চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নীপা ওরফে মাহিয়া মাহির সঙ্গে শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে শাওনের বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলামের আদালতে এ কাবিননামা উপস্থাপন করেন আসামি শাওনের আইনজীবী মো. বেলাল হোসেন। পাশাপাাশি তিনি আরও জানান, 'মাহির বিয়ে হয়েছিল গত বছর এবং এই বিয়ের দেনমোহর ছিল ৪ লাখ টাকা।'
এদিকে, ফাঁস হওয়া ওই কাবিননামায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, গত বছরের ১৫ মে শাওনকে বিয়ে করেন মাহি। শাওনের আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, ওই বিয়েতে ৪ লাখ টাকা দেনমোহর উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া, কাবিননামায় মাহির জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭/১০/১৯৯৪ আর শাওনের ১৫/০২/১৯৯৪। বিয়েতে মাহির উকিল হিসেবে ছিলেন মো. হারুন অর রশিদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডায় থাকেন।
তবে শাওনের আইনজীবীর দাখিল করা এই কাবিননামাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন মাহিয়া মাহি। তিনি বলেছেন, ''আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যে এই মিথ্যা ও বানোয়াট কাবিননামা তৈরি করা হয়েছে, তা আমি আদালতে প্রমাণ করব।''
এদিকে, মঙ্গলবার শাওনের আইনজীবী আদালতে কাবিননামা উপস্থাপনকালে বলেন, কাবিননামায় উল্লেখ রয়েছে, শাহরিয়ারের সঙ্গে বিয়ের আগে মাহির আর কোনো বিয়ে হয়নি। সেই অনুযায়ী বাদিনী মাহি আসামি শাওনের বৈধ স্ত্রী। এ কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যা কোনো মানহানিকর, অশ্লীল ও উসকানিমূলক নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপরাধের আওতায় এটি আসে না। মুসলিম আইন অনুযায়ী স্বামী বর্তমান থাকায় স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেন না। যদি স্বামী থাকা অবস্থায় কোনো নারী আরেকটি বিয়ে করেন, তা ফৌজদারি অপরাধ। বরং মাহি তার বিয়ের কথা গোপন করে গত ২৫ মে সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ মোহাম্মদ অপুকে বিয়ে করেন।
এর আগে ২৭ মে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে বাদী হয়ে মামলা করেন মাহিয়া মাহি। মামলার এজাহারে বাদী শারমীন আক্তার নিপা (মাহি) উল্লেখ করেন, ‘আমার পূর্বপরিচিত (বন্ধু) শাহরিয়ার ইসলাম শাওন (২৩), পিতা- নজরুল ইসলাম, মাতা- শিউলি আক্তার, বাসা- ক/১৩, দক্ষিণ বাড্ডা, গুলশান, ঢাকা তার কাছে থাকা আমাদের কিছু অন্তরঙ্গ স্থিরচিত্র কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল এবং ফেসবুকে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে তার সাথে তার বন্ধু হাসান, আল আমিন, খাদেমুল এবং তার খালাতো ভাই রেজওয়ান জড়িত রয়েছে বলে আমার ধারণা। উল্লেখ্য যে, গত ২৫/০৫/২০১৬ খ্রি তারিখ অন্যত্র আমার বিবাহ সম্পাদিত হয়। এখনও বিবাহপরবর্তী অনুষ্ঠান চলছে। এই অবস্থায় আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এবং সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য তারা এসব করছে।’
এজাহারে আরও বলা হয়, ‘ছড়িয়ে দেয়া এসব ছবি আমার উল্লিখিত বন্ধু (শাওন) ছাড়া আর কারও কাছে ছিল না। শাওন এবং তার বন্ধু-বান্ধব মিলে আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হরণ করে আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমার অনুমতি ব্যতিত গণমাধ্যম, অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতায় প্রকাশ করেছে। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)সাইবার ক্রাইম বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ মামলায় রাজধানীর বাড্ডার নিজ বাসা থেকে শাওনকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে শাওন দাবি করেন, বাড্ডার কাজী অফিসে তার সঙ্গে মাহির বিয়ে হয়। বিয়ের কাগজপত্রও ডিবির তদন্তকারী টিমের কাছে উপস্থাপন করেন শাওন।
এর আগে মাহি বিভিন্ন সময় ফেসবুকে শাওনের সঙ্গে অনেক ছবিই পোস্ট করেন। ওই সব নিয়ে কথা রটলে শাওনকে ‘শুধুই কাছের বন্ধু’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাহি।
জানা গেছে, শাওন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজে একই ক্লাসের শিক্ষার্থী ছিলেন শাওন ও মাহি। ওই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে স্কুল জীবন থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এদিকে, মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো শাওনের ঘণিষ্ঠজনরা জানিয়েছে, মাহির বিরুদ্ধে তিনি প্রতারণা মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শাওনের পক্ষে তার আইনজীবী বুধবার আদালতে এ মামলা দায়ের করতে পারেন।
বিডি-প্রতিদিন/০১ জুন, ২০১৬/মাহবুব