রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : চঞ্চল চৌধুরী

শিল্পীর দায়িত্বই হচ্ছে সেই চরিত্রটি হয়ে ওঠা

দুই বাংলার তারকা চঞ্চল চৌধুরীর ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। দেশে নিয়মিত সিনেমা-সিরিজ করছেন, আবার কলকাতায়ও ডুব দিয়েছেন নতুন নতুন প্রজেক্টে। সম্প্রতি অংশ নিয়েছেন সৃজিত মুখার্জির নির্মাণে মৃণাল সেনের বায়োপিক ‘পদাতিক’-এ। এসব ব্যস্ততার ফাঁকে এক দুুুপুরে এই তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

শিল্পীর দায়িত্বই হচ্ছে সেই চরিত্রটি হয়ে ওঠা

কলকাতা থেকে কবে ফিরেছেন?

তাও তো এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে।

 

মনপুরার সেই সোনাই চরিত্রের পর আয়না, মিসির আলী, চান মাঝিরূপে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। এবার  তো মৃণাল সেনে একাকার চঞ্চল....

আসলে যখন যে চরিত্রে অভিনয় করি সেই চরিত্রের সঙ্গে ব্যাপারটা এরকম নয় যে, শুধু ক্যামেরা রোল দিল, অ্যাকশন বলল আর সঙ্গে সঙ্গে অ্যাক্টিং শুরু হয়ে গেল। ওইভাবে আসলে চরিত্র হয়ে ওঠা যায় না। সেই চরিত্রটাকে নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। নিজের মধ্যে ধারণ করতে হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। হঠাৎ করে যে আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে মৃণাল সেন হয়ে যেতে পারব, এটা তো অসম্ভব ব্যাপার! শুধু মৃণাল সেন নয়, এর আগেও আমার স্পেশাল যে চরিত্রগুলো আছে বা যে কাজগুলো দর্শকনন্দিত বা দর্শক পছন্দ করেছে, ওই চরিত্রগুলোর সঙ্গে আসলে অনেকদিনের বসবাস। এই চরিত্রগুলো হয়ে উঠার জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। রিহার্সেল করতে হয়। আসলে চরিত্রগুলোকে প্রথমে নিজে বিশ্বাস করা তারপর বিশ্বাসের জায়গা থেকে নিজেকে ভুলে ওই চরিত্র হয়ে ওঠা। এটা একটা অভিনেতার অভিনয় প্রক্রিয়া বা প্রস্তুতি। যেটা সে নিজের মতো করে নেয়। এটা একেক অভিনেতা একেকভাবে নেয়, আমি আরেকভাবে নিই। তবে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতেই হবে।

 

সেই প্রক্রিয়া কি শেষ হয়েছে?

মৃণাল সেনের ক্ষেত্রে যদি বলি এখনো শেষ হয়নি। গত বছর যখন হাওয়া রিলিজ হলো, সেই হাওয়া সিনেমার শুটিং করেছিলাম আমরা দুই-তিন বছর আগে। ৪৫ দিন আমরা মাঝসমুদ্রে শুটিং করেছিলাম। কিন্তু ওই চরিত্রের সঙ্গে বসবাস দুই-তিন বছর ধরে। রিহার্সেল করা বা স্ক্রিপ্ট রিডিং সবকিছু মিলিয়ে সুমনের সঙ্গে আমার ক্যারেক্টার ব্রিফিং, তো দীর্ঘ সময় এই গল্পের জন্য চরিত্রের জন্য লেগে থাকা। তো মৃণাল সেনেরও যখন আমি এই চরিত্রে অভিনয় করব তখন থেকে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। এখনো কাজটা চলছে, শেষ হয়নি। এটা শেষ হওয়ার পরও সেই ঘোরটা, আবেশটা ভিতরে থেকেই যাবে।

 

চঞ্চলকে ইদানীং মৃণাল সেনই ভাবছেন সবাই...

হাহাহা... এখনো আমি যেভাবে বসি বা কথাবার্তা বলি বা কোথাও বসতে গেলে ওই চরিত্রের জন্য আমি যে যে প্রিপারেশনগুলো নিচ্ছি, সেরকম ভঙ্গিটা অটোম্যাটিক্যালি চলে আসে ভিতরে। তার মানে শুধু এমন নয় যে, যেদিন শুটিং আছে সেদিন ক্যামেরার সামনে গিয়ে ওই চরিত্রটি হওয়ার চেষ্টা করছি। আমাকে ওই ঘোরের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। এ কারণেই দেখে অনেকে ভাবছেন চুল বড়, মৃণাল সেনের মতোই তো লাগছে! আসলে যতদিন পর্যন্ত কাজটা শেষ না হচ্ছে ফিূবা নতুন কোনো চরিত্রে প্রবেশ করছি ততদিন পর্যন্ত কিছুটা বিষয় থাকবেই।

 

মৃণাল সেন হয়ে উঠতে  পেরেছেন?

না, আমি মৃণাল সেন হয়ে উঠেছি তা কখনো বলতে চাই না। এটা আসলে দর্শক দেখার পরে বলতে পারেন যে, কতটুকু হয়েছে বা কতটুকু করতে পেরেছি আর কতটুক হয়নি। আমার জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করছি। কারণ একজন শিল্পী বা অভিনেতার দায়িত্বই হচ্ছে সেই চরিত্রটি হয়ে ওঠা। সেটার জন্য সে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে থাকে। কখনো হয় বা কিছুটা হয় বা কখনো কিছুই হয় না। এটা দর্শক বিচার করবে।

 

সব ক্ষেত্রে চঞ্চল বন্দনা কতখানি উপভোগ করেন?

অনেক সময় বিব্রতও হই। কেউ কেউ অবশ্য আনন্দিতও হন। আমি বিব্রত হই এ কারণে যে, এতে প্রত্যাশার চাপ বেড়ে যায়। আমাকে নিয়ে মানুষ যত বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে আমার চাপটা তত বাড়বে। কারণ আমাকে তাদের চাওয়াটাকে পূরণ করতে হবে।

 

অঞ্জন দত্তের সঙ্গে একটি কাজের কথা ছিল?

হ্যাঁ, করার কথা ছিল। আসলে হয় কি একটা কাজ করার জন্য যে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করতেই পারে। বা প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে তা ফাইনাল হওয়ার সঙ্গে তো অনেক কিছুরই সম্পর্ক। বাজেট, প্রোডাকশনের প্রিপারেশন। তো সবটা মিলে অনেক সময় হতে হতেও হয় না। কিন্তু করার আগ্রহটা থেকে যায়। যেমন এবারও আমি কলকাতায় যখন কাজ করতে গেছি পদাতিকের। তখন অঞ্জনদা এক দিন আমাকে ফোন করেছিল। ফোন করে বললেন যে, ‘তোমার সঙ্গে তো এর আগে দুটো কাজ করতে করতে তো হলো না। তা আরেকটি কাজের জন্য আমি তোমার নাম প্রস্তাব করতে চাই। তুমি আমার সঙ্গে কাজ করবে?’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই দাদা প্রস্তাব করেন।’ তো এই পর্যন্ত কথা আছে, এরপর বাজেট বা সবকিছু মিলিয়ে যদি কাজটা ঠিকঠাক থাকে তো হয়ে যাবে, না হলে হবে না।

 

নতুন সিনেমা বা কাজ মুক্তি পেলে এ দেশের ইন্ডাস্ট্রি ও শিল্পীদের এপ্রিসিয়েশন খুবই নগণ্য। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে যখন একটি ভালো কাজ হয়, তা যদি ইন্ডাস্ট্রির পাঁচশও দেখার আহ্বান জানায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তা কিন্তু ভালো প্রচার। কিন্তু সেই কাজটি তারা করেন না। নানা কারণে হয়তো করেন না। এক হতে পারে ঈর্ষার মানসিকতা থেকে। আমার কাজগুলোর ক্ষেত্রেও দেখেছি, ইন্ডাস্ট্রির মানুষ তেমন করে সেগুলো প্রচার করেননি। করে কখন? যখন দেখে এই কাজটি কোনোভাবেই আর ঠেকানো গেল না, তখন করে।  তখন মুখ খোলেন বা প্রশংসা করেন। আমি মনে করি, এই ইন্ডাস্ট্রির যেই ভালো কাজ করুক ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব তাকে প্রমোট করা।

 

নতুন কোনো গান আসছে?

আইপিডিসির সঙ্গে দুই সিজনের পর নতুন সিজনটায় কিছু গান করেছি। সিনেমা অঙ্গনের অত্যন্ত গুণী মানুষ গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ট্রিবিউট করে সিজনটা হচ্ছে, সেখানে শাওনের সঙ্গে ডুয়েট একটা গান করেছি। তারপর আরও একজন শিল্পীর সঙ্গে ডুয়েট আরেকটা করেছি।  এগুলো শ্রদ্ধেয় গাজী ভাইয়ের লেখা গান।

 

সর্বশেষ খবর