শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়তে চায় বাংলাদেশ

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়তে চায় বাংলাদেশ

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর (মধ্যপ্রাচ্য) সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়তে চায় বাংলাদেশ। ইরাক ছাড়া পারস্য উপসাগর তীরবর্তী যে কটি মুসলিম দেশ রয়েছে সেগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, কাতার ও কুয়েত। এ দেশগুলো গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) নামে একটি কাস্টমস ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। জিসিসির সদস্য দেশগুলোর সঙ্গেই মূলত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে সরকার। এটি করার পেছনে যে উদ্দেশ্য রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি পোশাকের বাজার ধরা এবং আরব দেশগুলোর বড় বড় বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আরও দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে সরকারের। এর একটি হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। অন্যটি সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল আমদানি।
গত শতাব্দীর আশির দশকে বাংলাদেশের মোট জনশক্তির ৯০ শতাংশের বেশি রপ্তানি হতো এই উপসাগরীয় দেশগুলোয়। সাম্প্রতিক সময়ে এসব দেশে জনশক্তি রপ্তানির হার কমলেও এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় ওই অঞ্চলেই বেশি প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। সরকার মনে করছে, উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ করতে পারলে শর্তবিহীন শ্রম রপ্তানি সম্ভব হবে।
অন্যদিকে দেশের জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশগুলো থেকেই। এফটিএ করা সম্ভব হলে তখন শুল্কমুক্ত সুবিধায় পেট্রলিয়াম আমদানি সম্ভব হবে। এর ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি ব্যয় কমবে, তেমনি ভোক্তারাও কম মূল্যে জ্বালানি পাবে। জ্বালানি ব্যয় হ্রাসের সুফল আসবে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। কমবে উৎপাদন খরচ। দেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতাও বাড়বে। এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই মূলত উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজও করছে। জিসিসির সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়টি পর্যালোচনা করে এরই মধ্যে ট্যারিফ কমিশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে জিসিসির সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়টি। উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ করা হলে বাংলাদেশ কী ধরনের সুবিধা পেতে পারে, এ বিষয়ে জ্বালানি মূল্য এবং জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনাকেই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে- জিসিসির দেশগুলোয় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের চাহিদা মেটাতে এসব পোশাক বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ করার পর শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলে নিশ্চিতভাবেই দেশের রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে আরব দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণের ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) একটি বড় অংশ আসে এ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে।
আরব দেশগুলোর আর্থিক সক্ষমতাও অনেক বেশি। যদি ওই দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন পর্যটন, অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ বস্ত্র, ওষুধ, চামড়া, প্লাস্টিক ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণে গুরুত্ব দেওয়া যায় তবে বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) পরিচালক মোস্তফা আবিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জিসিসির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি আমাদের জন্য অনেক দিক থেকেই সম্ভাবনাময়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এফটিএ’র মাধ্যমে এ সুবিধাগুলোর কতটা অর্জন করা সম্ভব। সরকার এগুলোই এখন খতিয়ে দেখছে।’

সর্বশেষ খবর