১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:১৭

আগর চাষে সমৃদ্ধির হাতছানি

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:

আগর চাষে সমৃদ্ধির হাতছানি

আগর গাছ

ময়মনসিংহে হালুয়াঘাটে চাষ হচ্ছে গন্ধবিলাসীদের প্রিয় দামি আগর গাছ। সমতল ভূমিতেও যে আগর চাষ করা যায় সেটির প্রমাণ রাখলেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা ইউনিয়নের টিকুরিয়া গ্রামের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আক্তার উদ্দিন। 

পাশাপাশি বাগানের এক কোণে স্থাপন করেছেন আগর ওয়েল এক্সট্রাকশান করার জন্য ছোট আকারে একটি প্লান্ট। তার সফলতার খবর শুনে বাগান পরিদর্শন করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদুর রহমান। আক্তার উদ্দিনের এমন উদ্যোগে আশে পাশের কৃষকরাও বাড়ির আঙ্গিনায় আর পতিত জমিতে রোপন করেছেন আগর গাছ। 

জানা যায়, ‘বাংলাদেশ আগর গবেষণা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে প্রায় ১২ বছর আগে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় ২ একর জায়গা জুড়ে ৪ শত আগর গাছের চারা পরীক্ষামূলক রোপন করেন তিনি। বর্তমানে বাগানে ৩ শতাধিক আগর গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের উচ্চতা ২৫ থেকে ৩০ ফুট। একটি পূর্ণাঙ্গ আগর গাছ হতে হলে ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পরিপূর্ণ একটি আগর গাছ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। আগর গাছের কাঠ থেকে মহা-মূল্যবান আগর ও আতর তৈরি হয়। এই গাছের বয়স সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে দশ বছর হলে এর মোটা ডাল আগর উৎপাদনের জন্য উপযোগী হয়। এ সময় গাছের বিভিন্ন স্থানে কালো ছোপ পড়ে। গাছের এ কালো অংশকেই বলা হয় আগর। 

আগর গাছের নির্যাস থেকেই তৈরি করা হয় আতর বা সুগন্ধি। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক দুই উপায়েই আগর থেকে সুগন্ধিজাতীয় আতর বা পারফিউম উৎপাদন করা হয়।
 
বাগান পরিদর্শনকালে মোঃ আক্তার উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগর চাষে সুফল পেতে সারা দেশের আগর চাষিদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশ আগর গবেষণা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন। তিনি এই সংগঠনের ট্রেজারার পদে দায়িত্বে রয়েছেন। এ সংগঠনের মহাপরিকল্পনা হিসেবে আগর আতর শিল্পের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বেকার নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। আগর থেকে অতি মূল্যবান সুগন্ধি তেল উৎপন্ন হয়। ১ লিটার আগর তেল বিদেশে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগর তেল ও কাঠের টুকরো দুবাই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে উচ্চ মূল্যে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। যা রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের এই অঞ্চলের মাটি আগর চাষে বেশ উপযোগী। সম্ভাবনাময় আগর চাষ করে বদলে যেতে পারে এ এলাকার মানুষের ভাগ্য। সম্প্রতি চীন দেশের একটি দল এ বাগান পরিদর্শন করেছেন পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশ থেকেও আসতে যোগাযোগ করছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আক্তার উদ্দিনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করতে চাইলে আগর বাগান তার বিকল্প হতে পারে। উপজেলার কৃষকদের মাঝে এটি ছড়িয়ে দিতে চাই। উপজেলার গাবরাখালি পাহাড়ে সরকারিভাবে আগর চাষের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছি। 

 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর