উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ আর করতে পারছে না। বর্তমানে দেশে ৫০ লাখ টন মাছ আহরণ হচ্ছে, যার ৬০ শতাংশই চাষের। চাষের মাছের বদৌলতে কই, পাবদাসহ হরেক মাছের স্বাদ নিতে পারছে দেশের মানুষ। তবে গবেষণায় চাষের মাছে বিভিন্ন ভারী ধাতুর উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে মৃগেল মাছে ক্রোমিয়াম মিলেছে নিরাপদ সীমার চেয়ে চার গুণ বেশি। অতিরিক্ত এ ক্রোমিয়াম কিডনি, যকৃৎসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে।
চাষের মাছে ভারী ধাতুর উপস্থিতির পরিমাণ নিয়ে বছরদুয়েক আগে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (এফআরআই) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন গবেষক। উত্তরের জেলা নাটোরের একটি বাণিজ্যিক খামারের রুই, মৃগেল, সিলভার কার্প, বাটা ও পুঁটি মাছের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এতে মৃগেল মাছে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি পাওয়ার তথ্য উঠে আসে। তবে মৃগেল ছাড়া আর কোনো মাছেই ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃগেল মাছ সাধারণত নিচের দিকে কাদার মধ্যে থাকে। আর মাছ চাষের নিয়ম হলো দুই-তিন বছর পরপর পুকুরের নিচের পানি পরিষ্কার করা। চাষিরা সেটা করেন না বলেই মৃগেল মাছে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
ক্রোমিয়াম ধাতুটি মানবদেহে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরিতে ক্রোমিয়ামের ভূমিকা অন্যতম। অতিরিক্ত ক্রোমিয়াম গ্রহণ করলে কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ত্বক জ্বালাপোড়া, ফুসকুড়ি, এমনকি ত্বকে প্রদাহও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে উচ্চমাত্রার ক্রোমিয়াম গ্রহণ শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা ও স্নায়ুবিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর আগে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জলাশয় থেকে সংগৃহীত মাছের নমুনা পরীক্ষায় আরও বেশি মাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। নদ-নদীর পানি দূষণের কারণে মাছের শরীরে এই ভারী ধাতুর উপস্থিতি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।