গাজী মাজহারুল আনোয়ার
গীতিকাররা রয়্যালিটি পান না এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পৃথিবীর সব জায়গাতেই একই অবস্থা। আসলে প্রপার ওয়েতে কিছুই চলছে না। একের অধিকার অন্যে খর্ব করছে। এই অবস্থায় কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। অনেকে অন্যায়ভাবে সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে গীতিকারদের বঞ্চিত করছেন। মৃত্যুর পরেও একজন গীতিকার রয়্যালিটির দাবিদার। অথচ বেঁচে থাকতেই তা দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে গান লিখাকে কেন পেশা হিসেবে নেওয়া হবে। এই অনিয়ম দূর করার সংগ্রামে কেউ এগিয়ে আসেন না। আমার বয়স হয়েছে। তাই এসব নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছা করে না। প্রায় ২২ হাজার গান লিখেছি। উপযুক্ত রয়্যালিটি কখনো পাইনি। মান সম্মত গানের জন্য এই অনিয়ম দূর করতে হবে। প্রাপ্তি ও বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। গানের রয়্যালিটির বিষয়টি সর্বজনীন করতে হবে। না হলে আমাদের গানের সোনালি ঐতিহ্য বিলীন হতেই থাকবে।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
আমাদের দেশে দেশাত্দবোধক গানগুলো অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ দিবসে হরহামেশাই এই গানগুলো বাজানো হয়। একটা গানকে শ্রোতার কান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তিনজন মানুষের প্রয়োজন। গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। কালে কালে গানের জন্য জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন সংগীতশিল্পীরা। এখনো পর্দার আড়ালে রয়ে গেছেন অনেক গীতিকার। গীতিকার ছাড়া গান কখনো হতে পারে না। একটা গানের কপিরাইট করতে হলে গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী- এই তিনজন মানুষের সমন্বয় হতে হবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কপিরাইট আইন করতে এ তিনজন মানুষকে কখনো এক করা যায়নি। তাই তৃতীয় পক্ষ সবসময় ফায়দা লুটেছে।
গীতিকারের রয়্যালিটি নিশ্চিত করতে হলে এই তিনজন মানুষ এক হয়ে গানের কপিরাইট করতে হবে। তাহলেই গীতিকাররা রয়্যালিটি পাবেন।
শহীদুল্লাহ ফরায়েজী
গানের মূল অনুষঙ্গ হচ্ছে গীতিকার। একটা গান না লিখা হলে তার ওপর সংগীতায়োজন কিংবা কণ্ঠ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সবসময়ই অবহেলিত হয়ে আসছেন গীতিকাররা, যা কখনো কাম্য নয়। সুনির্দিষ্ট কপিরাইট আইনই পারে গীতিকারদের রয়্যালিটি ফিরিয়ে দিতে। গীতিকারদের রয়্যালিটি নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে একজন গীতিকার আরও ভালো লিখবেন। আর এ জন্য সুরকার, সংগীতশিল্পী ও গীতিকারদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত গীতিকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত গান তার মহিমা ধরে রাখতে পারবে না। রয়্যালিটির অভাবে গান লিখাকে অনেকে পেশা হিসেবে ধরে রাখতে পারছেন না। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে গীতিকাররা আজ তাদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীর অনেক স্থানেই এই অব্যবস্থা চলছে। এই অনিয়ম দূর করতে হলে সংগীত সংশ্লিষ্টদের একতা জরুরি।
কবির বকুল
গীতিকারদের রয়্যালিটির বিষয়টি এখনো অবহেলিত থাকা সত্যিই দুঃখজনক। একজন গীতিকার তার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চয়ই চাইবেন। তা না হলে তিনি এই পেশায় থাকবেন কেন? বর্তমানে এই অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। তাই মানসম্মত গানের অভাব বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে এখন গান লিখেন বাধ্য হয়ে। অথবা অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে। গান হচ্ছে মনের খোরাক। আত্দার মেলবন্ধন। গীতিকারকে যদি আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গান লিখতে হয় তা হলে তা মানসম্মত হবে কীভাবে। এই উপেক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাবার এবং একতাবদ্ধ হয়ে দাবি আদায়ের সময় কী কারও নেই? এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মানসম্মত গান একেবারেই ফুরিয়ে যাবে। তাই সংগীত জগতের মানুষের উচিত সম্মিলিতভাবে অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া। আগের অবস্থা অনেকটা ভালো ছিল, তাই মান ঠিক থাকত। এখন তা নেই।