শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : - শিবলী মোহাম্মদ

আমি স্বপ্ন দেখি না, স্বপ্ন দেখা মূল্যহীন

আমি স্বপ্ন দেখি না, স্বপ্ন দেখা মূল্যহীন

আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে ‘কত্থক নৃত্যসন্ধ্যা’।  এ নিয়ে এবং নাচের অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নাচের সংগঠন নৃত্যাঞ্চলের কর্মকর্তা শিবলী মোহাম্মদ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আজকের কত্থক নৃত্যসন্ধ্যা নিয়ে কিছু বলুন-

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কত্থক নৃত্যসন্ধ্যা। এখানে নৃত্যাঞ্চলের ৩০০ ছেলেমেয়ে পারফর্ম করবেন। এই আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই কত্থক সন্ধ্যা নিবেদন করছি খ্যাতিমান পন্ডিত বিরজু মহারাজের নামে। বাংলাদেশে আমিই প্রথম আমার এই গুরুর কাছ থেকে নাচে দীক্ষা নেই। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর ৮৫তম জন্মদিন। তাই আজকের এই মহতী সন্ধ্যা তাকে ঘিরেই উদ্ভাসিত হবে।

 

কত্থক নাচের সঙ্গে দীর্ঘ সময় যুক্ত রয়েছেন, এ নিয়ে বর্তমান কর্ম-তৎপরতা কেমন?

জ্বি, হ্যাঁ, এ দেশে কত্থক নাচের প্রথম ছাত্র আমি। সেই থেকে কত্থক নাচের প্রসারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। তা প্রায় তিন যুগ তো হয়ে গেল।

 

বর্তমানে কত্থক নাচের ক্ষেত্রে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

এক কথায় অসাধারণ সাড়া পাচ্ছি। অনেকে বলে এই নাচ করার সুযোগ সীমিত, চর্চা তেমন হয় না। এটি ঠিক কথা নয়, নৃত্যাঞ্চলের মাধ্যমে আমরা প্রচুর প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। প্রচুর কত্থক নাচের শিল্পী তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে।

 

ক্লাসিক্যাল ডান্স পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই অবহেলিত। অথচ ভারতে বিরলা ও টাটাসহ এ ধরনের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাসিক্যাল নাচের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। তাই বলে আমরা ও আমাদের নৃত্যাঞ্চল থেমে নেই

 

বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের নাচের ব্যাপারে কী পরামর্শ দেবেন?

আমি সবাইকে একটি কথাই বলতে চাই, আর তা হলো- নাচকে সাধনা হিসেবে নিতে হবে। গুরুর কাছে নাচের দীক্ষা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই যথাযথ নৃত্য শিক্ষায় গুরুর দীক্ষা নিতেই হবে। আমরা নৃতাঞ্চল থেকে এ বিষয়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেছিলাম। তাতে এ গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণের বিষয়টিই ছিল মুখ্য।

 

বর্তমানে ক্লাসিক্যাল ডান্সের তুলনায় কমার্শিয়াল ডান্স বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়, কথাটি কতটা সত্য?

আসলেই তাই, কমার্শিয়াল ডান্স যেভাবে যতটা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে ক্লাসিক্যালের ক্ষেত্রে চিত্রটা একবারে উল্টো। ক্লাসিক্যাল ডান্স পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই অবহেলিত। অথচ ভারতে বিরলা ও টাটাসহ এ ধরনের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাসিক্যাল নাচের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। তাই বলে আমরা ও আমাদের নৃত্যাঞ্চল থেমে নেই। আমার সাহস, আত্মবিশ্বাস প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমে যাই। আর এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আমাদের শুভাকাক্সক্ষীরা।

 

আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের নাচে ক্লাসিক্যাল নৃত্য অবহেলিত বলেও অভিযোগ রয়েছে, সত্যি কী তাই?

খুবই সত্যি কথা, আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের গোড়া পত্তনের সময় এ বিষয়ে প্রাধান্য থাকলেও এক সময় পুরোপুরি কমার্শিয়াল ডান্স চলচ্চিত্রকে দখল করে নেয়। অথচ ভারতে আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত কত্থক, দ্রুপদীসহ ক্লাসিক্যাল ডান্সেরই আধিক্য রয়েছে।

পন্ডিত বিরজু মহারাজ সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘সতরঞ্জ কি খিলাড়ি’, ‘দেবদাস’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’র মতো অনেক বিখ্যাত ছবিতে ক্লাসিক্যাল ডান্স পরিচালনা করেছেন। এর আগে তাঁর চাচা গুরু লাচ্ছু মহারাজ ‘পাকিজা’, ‘মুঘলে আজম’সহ বিখ্যাত যত ছবিতে নৃত্য পরিচালনা করেন।

 

আমাদের চলচ্চিত্রে ক্লাসিক্যাল ডান্স অবহেলিত কেন?

এক কথায় বলব, এ ক্ষেত্রে নির্মাতার রুচি ও পছন্দের দৈন্যতা রয়েছে। এক সময় আমরা এই অভাব পূরণের চেষ্টা করেছি কিন্তু পরে এসব নির্মাতার সহযোগিতা না পেয়ে বুঝে গেছি আর হবে না। এখনো ইচ্ছে হয়, কিন্তু নির্মাতার রুচির দৈন্যতা না ফুরালে তা আর হওয়ার নয়।

 

ক্লাসিক্যাল ডান্সের আগামী নিয়ে কেমন স্বপ্ন দেখেন?

‘আমি স্বপ্ন দেখি না। কেননা, স্বপ্ন দেখা মূল্যহীন। স্বপ্ন বলতেই মানুষ বোঝে কেবল গাড়ি-বাড়ি-সম্পদ গড়া। অথচ মৃত্যুর পর মানুষ এসব নিয়ে যেতে পারছে না,’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেন শিবলী। তিনি বলেন, ‘আমি, নীপা, জাহাঙ্গীর ভাইয়েরা মিলে আলাপ করতাম, আমরা নৃত্যাঞ্চলটাকে বড় করে করব। অনেক বড় স্বপ্ন তাঁদের চোখে।  কিন্তু আমি কখনো স্বপ্ন দেখতাম না।

আমার মনে হতো, কয় শ বছর বাঁচব? আমরা কি তবে পরিকল্পনা করব না? আমি মনে করি, আমাদের উচিত বর্তমানটাকে সুন্দর করা। যখন চলে যাওয়ার, তখন তো যাবই।’

সর্বশেষ খবর