শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

এহতেশামের যত আবিষ্কার

এহতেশামের যত আবিষ্কার

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক বিখ্যাত পরিচালক হিসেবে আজও কিংবদন্তি হয়ে আছেন এহতেশাম। যার পুরো নাম আবু নূর মোহাম্মদ এহতেশামুর রহমান। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তিনি শিল্পী তৈরির কারিগর হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। তার হাত ধরে এসে আজও জনপ্রিয় হয়ে থাকা তারকাদের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

যত নির্মাণ

এহতেশাম ১৯৫০ সালে প্রথমে চলচ্চিত্র পরিবেশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ১৯৫৯ সালে ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি রাজধানীর বুকে (১৯৬০), চকোরী (১৯৬৭), চান্দা (১৯৬২), নতুন সুর (১৯৬২), সাগর (১৯৬৫), চাঁদনী (১৯৯১), চাঁদনী রাতে (১৯৯৩), মৌমাছি (১৯৯৪), চোখে চোখে (১৯৯৫), পরদেশী (১৯৯৬) প্রভৃতি ছবি নির্মাণ করেন।

 

শবনম

পুরান ঢাকার নারিন্দায় ১৯৪৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নন্দিতা বসাক ঝর্ণা। ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্রকার এহতেশাম কিশোরী শিল্পী হিসেবে তাকে ‘এদেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে ব্রেক দেন। এরপর আরও ৫টি চলচ্চিত্রে কিশোরী শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৬১ সালে এহতেশাম নির্মাণ করেন ‘হারানো দিন’। এতে এহতেশামের দেওয়া নাম  ‘শবনম’ পরিচয়ে অভিনয় শুরু করেন তিনি। এরপর এহতেশামের ‘চান্দা’ (১৯৬২) ঢালিউডে শবনমের স্থায়ী আসন গড়ে দেয়। এহতেশামের প্রায় সব চলচ্চিত্রের নায়িকা ছিলেন তিনি।

 

শাবানা

১৯৬২ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে এহতেশামের ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শাবানার অভিনয় শুরু। কিন্তু তখন তার নাম শাবানা ছিল না। রতœা নামেই অভিনয়ে যাত্রা। ১৯৫২ সালের ১৫ জুন ঢাকার গেন্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আফরোজা সুলতানা রতœা। ১৯৬৭ সালে ১৩ বছর বয়সে এহতেশামের চলচ্চিত্র ‘চকোরী’তে শাবানা নাম ধারণ করে নায়িকা হন তিনি। এ নামটি তাকে এহতেশামই দিয়েছেন। এ চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হলে শুরু হয় রুপালি পর্দায় নায়িকা শাবানার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা।

 

শাবনাজ

১৯৯১ সালে মুক্তি পায় এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রটি। কিশোর প্রেমের গল্পের এই চলচ্চিত্রে এহতেশাম উপহার দেন শাবনাজকে। শবনম ও শাবানার মতো এহতেশামের আবিষ্কার শাবনাজও প্রথম অভিনয়েই চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান।

 

শাবনূর

শবনম, শাবানা, শাবনাজের পর এহতেশামের আরেক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলেন শাবনূর। ১৯৭৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী শাবনূরের প্রকৃত নাম নূপুর। ১৯৯৩ সালে এহতেশামের দেওয়া শাবনূর নামে এহতেশামেরই ‘চাঁদনী রাতে’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় শুরু।

 

রহমান

১৯৬১ সালে এহতেশাম নির্মাণ করেন ‘হারানো দিন’ ছবিটি। এতে শবনমের বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটান নতুন মুখ রহমানকে। ছবিটির মতো রহমানও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। এরপর এহতেশামের আরও অনেক ছবির নায়ক ছিলেন রহমান। পরবর্তীতে অভিনেতা ও নির্মাতা হিসেবেও দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পান এহতেশামের এই আবিষ্কার।

 

নাদিম

১৯৬৭ সালে এহতেশাম চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন আরেক নতুন মুখ। তিনি হলেন নাদিম। তাকে নিয়ে এই নির্মাতা নির্মাণ করলেন ‘চকোরী’ ছবিটি। পুরনো ঢাকার ছেলে নাদিমের প্রকৃত নাম নাজির বেগ। নাদিম নামটি এহতেশামের দেওয়া। ‘চকোরী’ তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা পায়। এ ছবিতেই নাদিমের সঙ্গে প্রথমবার  নায়িকা হিসেবে জুটি বাঁধেন শাবানা। পরবর্তীতে নাদিম পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে অভিনেতা হিসেবে দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান।

 

নাঈম

১৯৯১ সালে এহতেশাম নির্মাণ করেন কিশোর প্রেমের ছবি ‘চাঁদনী’। এই ছবিতে শাবনাজের সঙ্গে নতুন  মুখ হিসেবে তিনি উপহার দেন নবাব পরিবারের সন্তান খাজা মুরাদের পুত্র খাজা নাঈমকে। প্রথম ছবিতেই নাঈম সফল হন। এরপর জনপ্রিয়তার সঙ্গে প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেন নাঈম।

 

সুভাষ দত্ত

১৯৫৯ সালে এহতেশাম পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘এ দেশ তোমার আমার’ মুক্তি পায়। এই ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন সুভাষ দত্ত। যিনি পরবর্তীতে একজন সফল অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তার সঙ্গে স্থায়ী আসন গড়ে নেন।

 

গোলাম মুস্তাফা

১৯৬০ সালে এহতেশামের ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে বখে যাওয়া জমিদারের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন গোলাম মুস্তাফা। মূলত প্রথম ছবি থেকেই তিনি খলনায়ক চরিত্রের একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এছাড়া তিনি অনেক ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন গোলাম মুস্তাফা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর