রাজ্জাক ভাই অনেক বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘ওরা এগারো জন’-এ অভিনয় করেছিলেন। রাজ্জাক ভাইকে নিয়ে অনেক স্মৃতি, অনেক কথাই আমার মনে পড়ে।
আমি নায়ক রাজ্জাক অভিনীত প্রথম ছবি দেখি কিশোর বয়সে। নাম ছিল ‘ছদ্মবেশী’। ক্যামেরাম্যান কিউ এম জামান পরিচালিত এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭০ সালে। ছবিতে একটি গাড়ি ছিল। সেটা পানিতেও চলত, ডাঙায়ও চলত। গাড়িটি চালিয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। সেই প্রথম আমাদের কিশোর মনে দাগ কাটল যে এ রকম একটা গাড়ি আর এ রকম একজন নায়ক। শুনলাম এ গাড়িটি তাঁর। ফলে আরও এক ডিগ্রি বেড়ে গেল শ্রদ্ধা-ভক্তি। বাপরে বাপ এ রকম একটা গাড়ি চালায়! আরও কিছুদিন পরে শুনলাম যে, তিনি গুলশানে একটি বাড়ি তৈরি করবেন, বাড়ির ভিতরে থাকবে একটা সুইমিং পুল। সবকিছু মিলিয়ে মনে হলো, সত্যি সত্যি তিনি একজন আধুনিক নায়ক।
এক পর্যায়ে শুনলাম, যে স্কুলে আমি পড়ি সেই স্কুলের কাছাকাছি একটি বাড়িতে রাজ্জাক ভাই থাকেন। ফার্মগেটে। তিনি একটা বিরাট শেবারলেট গাড়ি চালান। তখন ঢাকা শহরে এ ধরনের গাড়ি খুব কম ছিল। লম্বা, বিশাল গাড়ি। সেই গাড়িটি দেখেই আমার এক বন্ধু খবর দিল- গাড়িটি যখন এ বাড়িতে, তাহলে তিনি এ বাড়িতেই থাকেন।

সত্যি সত্যি জানলাম ফার্মগেট এলাকায় তিনি থাকেন। আমরা স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে বহুদিন তাঁর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম, কখন নায়ক রাজ্জাক বের হবেন। এফডিসির গেটের সামনেও দাঁড়িয়ে থাকতাম তাঁকে একনজর দেখার জন্য।
একদিন একটা ছবি রিলিজ হলো- ‘নীল আকাশের নীচে’। স্বাধীনতার আগে, ঈদের ছবি। ঢাকা শহরে এ ছবির সেইসময় টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। ছবি যদি প্রথম দিকে না দেখি তাহলে তো পিছিয়ে যাব। শুনলাম ছবিটি ডেমরার একটি হলে চলছে, সেখানে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কয়েকজন বন্ধু দলবেঁধে ডেমরার রানীমহল সিনেমা হলে গিয়েছিলাম এ ছবিটি দেখার জন্য।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পে নেতৃত্ব দেওয়া একটা বিশাল ব্যাপার। সেটা কিন্তু রাজ্জাক ভাই সব সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যেকোনো ব্যাপারে রাজ্জাক ভাইকে সব সময় পেয়েছি। তিনি আমাদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁর মতো একজন বড় নায়ক টেলিভিশনের জন্য কাজ করতে কখনোই দ্বিধাবোধ করেননি।
‘নীল আকাশের নীচে’ ছবিতে একটা হিট গান ছিল। ‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তা চলেছি একা’। আমরা ইমপ্রেস টেলিফিল্মের মাধ্যমে ‘আয়না কাহিনী’ নামে একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলাম, যে ছবির পরিচালক ছিলেন রাজ্জাক ভাই। নায়ক ছিলেন রাজ্জাকের ছেলে সম্রাট। সেই ‘আয়না কাহিনী’তে সম্রাটের মুখে এ গানটিই ব্যবহার করেছিলেন রাজ্জাক ভাই। চ্যানেল আই অফিসে আমার রুমে বসে পরিকল্পনা করেছিলেন যে, ওই হিট গানটি এখানে ব্যবহার করবেন। আমি খুবই পুলকিত হয়েছিলাম। গানটির স্মৃতি আমার কাছে খুবই স্মরণীয়।
রাজ্জাক ভাই শেষ জন্মদিন করেছেন চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে। শেষ নাটক করেছেন চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে। শেষ চলচ্চিত্র করেছেন চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে। অনেকেই মনে করেন, চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে রাজ্জাক ভাইয়ের সম্পর্ক অনেক পুরনো। আসলে রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমাদের চ্যানেল আই পরিবারের আত্মার আত্মীয়।