শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে চারজনের মৃত্যু

রেল লাইনে অবৈধ কাঁচাবাজার

দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে চারজনের মৃত্যু

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় কৃষি কর্মকর্তা ও দুই নারীসহ চারজনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন। এফডিসি সংলগ্ন কারওয়ান বাজার রেলগেটের পাশে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রেললাইনে অবৈধভাবে কাঁচাবাজার বসানোয় দুই ট্রেনের মাঝখানে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নিহতরা হলেন কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মালেক (৫০), মনোয়ারা বেগম (৪৫), নূরু মোহাম্মদ (৪০) এবং অজ্ঞাত তরুণী (২২)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার তদন্তে রেলের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মুজিবর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) কামরুল আহসান।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, একজন ঘটনাস্থলে ও ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন মারা যান। নিহতদের একজন ফার্মগেট খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অর্থকরী ফসল ইউনিটের পরিচালক আবদুল মালেক। ঢামেক হাসপাতাল মর্গে গিয়ে ছেলে খোরশেদ আলম তার লাশ শনাক্ত করেন। খোরশেদ জানান, তার বাবা প্রতিদিন সকালে পশ্চিম তেজতুরি বাজার থেকে জগিং করতে বের হয়ে কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করে বাসায় ফেরেন। গতকালও সেখানে মাছ কিনতে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। নিহত মনোয়ারা বেগম ঢাকার ইস্কাটনের বাসিন্দা। গ্রামের বাড়ি বরগুনায়। মনোয়ারার লাশ শনাক্ত করেন তার স্বামী পান বিক্রেতা কাউসার আহমেদ। তিনিও বাজার করতে গিয়ে নিহত হন। নুরু মোহাম্মদের লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী ফরিদা বেগম। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ তারাকান্দায়। রাত ১০টা পর্যন্ত নিহত তরুণীর পরিচয় জানা যায়নি। তার লাশ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, তার বয়স আনুমানিক ২০-২২ বছর। পরনে সালোয়ার, কামিজ ও গোলাপি রঙের বোরকা ছিল। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফল বিক্রেতা ফজলু খাঁ (৪২), তার ভাতিজা মো. রাকিব (২০) এবং শহীদ হোসেন (৪৫), সালমা বেগম (৪০) ও পারুল (৬৫)।  প্রত্যক্ষদর্শী রেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান আবু আহমেদ বলেন, ‘ক্রসিং থেকে পশ্চিম দিকে মাছ বাজারের পেছনে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যমুনা আন্তঃনগর ট্রেনটি কমলাপুরে যাচ্ছিল। একই সময়ে পাশের লাইন দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী আন্তঃনগর ট্রেনটি আসে। এ সময় রেললাইনের ওপর বসা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় অনেকে ট্রেনে কাটা পড়েন। অনেকে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন।’ রেলওয়ে থানার ওসি মজিদ বলেন, ‘জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা যমুনা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে কারওয়ান বাজার এলাকায় পৌঁছালে একটি রেললাইনের ওপর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা পাশের লাইনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছালে দুই ট্রেনের মধ্যে পড়েন তারা।
কারওয়ান বাজারে রেললাইনের ওপর প্রতিদিন মাছ নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ১৬ জন আহত হন।’
প্রত্যক্ষদর্শী আবু বকর জানান, সকালে তিনি মাছ বাজারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় একটি ট্রেন কমলাপুরের দিক থেকে অন্য ট্রেনটি ঢাকায় ঢুকছিল। দুই দিক থেকে ট্রেন আসায় মানুষ এলোমেলোভাবে দুই দিকেই ছোটাছুটি করতে থাকে। রেললাইন ছাড়া তাদের সড়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। এ অবস্থার মধ্যেই ট্রেনের ধাক্কায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনার মূল কারণ মাছের বাজার। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কারওয়ান বাজারের পাশের রেললাইনের ওপর বসে এ বাজার। রেললাইনের দুই পাশে রয়েছে ছোট ছোট দোকান। এ কারণে ট্রেন আসা-যাওয়ায় চরম ব্যাঘাত ঘটে। কারওয়ান বাজার রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন দুই শিফটে মোট আটজন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল সকালে দায়িত্ব পালন করছিলেন মতিউর রহমান, রুবেল হোসেন, আবু আহমেদ ও রবিউল ইসলাম। জানতে চাইলে গেটম্যান মতিউর বলেন, ‘দুটি ট্রেন একসঙ্গে আসা-যাওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার আগে পুরো রেললাইন জুড়ে ছিল মাছের বাজার। এ কারণে তাদের সড়ে যাওয়ার জায়গা ছিল না।’

সর্বশেষ খবর