অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষে সফলতা

অসময়ে বাণিজ্যিকভাবে মাচায় তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ও এলাকায় সাড়া ফেলেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের তিন কৃষক। মাচায় এখন যে পরিমাণ তরমুজ রয়েছে তা বিক্রয় করে লাভের আশায় রয়েছেন। এছাড়াও অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক কৃষক এটি চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন। মাচায় তরমুজ দেখার জন্য উৎসুক মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছে তরমুজ ক্ষেতে।

ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ভাতারমাড়ি ফার্ম এলাকায় প্রায় ১৫ একর (৩০ বিঘা) জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিন বন্ধু। আনোয়ার হোসেন, মুক্তার আলী ও মুঞ্জুর আলী তিন বন্ধু ইউটিউবে অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ এর ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে এইবার বাণিজ্যিকভাবে এই তরমুজের আবাদ করে। প্রতিদিন প্রায় ৩৫/৪০ জন শ্রমিক তাদের এই তরমুজ ক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে তরমুজের যে সাইজ তাতে আরো ৫/৬ দিন পরেই তরমুজ কাঁটতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। 

আগে বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করতো না কৃষক। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন বর্ষাকালেও মাচায় তরমুজ চাষ হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে বীজ যেন পচে নষ্ট না হয় সেজন্য উন্নতমানের পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে চারা বেরিয়ে আসে। বর্তমানে মাচায় এখন অনেক তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজ ৩-৪ কেজি ওজনের। লাল ও হলুদ বর্ণের এ তরমুজগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু।

আর অসময়ে এমন সুন্দর তরমুজ দেখতে প্রতিদিন দুরদুরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ আসছে তরমুজ ক্ষেতে। এছাড়াও তরমুজের ফলন দেখে কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছে এবং তারাও এভাবে তরমুজ আবাদ করবে বলে জানিয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়িত তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ও তরমুজ ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা দর্শনার্থী সামাদ হোসেন বলেন, রংপুর বিভাগের মধ্যে এটাই সবথেকে বড় তরমুজ ক্ষেত। তরমুজগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। আর এই সময়ে মাচায় তরমুজ চাষ হয় এটা দেখার জন্যই শহর থেকে ছুটে আসা। প্রযুক্তি কৃষিকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা এখন সারাবছর তরমুজ খেতে পারবো।

ওই এলাকার কৃষক মনসুর আলী বলেন, প্রথমে যখন তিনবন্ধু এই তরমুজ আবাদ করে তখন আমার কাছে একটু অবাক হয়েছিলাম। তবে কিছুদিন পরে গাছ এর গঠন দেখে আমিও তাদের তাদের সহযোগীতায় তরমুজ চাষ করলাম। এখন যে ফলন এসেছে তাতে তরমুজ বিক্রয় করে লাভবান হবো আশা করছি। 

তরমুজ চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, যৌথভাবে আমরা তিন বন্ধু মিলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের জন্য এই তরমুজ আবাদ করি। প্রায় ৫০ দিনের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এখন আমরা তরমুজের ফলন ভালো দেখতে পাচ্ছি। ৬০ দিনের মাথায় তরমুজ কাটাঁ শুরু করবো। বাজারে দাম ভালো পেলে লাভবান হবো আশা করছি।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, মাচায় তরমুজ চাষে উৎপাদন খরচ খুব একটা বেশি না। এই তরমুজ অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। চাষিরা যাতে তরমুজ কোন অসুবিধা ছাড়াই বাজারজাত করতে পারে সেজন্য আমরা সকল ধরনের সহযোগীতা করবো। নতুন এই পদ্ধতি গোটা জেলায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে একদিকে তরমুজ সারাবছর পাওয়া যাবে অন্যদিকে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। 

বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির