দুটো ঠোঁট অতি ধারালো। জ্বলজ্বলে চোখ। দেখে মনে হয় কিছুটা ভীতির সঞ্চার হলেও বাস্তবে পাখিটি নিরীহ। বলছি সবার পরিচিত পাখি প্যাঁচার কথা। অনেকে প্যাঁচাকে অশুভ পাখি বলে মনে করেন! দিনে বা রাতে বাড়ির আশপাশে প্যাঁচার ডাককে খারাপ কিছুর ইঙ্গিত বলে ধরা হয়! আবার দিনের বেলা প্যাঁচা দেখতে পারা শুভ বলে মনে করা হয়। প্রচলিত ধারণা আছে যে, সাদা প্যাঁচার দর্শন শুভ বার্তা বয়ে আনে! তবে প্যাঁচাকে অশুভ-শুভ বিবেচনার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
তথ্য বলছে, প্যাঁচার চোখে রড সেল নামে এক ধরনের বিশেষ কোষ থাকে। এ কোষ প্যাঁচাকে রাতের অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে। প্যাঁচা তার ঘাড় ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরাতে পারে। কবিতা, গল্প ও সাহিত্যে প্যাঁচার প্রসঙ্গ এসেছে বহুবার। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় শুভ ও সুন্দরের প্রতীক হিসেবে প্যাঁচা স্থান পেয়েছে।
প্যাঁচা শিকার করতে ভালোবাসে। অধিকাংশ প্যাঁচা গাছপালা থেকে পোকামাকড় ও ছোট পাখি শিকার করে খেয়ে থাকে। ব্যাঙ ও টিকটিকিও আছে প্যাঁচার খাদ্যতালিকায়। বিশ্বে শতাধিক প্রজাতির প্যাঁচা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশে প্রায় ১৫-১৭ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-হিমহিম, ভুতুম, হুতুম, গুহা, পিশাচ, রুপালি, এশীয় দাগি, কালো প্যাঁচা লক্ষ্মী, কুপোখ, পাহাড়ি প্যাঁচা, নিমখোর ইত্যাদি। এশীয় দাগি প্যাঁচা হবিগঞ্জের সাতছড়ি উদ্যানসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে দেখা যায়। এ প্যাঁচা বাংলাদেশের স্থানীয় পাখি। দাগি প্যাঁচা দিনের বেলা শিকার করে। বাংলাদেশে প্যাঁচাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিম প্যাঁচা। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো লক্ষ্মী প্যাঁচা।
প্রাণিবিজ্ঞানীদের তথ্য বলছে, প্যাঁচা অশুভ কোনো পাখি নয়। বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্যাঁচার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফসলি খেতের ইঁদুর খেয়ে প্যাঁচা কৃষকের উপকার করে। এজন্য প্যাঁচাকে বলা হয় কৃষকের বন্ধু। প্যাঁচা বিপন্ন প্রাণী না হলেও এর সংখ্যা দিনদিন কমছে। মানুষের অসচেতনতা, ঝোপঝাড় নষ্ট, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, কীটনাশক প্রয়োগ, খাবারের অভাব, বনভূমি কমে যাওয়া ও পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে অচিরেই প্যাঁচা মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় স্থান পাবে!
লেখক : জলবায়ু ও পরিবেশকর্মী