শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রবীণ নাট্যদলে নবীন নির্দেশকের অভাব

প্রবীণ নাট্যদলে নবীন নির্দেশকের অভাব

স্বাধীনতার পর কিছু বিচক্ষণ নির্দেশক ও নাট্যকারের মসৃণ পথ ধরে আমরা পেয়েছি কিছু স্বনামধন্য নাট্যদল। অভিনয়ে, নির্মাণে, নেপথ্যে অর্থাৎ কলা-কৌশলীর জায়গায়ও আধুনিকায়নের স্পর্শে পরিবর্তন এসেছে আমাদের। তবে আমাদের দেশের প্রবীণ সব নাট্যদলে নবীন নির্দেশক সংকট রয়েই গেছে। অন্যদিকে তরুণ নাট্যকার ও নির্দেশকরা তাদের মেধা বা কাজ অনুযায়ী মূল্যায়িত হচ্ছেন না। এসব সংকট ও সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে লিখেছেন-  পান্থ আফজাল

 

রামেন্দু মজুমদার (থিয়েটার)

সংকট আছে। তবে এখন কিন্তু সব প্রবীণ দলেই নতুন নির্দেশকদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন আমাদের দলে নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন। আমি মনে করি, আমরা যদি নতুনদের সুযোগ না দিই তবে দল এগুবে না। দলের কার্যক্রম স্থির হয়ে যাবে। নতুন নতুন কাজ আমরা পাব না।

 

আবুল হায়াত (নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়)

এটা আমার জন্য বলা মুশকিল। কারণ অনেকদিন মঞ্চের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তবে সংকট থাকতে পারে। নতুনদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আর নতুনদেরও কাজ করার যোগ্যতা থাকতে হবে। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে নির্দেশনা দিতে তো সমস্যা নেই। তবে এটা ঠিক, প্রবীণরা এখনো ডিরেকশন দিচ্ছেন, নতুনদের সুযোগ কম দিচ্ছেন। এর ফলে হতাশ হয়ে নতুনরা দল ত্যাগ করেন। দল ভাঙে। প্রবীণদের সম্মান দিতে গিয়ে নতুনরা তাদের যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারছেন না। তবে আমি মনে করি, আমাদের অনেক ভালো নবীন নির্দেশক রয়েছেন। তারা ভালো ভালো কাজ করছেন। আমাদের দলের ‘নতুনের উৎসব’ থেকে সাতজন নতুন নির্দেশক নতুন নাটক মঞ্চস্থ করলেন। মোস্তাফিজ শাহীনের নাটক ভালো লেগেছে সবার। হৃদি করলেন। সুযোগ সবসময় দিই না আমরা নতুনদের। প্রবীণদের মধ্যে একটা সংশয় বা ভয় আছে, নতুনরা ঠিকমতো নির্দেশনা দিতে পারবেন কিনা!

 

মামুনুর রশীদ (আরণ্যক নাট্যদল)

খুবই খারাপ অবস্থা! নতুন নির্দেশক সংকট বলতে গেলে চরমে। এই সংকটের কারণে দল হুমড়ি খেয়ে পড়বে। দলে স্থবিরতা আসবে। দল আর এগুবে না। প্রবীণ নাট্যদলে যদি নবীন নির্দেশক না থাকে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তবে, আমাদের দলে তেমন সংকট নেই। আমরা বেশকিছু তরুণ নির্দেশক তৈরি করেছি। যারা ভবিষ্যতে নিয়মিত নির্দেশনা দেবেন।

 

লাকী ইনাম (নাগরিক নাট্যাঙ্গন)

সংকট তো আছেই। স্বাধীনতার পর থেকেই অনেক দলই কাজ করছেন। এসবের মধ্যে কেউ কেউ উত্তরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ নাট্যদলে নতুনদের তৈরি করার সংকট কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। দুই-একজন মেধা ও ভালো কাজ দিয়ে বের হচ্ছেন। বাকিরা তো কাজ করার সুযোগই পাচ্ছেন না। তাই পুরনোদের উচিত নতুনদের তৈরি করা। নাহলে অনেক গ্যাপ তৈরি হবে। অনেক প্রবীণ দলে পুরনো নির্দেশক রয়েছেন, কিন্তু তারা বর্তমানে নির্দেশনা দিচ্ছেন না। ফলে  সেসব বড় দলের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সংকট কাটিয়ে ওঠা দরকার। 

 

আজাদ আবুল কালাম (প্রাচ্যনাট)

আমার কাছে তো সংকট মনে হচ্ছে না। ঢাকা থিয়েটারে নতুন নির্দেশক আছেন। নাগরিকে নতুনরা কিছু নাটক মঞ্চস্থ করলেন। অন্যান্য দলেও নতুন নিদের্শক তৈরি হচ্ছেন। তবে আমি বলব, মেধার সংকট আছে নবীনদের। নবীনরা কাজ করছেন, কিন্তু আমরা তেমন করে দেখতে পাচ্ছি না। দুই-তিনটা কাজ করার পর চোখে পড়বে তাদের কাজ। এ সময় তরুণ নির্দেশক সবাই অনেক ভালো করছেন। তাদের কাজ এখন বিশ্বমানের বলা চলে। আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা যে ভালো ভালো কাজ করছেন তার জন্য উৎসাহ দেওয়ার কেউ নেই। তাদের অনুপ্রেরণা আমরা দিতে চাই না। সে জন্য তারা নিজেদের ঠিকমতো মেলে ধরতে পারছেন না।

 

নুনা আফরোজ (প্রাঙ্গণেমোর)

অবশ্যই আছে! বেশির ভাগ প্রবীণ দলেই এই সংকট প্রবল। পুরনো দলগুলো তাদের ভিতরে নতুন নির্দেশক তৈরি করতে আগ্রহী হন না। কিন্তু আমরা যদি নতুন নির্দেশক না তৈরি করি, তাহলে মঞ্চে পরিবর্তন আসবে না। নতুন কিছু তৈরি হবে না। প্রবীণ দলগুলো সংশয়ে থাকে যে, আমার জায়গা কেউ নিয়ে নেবে। সেটা একদমই ভুল ধারণা। প্রত্যেকটি দলেরই উচিত নতুন নতুন নির্দেশক তৈরি করা। তা নাহলে মঞ্চে কাজ করার তো কেউ থাকবে না। আমাদের দলে আমি আর অনন্ত ছাড়া আরও তিনজন নবীন নির্দেশক কাজ করছেন। আমি মনে করি, নতুনরাই দলকে বাঁচিয়ে রাখে।

 

অলোক বসু (থিয়েটার ফ্যাক্টরি)

মঞ্চে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। তরুণ নির্দেশকরাই ভালো করছেন। ভালো না করলে এতসব ভালো প্রযোজনা আমরা পেতাম না। সেট থেকে শুরু করে সংগীত, লাইট, ডিজাইন, পান্ডুলিপিতে বৈচিত্র্য আসছে। মঞ্চে এখন বিশ্বমানের কাজ হচ্ছে। জোর গলায় বলতে পারি, তরুণ নির্দেশকরা অনেক  ভালো মঞ্চনাটক আমাদের উপহার দিচ্ছেন। শুধু সবার সহযোগিতা দরকার। আর প্রবীণ নাট্যদলে তরুণ নির্দেশক সংকট সবসময় আছে, থাকবে।

 

জাহিদ রিপন (স্বপ্নদল)

সংকট আছে। তবে যে কজন তরুণ নির্দেশক কাজ করছেন, তারা ভালো করছেন। ভালো ভালো নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। মঞ্চনাটক দেখছেন অনেকেই। তবে আগের মতো এখন হলভর্তি দর্শক দেখা যায় না। আশা রাখছি, সব সমস্যা সমাধান হবে। আমরা সর্বদা আলোর পথের সন্ধানী।

সর্বশেষ খবর