন্দি এবং বাংলা দুই ভাষার ভারতীয় ছবি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। ২০১২ সালে প্রথম কলকাতার বাংলা ছবি হিসেবে আমদানি করা হয় জোর, বদলা এবং সংগ্রাম। আমদানিকারকদের প্রত্যাশা ছিল যেহেতু এদেশের দর্শক ভারতীয় ছবি দেখতে বেশ আগ্রহী, তাই সিনেমা হলে এসব ছবি লুফে নেবে। এতে সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা নিশ্চিত হবে। ছবিগুলো মুক্তি পাওয়ার পর দেখা গেল উল্টো চিত্র। সিনেমা হলে দর্শক নেই। প্রদর্শক সমিতির মতে এ পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন কলকাতার বাংলা ছবি বাংলাদেশের সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, একটি ছবিও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। বাংলাদেশে কলকাতার ছবির কেন এই বাণিজ্যিক ব্যর্থতা? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হল এবং মধুমিতা মুভিজের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, প্রথমত বলব যেসব ছবি আমদানি করা হয় তার সিলেকশন সঠিক নয়। যাচ্ছেতাই ছবি আনলে দর্শক কেন তা দেখতে যাবে। সব শ্রেণির দর্শক যে ধরনের ছবি দেখে মানে রোমান্টিক-অ্যাকশন জাতীয় ছবি আমদানি করতে হবে। তাছাড়া কলকাতার ছবির ব্যবসায়িক সফলতা পেতে হলে দুই দেশে একসঙ্গে ছবিটি মুক্তি দিতে হবে। সচরাচর আমদানি সংক্রান্ত নানা জটিলতায় কলকাতায় একটি ছবি মুক্তির পর কয়েক মাস পর সেই ছবিটি এখানে মুক্তি পায়। এসময়ের মধ্যে ছবিটি কলকাতার টিভি চ্যানেল, ইউটিউব, সিডি, ডিভিডিতে চলে আসে, তাছাড়া পাইরেসিও হয়ে যায়। এতে করে দেখা ছবিটি দর্শক আবার সিনেমা হলে দেখতে যাবে কেন? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, প্রথমত কলকাতার ছবি বেশিরভাগ তামিল তেলেগু ছবির কপি। যা সেখানেই চলে না। এদেশের দর্শক তা দেখবে কেন? দ্বিতীয়ত কলকাতায় মৌলিক গল্পের যে ছবি নির্মাণ হয় অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ছবির মতো ছবিগুলোর দর্শক সিনেপ্লেক্সভিত্তিক। কলকাতায় প্রায় ২০টি সিনেপ্লেক্স রয়েছে। সেখানে এসব ছবি চালিয়ে ন্যূনপক্ষে নির্মাণ ব্যয় তুলে আনা যায়। আবার এসব ছবি টিভিতে বিক্রি ও ছবিগুলোর গান বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। এসব ছবির দর্শকও আমাদের দেশে সিনেপ্লেক্সভিত্তিক। এ ধরনের ছবি এনে হাতে গোনা সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শন করে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে কলকাতার সফল মেধাবী নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির ছবিও এখানে চলবে না। কারণ তার ছবিগুলোও সিনেপ্লেক্স দর্শকের। বাংলাদেশে সিনেপ্লেক্সের বাইরে ঢাকার মধুমিতা ও বলাকা সিনেমা হল ছাড়া উচ্চ বা মধ্যবিত্তের ছবি দেখার মতো আর কোনো সিনেমা হল নেই। তাই এসব ছবি কোথায় প্রদর্শন হবে? তৃতীয়ত কলকাতায় ছবি মুক্তির পর রপ্তানির বিনিময়ে আমদানি করতে গেলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন হয়। এরপর এলসির মাধ্যমে আমদানি, বিমানবন্দর ও সেন্সর ছাড় করাতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ততক্ষণে ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পেয়ে টেলিভিশনে প্রদর্শন আর ইউটিউব এবং সিডি-ডিভিডিতে চলে আসে। একই সঙ্গে পাইরেসিও হয়ে যায়। ফলে সিনেমা হলে মুক্তির আগেই ছবিটি দর্শকের দেখা হয়ে যায়। তাই দর্শক আর সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটি দেখে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে আমদানিকারক ও সিনেমা হল মালিকরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে যৌথ প্রযোজনার নির্মাণের বিকল্প নেই। দুই দেশের গ্রহণযোগ্য গল্প নিয়ে যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণ হলে দুই দেশই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। আর কলকাতার ছবি বিনিময়ের আওতায় নয়, সরাসরি সীমিত আকারে আমদানি করতে দিতে হবে। বিনিময়ের আওতায় আমদানি করতে গেলে সরকারিভাবে যে নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে তাতে সময়মতো আমদানি ও মুক্তি দেওয়া যায় না। তাই এই আমদানির কোনো সুফলও পাওয়া যায় না। বর্তমানে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রেও নতুন নানা শর্ত আরোপ করে এই নির্মাণ প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে সম্প্রতি চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির জেনারেল মিটিংয়ে সীমিত আকারে কলকাতার ছবি সরাসরি আমদানির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তা না হলে বাংলাদেশে কলকাতার ছবির ব্যবসায়িক সফলতা সম্ভব নয়। সুদীপ্ত কুমার দাশ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা তৈরি করতে সরকার যে কমিটি গঠন করেছে তাতে প্রদর্শক সমিতির সদস্যদের রাখা হয়নি। এমনকি সিনেমা হল ডিজিটাল করার সভায় শিল্পী, নির্মাতা ১৫ জন রাখা হলে সিনেমা হল মালিক রাখা হয় মাত্র দুজন। এভাবে প্রদর্শকদের অগ্রাহ্য করে চলচ্চিত্র ব্যবসার সুফল পাওয়া কখনই সম্ভব নয়। এদিকে বর্তমান সময়ে ঢাকার সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, বাংলাদেশে কলকাতার ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য পেতে হলে দুই দেশে একসঙ্গে ছবি মুক্তি দেওয়ার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, না হলে একে তো আগে কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ছবিটি নানা মাধ্যমে এখানকার দর্শক দেখে ফেলছে, তাছাড়া আমাদের এখানে ছবি মুক্তির সময় জোর প্রচারণা চালানো হয় না। ফলে দর্শক জানতে পারে না কখন কোন ছবি মুিক্ত পাচ্ছে। প্রচারণা না থাকায় দর্শক ছবিটি দেখতে যায় না। এতে করে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলাদেশে কলকাতার ছবি।
শিরোনাম
- দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহত
- এসএসসিতে ফেল : বরিশালে পাঁচ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, দুইজনের মৃত্যু
- এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস না পেয়ে বগুড়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
- টানা বৃষ্টির প্রভাব রাজধানীর বাজারে
- এসএসসিতে অকৃতকার্য হওয়ায় গেন্ডারিয়ায় শিক্ষার্থীর 'আত্মহত্যা'
- সেই আলফি পাস করেছে
- এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত
- ফ্যাসিবাদবিরোধীদের ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান মামুনুল হকের
- দুদকের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গ্রেফতার
- মাকে মারধর করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল স্বজনরা
- ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগে জেলেনস্কির আহ্বান
- আবারও ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুথিদের
- কুয়ালালামপুরে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিরল বৈঠক
- লঙ্কানদের ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল টাইগাররা
- ট্রাম্পের লবিস্টদের লাখ লাখ ডলার দিচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো
- নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
- জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্প্রচার-ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা
- ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- কারাগারে একক সেলে নেওয়া হলো সাবেক আইজিপি মামুনকে
- উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা
সাফল্য পাচ্ছে না কলকাতার ছবি
কলকাতায় মুক্তির কয়েক মাস পর সেই ছবিটি এখানে মুক্তি পায়। এ সময়ের মধ্যে ছবিটি টিভি চ্যানেল, ইউটিউব, সিডি, ডিভিডিতে চলে আসে। দেখা ছবিটি দর্শক আবার সিনেমা হলে দেখতে যাবে কেন
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর