মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

এফডিসির আলোচনায় জায়েদ-মৌসুমী-সানী

মৌসুমীর এক বক্তব্যে বদলে গেল অনেক কিছু। এতদিন ছিল অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। এর মাঝে হঠাৎ মুখ খুললেন মৌসুমী। এফডিসির আলোচনা সমালোচনা নতুন রূপ নিল। শনিবার রাতে সত্যি কী ঘটেছিল নায়ক ওমর সানি ও জায়েদ খানের মধ্যে? এ নিয়ে ওমর সানী, জায়েদ খান ও মৌসুমীর বক্তব্য এবং চলচ্চিত্রকারদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

গত শুক্রবার রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ডিপজলের বড় ছেলে সৌমিকের বিবাহউত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যান ওমর সানী, জায়েদ খানসহ বিভিন্ন তারকা। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে ওমর সানী ও জায়েদ খানের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার অভিযোগ আনেন খোদ ওমর সানী। সানী তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে জায়েদ খানের খারাপ আচরণের জেরে তাকে চড় মেরে বসেন। চড়ের পর ওমর সানীকে পিস্তল বের করে মারার হুমকি দেন জায়েদ খান। এ অভিযোগ অস্বীকার করেন জায়েদ খান। এরপর সানী এই ঘটনার জেরে শিল্পী সমিতির কাছে বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন রবিবার। এ নিয়ে যখন চারদিক উত্তপ্ত তখনই মুখ খোলেন মৌসুমী। তিনি জানালেন জায়েদ খান তাকে কখনো উত্ত্যক্তই করেননি।

 

জায়েদ আমার সংসার ভাঙার চেষ্টা করেছে

ওমর সানী

জায়েদ দীর্ঘদিন ধরে আমার বউকে ডিস্টার্ব করছে। আমাদের বিভিন্ন কাজেও বাগড়া দিয়ে আসছে। আমাদের অনেক কাজই সে বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও আমি চুপ ছিলাম, মাটির দিকে তাকিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে অনেক প্রমাণ আছে। তার নামে বহু অভিযোগ আছে। সে অনেক সংসার ধ্বংস করেছে। তার পিস্তল বের করে চলাচল করা, কত মেয়ের পেছনে লেগেছে। এমন বহু অভিযোগ আছে। জায়েদ খান চার মাস ধরে আমার স্ত্রী মৌসুমীকে নানাভাবে হয়রানি ও বিরক্ত করে আসছে। আমার সুখের সংসার ভাঙার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে আসছে। এ ব্যাপারে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার প্রমাণ আমার এবং আমার ছেলের কাছেও আছে। তাছাড়া মুরব্বি হিসেবে আমি ডিপজল ভাইয়ের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু ওই বিষয়ের কোনো সমাধান হয়নি। ডিপজল ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে জায়েদ খানের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে সংযত হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করি। এতে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং হঠাৎ করে তার পিস্তল বের করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

 

সানী মিথ্যা বলছে, জায়েদ আমাকে অসম্মান করেনি

মৌসুমী

ওমর সানী মিথ্যাচার করছে, জায়েদ আমাকে অসম্মান করেনি। আমি মনে করি আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি, সে আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, তা খুবই ভালো সম্পর্ক। সেখানে ও আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ও অনেক ভালো ছেলে। কেন এই প্রশ্নটা আসছে, সে আমাকে বিরক্ত করছে- উত্ত্যক্ত করছে। আমি মনে করি, এখানে জায়েদের খুব একটা দোষ নেই। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাকে ছোট করার মধ্যে যাকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করে আসছি সেই ওমর সানী ভাই কেন এত আনন্দ পাচ্ছেন- সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমার কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই আমার সঙ্গে সমাধান করবে, সেটিই আমি আশা করি।

 

 

সব মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

জায়েদ খান

পুরো ঘটনাটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ব্যাপারে মৌসুমী আপার সঙ্গে কথা বললেই সব জানতে পারবেন। আমি কখনোই তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করিনি। সানী ভাই একটার পর একটা মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছেন। ১৫-২০ দিন আগেও ডিপজল ভাইসহ অন্যরা মিলে মিটিং করেছি। সেখানে মৌসুমী আপা এসেছেন। আমাদের কথাও হয়েছে। সম্পর্ক খারাপ হলে মিটিংয়ে আমাদের থাকার কথা নয়। ওমর সানী মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে শিল্পী হিসেবে অসম্মান করছেন। একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীকে এভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করতে পারেন না। প্রথমত, পিস্তল আমার সঙ্গে ছিল না। আর ঘরসংসার ভাঙার ইঙ্গিত খুবই খারাপ। এতে মৌসুমীকেও ছোট করা হচ্ছে। এটা সত্য কি না, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখুন, তাহলেই সত্যটা বেরিয়ে আসবে। বিয়ের স্থানটা নিরাপত্তায় ঘেরা ছিল, গেটে মেটাল ডিটেক্টর থাকে, কড়া সিকিউরিটি ছিল, এখানে বৈধ আর্মস নিয়ে কেউ ঢুকতে পারে না। সানী ভাই  বলছেন, ‘পিস্তল বের করে বলেছি গুলি করব, মেরে ফেলব, এটা তিনি ছাড়া আর কেউ দেখল না।’ সানী ভাই যদি বলতেন, ‘রাস্তায় আমার হাতে পিস্তল দেখেছেন সেটা মানাত। নির্বাচন ঘিরে কেসের ঝামেলা আছে, সামনে রায় আছে, এটাকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন।

 

সংযত হতে হবে : ববিতা

আমি আসলে এ ঘটনার সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে বলব এমন ঘটনা যদি ঘটেও থাকে তাহলে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের মানুষের জন্য তা চরম অসম্মানজনক। কারণ একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। এই শিল্প ও শিল্পটির সঙ্গে যুক্ত সবার ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্ব চলচ্চিত্রের সবার।

 

এটি অসভ্যতা : কাজী হায়াৎ

জায়েদ খানের কাছে কে পিস্তল দিল? মানে পিস্তল রাখার সৌভাগ্য তার কীভাবে হলো? কেই বা সে ব্যক্তিত্ব? কত টাকার মালিক যে, তার আত্মরক্ষার জন্য আর্মস দিতে হবে সরকারের। এটা আমার কাছে দুর্বোধ্য লাগে। এটি একটি অসভ্যতা ছাড়া আর কিছু নয়। থাপ্পড়, মারামারি, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, তারপর পিস্তল বের করা- সবমিলিয়ে এটাকে অসভ্যতা বলা ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না। এরা কেউই কাজের লোক নয়, পিঠ চুলকানোই এদের স্বভাব।

 

খতিয়ে দেখব : কাঞ্চন

কারও ব্যক্তিগত বিষয়ের বিচার করা আমার দায়-দায়িত্বের ভিতর পড়ে না। শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে একজন শিল্পী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আরেকজন শিল্পীর বিরুদ্ধে, তাই বিষয়টি এখন আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।

 

ওখানে কিছুই ঘটেনি : রোজিনা

ওখানে কোনো কিছুই ঘটেনি। যতক্ষণ আমি ছিলাম ততক্ষণ এমন ঘটনা ঘটতে দেখিনি। ডিপজল ভাই, অঞ্জনা, জায়েদ খানসহ অনেকেই আমরা একসঙ্গে ছিলাম এবং ছবি তুলছিলাম। একটা সময় দেখেছি যে, ওমর সানী এসেছেন। তারপর কখন চলে গেছেন তাও জানি না।

 

কোনো ঘটনাই ঘটেনি : ডিপজল

যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, আমার জানা মতে কোথাও ঝগড়া হয়নি। এটা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন; মারামারি বা ঝগড়া হলে আমার কানে আসত। আর যে টাইম বলা হচ্ছে তখন আমরা খাইতে বসছি ১০-১২ জন, রোজিনা ম্যাম ছিলেন, অঞ্জনা ছিল...। যদি ধরেও নিই, তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য রয়েছে, তাহলে কি তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে এমন ঘটনা ঘটাবে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তারা তো শিল্পী, তারা জানে কোথায় কেমন ধরনের আচরণ করতে হয়। পুরো বিষয়টিই ভিত্তিহীন ও অসত্য।

সর্বশেষ খবর