শিরোনাম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কাঙ্গালিনী সুফিয়া, সংগীতশিল্পী

আমি আজও গানের কাঙ্গাল

আলী আফতাব

আমি আজও গানের কাঙ্গাল

বাংলা লোকসংগীতের নন্দিত বাউল কাঙ্গালিনী সুফিয়া। ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’, ‘পরানের বান্ধব রে’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’ প্রভৃতি গান দিয়ে জয় করে নিয়েছেন কোটি ভক্তের হূদয়। গান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজ তার আলাপন।

 

আপনার শরীরের কী অবস্থা?

‘বয়স তো আর কম হলো না। কখনো ভালো, কখনো খারাপ। এভাবেই চলছে দিন। এখন আর দুই-তিনটার বেশি গান গাইতে পারি না। আমি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাই। দম আটকে আসে। এ ছাড়া আমি যে ধরনের গান গাই তার সঙ্গে নেচেও থাকি। যার কারণে দর্শক-শ্রোতারা এক ধরনের আনন্দ পেয়ে থাকে। এখন তো আর নেচে নেচে গান গাইতে পারি না।’

 

অনেকটা সময় গানের জগতেই কেটে গেল। এখন কোনো অভিমান হয়?

মাঝে-মধ্যে ইচ্ছা করে আর গান গাইব না। গান করতে গিয়ে মানুষ আমাকে অনেক ঠকিয়েছে। বিদেশে গান করতে যেতাম, যে কথা বলে নিয়ে যেত, পরে দেশে ফিরে এসে তাদের ভিন্ন রূপ দেখতাম। যার কারণে মধুর এবং অম্ল দুই ধরনের স্মৃতিই রয়েছে। এগুলো আর এখন বলতে চাই না।

 

তাই বলে কি শ্রোতারা নতুন কোনো গান পাবে না?

তা কেন হবে। আমি আজও গানের কাঙ্গাল। এখনো মনে মনে গান বান্ধি। এরই মধ্যে তিনটা নতুন গানের কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে ‘অন্ধকারের জীবন আমার’, ‘মাটির একটা ঘর বানায়া’ ও ‘জানলে ভবে আর আসতাম না’। এমন অনেক গান মনে মনে আছে। কিন্তু এখন আর তেমন মনে রাখতে পারি না।

 

এখন তো স্টেজ শোর মৌসুম। আপনি কেমন করছেন?

আমাদের জন্য এখন তেমন স্টেজ শো হয় না। আর হলেও তেমন টাকা দেয় না। তবে এরই মধ্যে কয়েকটি স্টেজে শো করেছি।

 

আপনি তো দেশের বাইরেও অনেক শো করেছেন। তার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

আমি দেশে মঞ্চে যেমন করে গান পরিবেশন করি, বিদেশের মঞ্চেও তেমনি গান করি। আমি দেশের বাইরে অনেক শো করেছি। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের কোনো মঞ্চে উঠে গাইলে দর্শক-শ্রোতারা ভীষণ উপভোগ করেন। কারণ তাদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণ খোলা হাসিই বুঝিয়ে দেয় আমার গান তারা কতটা উপভোগ করেন।

 

কাঙ্গালিনী হয়ে ওঠা সময়গুলো ঠিক কেমন ছিল?

 আমার বয়স ১৫ কিংবা ১৬। আমার মেয়ের বয়স ছিল তিন কিংবা সাড়ে তিন বছর। তখন থেকেই গানের প্রতি এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করত। এর মধ্যে আমার গায়কীর কিছুটা সুনাম হয়েছে। এরপর থেকেই আমি ধীরে ধীরে এ নামে পরিচিত হতে থাকি। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আজকের এই অবস্থানে আসতে। হেঁটে হেঁটে গ্রামগঞ্জে গান গাইতাম। তখন কেউ ১০০ কিংবা ২০০ টাকা দিত। আর তা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই সাংসারিক খরচ চলত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আমার বাবা-ভাইকে মেরে ফেলল। আমার মা-ও মারা গেলেন। এরপর তো আমি দুঃখের সাগরে ভেসেছি। মা আমাকে গুরুর কাছে নিয়ে যেতেন। তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে কিছু একটা যেন করে খেতে পারি। মানে গ্রামে গ্রামে গিয়ে গান করতাম। আর মানুষ আমাকে টাকা দিত। যদিও ছোটবেলা থেকে নিজে নিজে গান তৈরি করার একটা অভ্যাস আমার ছিল।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর