আজ দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূরের জন্মদিন। দিনটিকে তেমন ঘটা করে পালনের ইচ্ছা নেই জানিয়ে শাবনূর বলেন, সবার দোয়া চাই। যেন যত দিন বাঁচি সুস্থ-সুন্দরভাবে বাঁচতে পারি। চলচ্চিত্র জগতের কল্যাণে কিছু করে যেতে পারি। শাবনূর তাঁর ব্যক্তি জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগের ক্যারিয়ারে যত ঝড়ঝাপটা আমার ওপর এসেছে, যত স্ক্যান্ডাল আমাকে ফেস করতে হয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোনো শিল্পীকে বোধ করি অতটা করতে হয়নি। আমার প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, নায়ক সালমান শাহ, নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, এক বিদেশি নাগরিককে আমার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যে সম্পর্কের গুঞ্জন, সালমানের হত্যা/আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত হওয়া, একাধিকবার এফডিসির বিভিন্ন সমিতি কর্তৃক ব্যান হওয়া, উফ্! কী ফেস করতে হয়নি আমাকে- একই সঙ্গে পারিবারিক নানা টানাপোড়েনে অতিষ্ঠ ছিল আমার জীবন। বিশেষ করে স্বামীর সঙ্গে আমার ডিভোর্স, অন্য যে কেউ হলে বোধ হয় পাগল হয়ে যেত, সমস্যা ভুলে থাকার জন্য মাদকের আশ্রয় নিত বা আত্মহত্যা করত। আমি কিন্তু সব নেগেটিভকে মনের জোরে পাশ কাটিয়ে জীবনটাকে পজিটিভবলি গড়ে তুলতে পেরেছি বলে সুখ আমার সঙ্গে বিট্রে করতে পারেনি। আসলে জীবনটা নিজের মতো করেই সাজাতে হয়। আমাদের জীবনটা একটু অন্যরকম। আমাদের কারও না কারও অশান্তি আছে, দুঃখবোধ আছে। আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃখী। অনেক বিপর্যস্ত। জীবন মানে সুখ- দুঃখের লুকোচুরি। চাইলেই সব সময় জীবনকে ইচ্ছামতো সাজানো যায় না। তারপরও বলব আদর্শ, সততা বজায় রেখে মনকে যদি ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলা যায়, তাহলে জীবনটা নিজের মতো করে সাজানো যায়। এর জন্য ইচ্ছাশক্তিই প্রধান। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই বাজে ভয়টা জীবনে চলার পথে বড় অন্তরায়। জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যে এগিয়ে নিতে সৎ সাহস নিয়ে নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলেই সফলতার দেখা মিলবে। শাবনূর অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমার আর সংসারি হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া যে কোনো নারীর জন্য ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এ কারণেই বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হয়েছে আমার। অনেকে মনে করেন, একবার কারও প্রতারণার শিকার হলে আর কোনো পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস বা বিয়ে করা যায় না। এটি ভুল ধারণা। ভালোমন্দ পৃথিবীর সবকিছুতেই আছে। তাই বলে ভালো মানুষ যে আর পাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। তবে আমার আর বিয়ের ইচ্ছা না থাকার কারণ হচ্ছে একমাত্র পুত্র আইজানকে প্রতিষ্ঠা করা। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শ্রদ্ধেয় অভিনেত্রী ববিতা আপুও কিন্তু তাঁর একমাত্র সন্তান অনীককে গড়ে তোলার জন্য প্রচ- সেক্রিফাইস করেছেন এবং তার ভালো ফলও পেয়েছেন। আমিও তাই করতে চাই। আমার যদি সন্তান না থাকত তাহলে হয়তো ভালো মনের একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে খুঁজে নিতাম। আজ আমার জন্মদিনে সবার দোয়া চাই আমার ও আমার সন্তান আইজানের জন্য। ওকে যেন মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, আমরা দুজনই যেন প্রকৃত সুখী হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো মহাসুখে কাটাতে পারি।
শাবনূর বলেন, গত বছর রঙ্গনা নামে এক ছবিতে অভিনয়ের কাজ শুরু করেছিলাম। নানা কারণে ছবিটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। শিগগিরই কাজে ফেরার ইচ্ছা আছে। তিনি আরও বলেন, অভিনয়কে খুব মিস করি। অভিনয়ের জন্য এক সময় দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ছুটে বেড়াতাম। তাই এখন ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না। সবার সঙ্গেই মিশছি। হুট করে কারও বাসায় গিয়ে চমকে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। প্রায় অনুষ্ঠানেই উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করছি। আর ঘর-সংসার তো আছেই। আমার বাচ্চাটা খুব দুরন্ত। বাচ্চা আর সংসার সামাল দিচ্ছি। এই তো এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলচ্চিত্রের সময়টা এখন আবারও ভালোর দিকে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, শিল্পের প্রতি আন্তরিক ও চলচ্চিত্রের সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে ছবির ব্যবসা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে, আরও ভালো অবস্থানে যাবে। তখন অনেকে আবারও চলচ্চিত্র নির্মাণে ফিরবে।