শিরোনাম
৪ জুন, ২০২৩ ১৬:৩৬

প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে রংপুর অঞ্চলের চারপাশের পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে রংপুর অঞ্চলের চারপাশের পরিবেশ

ফাইল ছবি

মানুষের কারণেই রংপুর অঞ্চলের মাটি, পানি ও বায়ু দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিনিয়ত চারপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দূষণের কারণে প্রকৃতি ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতি ও মানুষকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করলেও দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। রংপুর অঞ্চলে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, নদী দূষণ ও বর্জ্য দূষণের  প্রভাব সবচেয়ে বেশি। 

জানাগেছে,রংপুর সিটি করপোরেশন ৩৩ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পুরনো ১৫টি ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ১৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়। বাকি ৩০ থেকে ৩৫ মেটিক টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়না। ফলে এসব বর্জ্য পচে-গলে  দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে মারাত্মক বায়ু দুষণ করছে। এসব বর্জ্য হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এর আবর্জনা, শিল্প কারখানা হতে উৎপাদিত আবর্জনা, রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, কসাইখানার রক্ত অন্যতম উৎস। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখায় বাতাস ও মাটি দূষিত হচ্ছে। 
অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্যরে ফলে আশেপাশে দুর্গন্ধের পাশাপাশি দেখা যায় মশা, মাছি ও পোকামাকড়ের মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলোর অবস্থা হয় আরও ভয়াবহ। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন আড়াই টনের ওপর ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর বর্জ্যের মাত্র দেড় টন সিটি করপোরেশন অপসরারণ করে থাকে। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে জনজীবনে।

প্লাস্টিক ও পলিথিনে দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কথা হলেও এর দূষণ রোধ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিনি রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় লাখ লাখ পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চললে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবসা বন্ধ করা যায়নি। পলিথিনে ব্যবহার বন্ধ করতে হলে পাট, কাগজ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতা ও ভোক্তাদের মাঝে সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। 

পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুমান মনিটরিং স্টেশন (সিএএমএস) তথ্য মতে বায়ুদূষণের উৎসগুলার মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি, শিল্পকারখানা, দহন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ঘন ঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে উঠিয়ে রাখা, যানবাহন থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের প্যার্টিকুলেট ম্যাটার, অ্যাশ, ধূলিকণা, সীসা, কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়তই দূষিত করছে বায়ু। চিকিৎসকদের মতে বার্য়দূষণের ফলে নাক মুখ জ্বালাপোড়া করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাবসহ নানান রোগের দেহে বাসা বাধতে পারে। 

নদীতে বর্ষা মৌসুমে সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করায় বর্জ্যসমূহে দ্রুত পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬টি নদ-নদীসহ জেলায় ৫০টির বেশি নদীতে পচা বর্জ্য থেকে তরল, দুর্গন্ধযুক্ত রস তৈরী হয়ে পানি বাহিত রোগ বাড়াচ্ছে। এছাড়া ইটভাটা, অবাধে সরকারি- বেসরকারি গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইন বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেই।

রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, সম্প্রতি বায়ু দূষণ, সবুজ শিল্পায়ন ও ইটভাটা নিয়ে পৃথক পৃথক সেমিনার হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করণের কাজ চলছে।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর